ইলিশের পেটে ডিম আসেনি
তবুও পেছানো হচ্ছে না নিষেধাজ্ঞার সময়
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় মাছ ইলিশের পেটে ডিম আসেনি এমনটি দাবি করা হলেও মাছ ধরার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন বহাল থাকছে। এই সময়সীমা পিছিয়ে দেয়ার ব্যাপারে জেলে ও ব্যবসায়ীরা সোচ্ছার হলেও তা আমলে নেয়া হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষ বলছে, গবেষণার মাধ্যমে পাওয়া তথ্য বিবেচনায় নিয়েই এ সময়সীমা নির্ধারণ হয়েছে। এ কারণে পেছানোর সুযোগ নেই। উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকার কথা আগেই জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর সভাপতিত্বে ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধের সময় নির্ধারণ এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ২০২৩ বাস্তবায়নের জন্য ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রধান প্রজনন মৌসুমে ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত মোট ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ সময় দেশব্যাপী ইলিশ পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত এবং বিনিময়ও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান বাস্তবায়ন করা হবে। ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ থাকাকালে ইলিশ আহরণে বিরত থাকা জেলেদের ভিজিএফের আওতায় খাদ্য সহায়তা দেবে সরকার। সরকারের ঘোষণার পরই ২২ দিনের এ নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছেন জেলে ও ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, কোনো ইলিশের পেটে এখন পর্যন্ত ডিম আসেনি। ১২ অক্টোবর নিষেধাজ্ঞা শুরু হলে ইলিশ মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ ভেস্তে যাবে। তারা ১২ অক্টোবরের পরিবর্তে ৩০ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছেন। তাছাড়া সরকারের ইলিশ রপ্তানি কার্যক্রম চলবে আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত। নিষেধাজ্ঞা থাকলে মাছ রপ্তানিতেও সমস্যা হবে। সারা দেশের ইলিশ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের কল্যাণে মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানানো হলেও গবেষণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অন্য বছর যেভাবে ইলিশ ধরা বন্ধের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়, এবারো সেভাবেই যে গবেষণা পদ্ধতি আছে, সে নিয়মের মধ্যেই নির্ধারণ হয়েছে। বিগত ৩৪ বছর যেহেতু ঠিকভাবেই এটি হয়েছে, এবারেরটাও সঠিক হবে। মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশকে ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে ২২ দিন সারা দেশে ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অনেক গবেষণার মাধ্যমে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই নির্ধারণ করা হয়েছে। যেহেতু জেলেরা এর বড় একটি অংশ, তাই তাদের মতামতও গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে তাদের সময়সীমা পেছানোর যে দাবি সেটি এ বছর বিবেচনার সুযোগ না থাকলেও আগামী বছর হয়তো সার্বিক পরিস্থিতির আলোকে বিবেচনা করা যেতে পারে। বাংলাদেশে ২০০৩-২০০৪ সাল থেকেই জাটকা রক্ষার কর্মসূচি শুরু করা হয়। তখন থেকেই ধীরে ধীরে ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে। ২০০৮ সাল থেকে প্রথম আশ্বিন মাসে পূর্ণিমার আগে ও পরে মিলিয়ে ১১ দিন মা-ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। তখন থেকেই এর সুফল দেখতে শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। তখন তারা গবেষণায় দেখতে পান, শুধু পূর্ণিমায় নয়, এ সময়ের অমাবস্যাতেও ইলিশ ডিম ছাড়ে। ইলিশ গবেষকরা বলছেন, ইলিশ ধরায় যে নিষেধাজ্ঞার সময়, সেটি পেছানোর দাবি তারা করতেই পারেন। সেক্ষেত্রে যুক্তি থাকতে হবে। যুক্তি কিন্তু মৌখিক যুক্তি নয়, গবেষণাভিত্তিক ও তথ্যভিত্তিক যুক্তি আসতে হবে। তারা বলছেন, ১৪ অক্টোবর অমাবস্যা। সে কারণেই আগে ১২ ও ১৩ তারিখ হাতে রাখতে হয়েছে। আর ২৯ তারিখে পূর্ণিমা। সেটি হিসাব করেই মোট ২২ দিন করা হয়েছে। তিন বছর পর পর এটি নিয়ে নতুন করে চিন্তা করতে হয়।