নামেই কৃষক সমাবেশ!

* মারামারিতেও জড়িয়েছে দুইপক্ষ

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবদেক

কৃষক সমাবেশের নামে দলীয় নেতাকর্মীদের জড়ো করে আলোচনা সভা করেছে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগ। গতকাল দুপুরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেটে এ সমাবেশের আয়োজন করে সংগঠনটি। এ সমাবেশে বিভিন্ন জেলা থেকে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তবে ঢাকা মহানগর ও আশপাশের জেলার উপস্থিতি ছিল বেশি। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এছাড়াও দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও বক্তব্য রাখেন। বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বিএনপি-জামায়াতের তুলোধুনা করেন। প্রতিষ্ঠার ৫১ বছরে এসে রাজধানীর বুকে প্রথম কৃষকদের নিয়ে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সার ও বিদ্যুতের দাবিতে শহীদ হওয়া কৃষকদের স্মরণে এ সমাবেশ করে সংগঠনটি। সরেজমিন দেখা গেছে, সমাবেশে খেতে-খামারে কাজ করা প্রান্তিক কৃষকদের স্থলে দলীয় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু-কিশোরদেরও কৃষক হিসেবে সমাবেশস্থলে আনা হয়েছে। প্রচণ্ড গরম আর রোদের তাপের কারণে সমাবেশে আগত নেতাকর্মীরা হাজিরা দিয়েই কেটে পড়েছেন। সমাবেশে আগতদের জন্য রাস্তার একপাশে কার্পেট ও তেরপাল বিছানো থাকলেও সেখানে বসেননি তারা। হাজিরা দিয়েই ব্যানার গুটিয়ে চলে গেছেন কেউ-কেউ। কিছু নেতাকর্মী পাশের রাস্তায় ভবনের ছায়ার নিচে আশ্রয় নেন। সমাবেশের নির্ধারিত স্থান ছেড়ে যেখানে ছায়া আছে, সেই জায়গা খুঁজে বসে পড়েন নেতাকর্মীরা। সাংবাদিকদের জন্য নির্ধারিত স্থানও দখলে তারা। বেলা ৩টা পর্যন্ত দেখা যায়, সমাবেশস্থলের বেশিরভাগ জায়গাই ফাঁকা। সমাবেশস্থল থেকে চলে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাড্ডা থেকে আগত হুলুদ টি-শার্ট পরা আলম বলেন, রোদের তাপ ও গরমের কারণে অন্য দিকে যাচ্ছি, ছায়ায় গিয়ে বসব। সমাবেশে এসে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন কৃষক লীগের দুই পক্ষ। বেলা আড়াইটার দিকে বাড্ডা থানা কৃষক লীগ ও আদাবর থানা কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে মারামারি করে। একপর্যায়ে দুইপক্ষ বাঁশ নিয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালায়। এ সময় সমাবেশস্থলে হুড়োহুড়ি শুরু হলে কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ্র এসে উভয় পক্ষকে শান্ত করেন। বাড্ডা থানা কৃষক লীগের সভাপতি রকি শিকদার ও সাধারণ সম্পাদক জনি মালুমের অনুসারীদের সঙ্গে আদাবর থানা কৃষক লীগের নেতাকর্মীরা এই মারামারিতে জড়ান বলে জানা গেছে। সারা দেশ থেকে প্রায় তিন লাখ কৃষক, কৃষাণী ও নেতাকর্মী জমায়েত করা পরিকল্পনা করেছিল সংগঠনটি। কৃষক-কৃষানিদের ঢাকায় জড়ো করে নির্বাচনের আগে দেশবাসীকে বড় ধরনের বার্তা দিতে চেয়েছিল কৃষক লীগ। এজন্য ৭১টি প্রস্তুতি সভাও করেছিল সংগঠনটি। এত প্রচেষ্টার পরও প্রকৃত কৃষকের উপস্থিতি ঘটাতে পারেনি সংগঠনটি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কৃষক লীগের এই সমাবেশে দাওয়াত দিয়েছিল সংগঠনটি। প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির উদ্দেশ্যে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কাজ করতে বঙ্গবন্ধুর নিদের্শে কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠা হয়। প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু কৃষকনেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে কৃষক লীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ব্যারিস্টার বাদল রশিদকে সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়। এর পর থেকে সংগঠনটি আওয়ামী লীগের হয়ে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখে চলছে। ২০১৯ সালে ৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক লীগের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান কৃষিবিদ সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক হন অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি এমপি।