‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’

চলচ্চিত্রের পোস্টার উদ্বোধন করলেন ড. হাছান মাহমুদ

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বঙ্গবন্ধু বায়োপিক ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ আগামী ১৩ অক্টোবর শুভ মুক্তি ঘোষণা এবং ট্রেলার ও পোস্টার উদ্বোধন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল বলরুমে এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতার শেষাংশে চলচ্চিত্রটির মুক্তির তারিখ ঘোষণা লগ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা এতো খুশি যে, চার বছরের পথ পরিক্রমায় আজকে আমরা ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ সিনেমাটি মুক্তি দিতে যাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ ১৩ই অক্টোবর এই ছবি সমগ্র বাংলাদেশে মুক্তি পেতে যাচ্ছে।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, প্রধান তথ্য কমিশনার ড. আবদুল মালেক, চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, বায়োপিক লাইন ডিরেক্টর সতীশ শর্মা অনুষ্ঠানে তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন ও শিল্পীদের নিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে পোস্টার উন্মোচনে অংশ নেন। চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বিদেশ থেকে এ উপলক্ষ্যে পরিচালক শ্যাম বেনেগাল এবং বঙ্গবন্ধুর চরিত্রাভিনেতা আরিফিন শুভর পাঠানো ভিডিও বার্তা ও সিনেমাটির ট্রেলার দর্শকদের ছুঁয়ে যায়।

তথ্যমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘এই ছবি শুধুমাত্র একটি সিনেমা নয়, এটি বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক। ‘মুজিব-দ্য মেকিং অব আ নেশন’, ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ ছবিতে বাংলাদেশের ইতিহাস, অভ্যূদ্বয়ের ইতিহাস আছে কারণ এই বাংলাদেশ জাতিরাষ্ট্র গঠিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে।’

হাছান বলেন, ‘মুজিব- একটি জাতির রূপকার’ চলচ্চিত্রটি জাতির জন্য একটি দলিল। এটি শুধু সিনেমা নয়, এই ছবিটি জাতির জন্য ইতিহাসের একটি দলিল। বঙ্গবন্ধু কীভাবে একটি জাতির রূপকার হলেন, সেটিই এই ছবিতে চিত্রায়িত হয়েছে।

সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে বহু নেতা স্বাধীনতার জন্য লড়াই সংগ্রাম করেছে কিন্তু স্বাধীনতা আসেনি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বাঙালি নেতা যার হাত ধরে স্বাধীনতা এসেছে। যিনি হ্যামিলনের বংশীবাদকের মতো মানুষকে এমনভাবে উদ্দীপ্ত করেছিলেন যে, মানুষ জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে হাজারে হাজারে নয়, লাখে লাখে মানুষ যুদ্ধে গেছে, দেশমাতৃকার তরে জীবন দিয়েছে, লাল সূর্যখচিত সবুজ পতাকা ছিনিয়ে এনেছে, তিনি শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু মুজিব, জাতির পিতা মুজিব সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘জাতির জন্য তার যে সংগ্রাম, তার যে ত্যাগ, তার যে দৃঢ়তা, ফাঁসির মুখোমুখি দাঁড়িয়েও তিনি কীভাবে অবিচল ছিলেন, সেগুলো এই ছবিতে উঠে এসেছে। সবচেয়ে বড় কথা যেটি সেটি হচ্ছে, ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কথা আমরা জানি, কিন্তু সেই ঘটনা কোনো জায়গায় কখনো চিত্রায়িত হয়নি, শুধু এই ছবিতে চিত্রায়িত হয়েছে এবং সেই ঘটনা দিয়েই এই ছবির সমাপ্তি ঘটেছে।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, এই ছবিটি আমি তিন চারবার দেখেছি এবং এই ছবি প্রথম জনসম্মুখে প্রদর্শিত হয় টরেন্টো ফিল্ম ফ্যাস্টিভ্যালে। সেখানে বাঙালির বাইরেও বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা উপস্থিত ছিলেন। ২ ঘণ্টা ৫৮ মিনিট অর্থাৎ ৩ ঘণ্টার এ ছবি চলাকালে একটি মানুষ ১ মিনিটের জন্যও নড়েনি এবং সেখানে কোনো বিরতি ছিলো না। হলে ৩ ঘণ্টার এ ছবিতে বিরতি থাকবে। এতেই প্রমাণিত হয় যে, এই ছবিটা কীভাবে দর্শক ধরে রাখবে, কীভাবে দর্শক টানবে। আমরা এই ছবি মুক্তি দিতে যাচ্ছি।

মন্ত্রী হাছান এ সময় বায়োপিক পরিচালক শ্যাম বেনেগাল এবং ছবি নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, ‘গওহর রিজভী সাহেব, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এই ছবির নির্মাণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, সাজ্জাদ জহিরসহ বাংলাদেশ থেকে আরো অনেকেই যুক্ত ছিলেন সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। শিল্পীরা প্রত্যেকেই অসাধারণ অভিনয় করেছে। যাকে যে চরিত্র দেওয়া হয়েছে ভালো অভিনয় করেছে।

তথ্যমন্ত্রী জানান, বেশ আগেই আমরা বায়োপিকের সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়েছিলাম। খুব সহসা এটি ভারতেও সেন্সর সার্টিফিকেট পেতে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা প্রথমে বাংলাদেশে মুক্তি দিতে চাই, কারণ বঙ্গবন্ধু এই বাংলাদেশের রূপকার, এই জাতির রূপকার, সেজন্য বাংলাদেশে মুক্তি দিতে চাই। পরে এটি ভারতবর্ষসহ পুরো পৃথিবীতে মুক্তি দেওয়া হবে। আমি সবাইকে এই ছবি হলে গিয়ে দেখার জন্য অনুরোধ জানাই। বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্রটিতে শতাধিক বাংলাদেশি শিল্পীদের মধ্যে এ দিন চঞ্চল চৌধুরী, খায়রুল আলম সবুজ, সংগীতা চৌধুরী, দিব্য জ্যোতি, সমু চৌধুরী, আশিউল ইসলাম, নাইরুজ সিফাত, আবুল কালাম আজাদ মিয়া, তুষার খান প্রমুখ অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ : তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি। মন্ত্রীর দপ্তরে তাদের বৈঠক শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ‘গত ৫২ বছরে বাংলাদেশের পথচলায় জাপান অর্থনৈতিকভাবে, অবকাঠামোগতভাবে আমাদের যেভাবে সহায়তা করেছে সে নিয়ে জাপানের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে যেনো আমরা আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারি সেজন্য তার সঙ্গে আলোচনা করেছি।

হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তিনি আগামী নির্বাচন নিয়ে প্রসঙ্গ টেনেছেন, অবশ্যই আমি তাকে জানিয়েছি আগামী নির্বাচন ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্ট হবে এবং ইলেকশন অনুষ্ঠান করা সেটি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। এবং ক্রমাগতভাবে নির্বাচন বর্জন করা যে, কখনো কারো জন্য সমীচীন নয়, সেটি আমি তাকে বলেছি। একইসঙ্গে দেশে যাতে কোনো রাজনৈতিক ভায়োলেন্স না হয় যেটি ২০১৩-১৪-১৫ সালে হয়েছে এবং সময়ে সময়ে বিএনপি করে এবং এখনো করার চেষ্টা করছে, উস্কানি দিচ্ছে এ বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আগামী নির্বাচন জনগণ এবং অনেক রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, সুন্দর সর্বমহলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে, সেটি আমি তার সঙ্গে আলোচনায় বলেছি।

এ সময় সাংবাদিকরা বিএনপির আন্দোলন নিয়ে প্রশ্ন করলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান বলেন, ‘দেশে কেউ সহিংসতা করুক সেটি কখনো বরদাশত করব না। যে কেউ রাজনৈতিকভাবে আন্দোলন করতে পারে, সরকারের পদত্যাগও চাইতে পারে। কিন্তু সেটি বলে দিনক্ষণ ঠিক করে ‘সরকারকে টেনে নামিয়ে ফেলবে’ সেটি বলা সমীচীন নয়, সেটি রাজনীতির ভাষা নয়। তিনি বলেন, যে ভাষায় বিএনপি কথা বলছে, সেই ভাষা ইঙ্গিত দেয় তারা দেশে একটি সহিংসতা, নাশকতা করতে চায়। সেটি করতে কাউকে দেওয়া হবে না। আমি আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে বলছি, আওয়ামী লীগ রাজপথের দল, রাজপথে কীভাবে কাকে মোকাবিলা করতে হয় সেটি আমরা জানি।