চাঁদপুরে মাদক বেচাকেনা

রক্ষক তিন কর্মকর্তাই এখন ভক্ষক

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুর জেলার সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকা ও আন্তঃজেলা যোগাযোগের জন্য সড়ক, রেল ও নৌপথের ব্যবস্থা রয়েছে। যে কারণে খুবই সহজেই মাদককারবারিরা এই জেলার রুটগুলো ব্যবহার করে। কিন্তু জেলার মাদক নিয়ন্ত্রণে যারা রক্ষক হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ বক্ষকের ভূমিকা পালন করায় কারবারিদের জন্য মাদক বেচাকেনার বড় ধরনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চাঁদপুর জেলার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনার সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত থাকার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে সম্প্রতি লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় তারা এখনো বহাল তবিয়তে। অভিযুক্তরা হলেন- চাঁদপুর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক পিয়ার হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক মো. সাইফুল ইসলাম ও পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) সেন্টু রঞ্জন নাথ। জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম গত ১৩ সেপ্টেম্বর তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হলেও এখন পর্যন্ত তারা চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ে বহাল তবিয়তে। এই অভিযোগের অনুলিপি একই সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঢাকায় মহাপরিচালক (ডিজি) ও পরিচালক (অপারেশন ও গোয়েন্দা)-এর কাছে পাঠানো হয়েছে।

অনুসন্ধ্যান ও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেন্টু, পিয়ার ও সাইফুল নামে তিন কর্মকর্তা গত ৫ বছরের বিভিন্ন সময়ে চাঁদপুরে যোগদান করার পর থেকে মাদককারবারিদের সঙ্গে গোপনে সখ্যতা গড়ে তোলেন। যার কারণে মাদকের বড় ধরনের কোনো মামলা উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে তারা মাদককারবারিদের কাছ থেকে মাসিক হিসেবে নগদ অর্থ গ্রহণ করতেন বলেও কয়েকজন কারবারি অভিযোগ করেছেন। শুধুই তাই নয়, এই তিনজন সংঘবদ্ধভাবে মাদক বিক্রি করার জন্য কারবাদিদের বাধ্য করতেন।

অধিদপ্তরের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এই অভিযুক্ত তিনজন চাঁদপুর শহরের একাধিক মাদক ব্যবসায়ির সঙ্গে জড়িত। অভিযানের আগে তারা মুঠোফোনে কারবারিদের জানিয়ে দিতেন। যে কারণে অভিযান করেও সফলতা পাওয়া যায়নি। যার ফলে কাজের ধীরগতি এবং তাদের কারণে অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে বলা হয়।

অভিযুক্ত তিন কর্মকর্তা সাইফুল, পিয়ার হোসেন ও সেন্টু রঞ্জন দেবনাথের বক্তব্য নেয়ার জন্য তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তারা ফোন রিসিভ করেননি। গতকাল অফিস চলাকালীন সময়ে তাদের দপ্তরে গিয়েও তাদের পাওয়া যায়নি। তাদের অপারেকশন কক্ষটি বন্ধ পাওয়া যায়। যে কারণে তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

চাঁদপর জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম বলেন, আমি এ জেলায় আগেও ছিলাম। চলতি বছরের জুন মাসে এসে আবার যোগদান করেছি। এখানকার প্রশাসন ও অন্যান্য লোকজন আমার পরিচিত হওয়ায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আমার কাছে বিভিন্নভাবে অভিযোগ আসতে থাকে। এগুলো আমার কাছে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে আমাকে লিখিত দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয় এবং গত ১৩ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠাই। অধিদপ্তর তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি দেখবেন। তবে অভিযোগ দেয়ার পরে তারা নিজেদের রক্ষায় সংঘবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এই বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক জাফর উল্যাহ কাজল বলেন, এইসব অভিযোগের বিষেয় আমাদের প্রধান দপ্তর কাজ করছে। আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারব না বলে লাইন কেটে দেন।