নওগাঁর পত্নীতলায় আমবাগানে গাছের নিচে বস্তায় আদা চাষ করে এলাকায় সাড়া ফেলেছেন চাষি রুহুল আমিন। ইতিপূর্বেও তিনি বস্তায় আদা চাষ করে সফলতা পেয়েছিলেন। বস্তায় আদা চাষ সহজ ও খরচ কম এবং লাভ দ্বিগুণের বেশি হওয়ায় এখন অনেকেই আদা চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। বস্তায় আদা চাষ ছড়িয়ে দিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। জেলায় প্রায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। যদি এসব আমবাগানে আদা চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়, তাহলে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিতে আরো গতি নিয়ে আসবে। আদা রাইজেম জাতীয় বীরূৎ মসলা এবং ভেষজজাতীয় উদ্ভিদ। আদিকাল থেকে মানুষ আদার বিভিন্ন ব্যবহার করে আসছে। মুখের রূচি বাড়াতে, বদহজম, সর্দি, কাশি আমাশয়, জন্ডিস ও পেটফাপায় আদার ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে আদার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে মসলায়। এর রাইজমের সুগন্ধি ও ঝাঁঝালো হওয়ায় খাবারের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, জেলায় আদার চাহিদা রয়েছে ২ হাজার ৫৪০ মেট্রিক টন। এর বিপরীতে এ বছর জেলায় ৩০ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে; যা থেকে প্রায় ৩৯০ মেট্রিক টন আদা উৎপাদন হবে। যার বাজার (পাইকারি ২২০ টাকা) মূল্য ৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। জেলায় প্রায় ৬০ হাজার বস্তায় আদা চাষ হয়েছে, যা থেকে ৪৮ মেট্রিক টন আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে কৃষকের আয় হয় হবে প্রায় দেড় কোটি টাকা। আমাদের দেশে আদার চাহিদার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে দেশে মোট পরিবারের সংখ্যা ২০২২ সাল অনুযায়ী প্রায় ৪ কোটি। একটি পরিবারে বছরে আদা লাগে প্রায় ৬ থেকে ৭ কেজি। এর পাশাপাশি হোটেল রেস্তোরাঁ চা দোকান বিবিধ ব্যবহার হিসাব মতে, আমাদের আদার চাহিদা প্রায় ৩ লাখ ৭১ হাজার মেট্রিক টন। জেলার পত্নীতলা উপজেলার পাটিআমলাই গ্রামের চাষি রুহুল আমিন। গত ৩ বছর আগে আমবাগানে গাছের নিচে ফাঁকা জায়গায় ৪০ বস্তা আদা চাষ করেছিলেন। ফলন ভালো পাওয়ায় পরের বছর আরো ৪ হাজার বস্তায় আদা চাষ করেন। চলতি বছর কৃষি অফিসের পরামর্শে ‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় আমবাগানের ৫০ শতাংশ জমিতে ১৪ হাজার বস্তায় বারী-১ জাতের আদা চাষ করেছেন। আদা চাষি রুহুল আমিন বলেন, প্রতি বস্তায় (বস্তা-মাটি-জৈবসার-বীজ) আদা চাষে খরচ পড়েছে ২০ টাকা। যেখানে মোট খরচ পড়েছে প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। প্রতি বস্তায় ৮০০ গ্রাম আদা উৎপাদন হিসেবে বর্তমানে (২২০ টাকা পাইকারি) যার বাজার মূল্য প্রায় ২৪ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। পাইকাররা বাড়ি থেকে আদা কিনতে অগ্রিম টাকা দিতে চাচ্ছেন। কিন্তু আমি এখন বিক্রি করতে চাই না। বাজারে আদার দাম ঊর্ধ্বগতি। আশা করছি দাম ভালো পাব। আদা চাষে উদ্বৃদ্ধ করতে কৃষি অফিস থেকে সার্বিক পরামর্শ পেয়ে উপকৃত হয়েছি। প্রতিবেশী আব্দুল হান্নান বলেন, প্রতিবেশীর দেখে বাড়ির সামনে উঠানে লাউয়ের মাচার নিচে ৬৪ বস্তায় আদা লাগিয়েছি। খরচ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা। যা থেকে প্রায় ১২ হাজার টাকার মতো আদা উৎপাদন হবে। নিজের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট বিক্রি করা হবে। পত্নীতলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, আদা চাষে এরই মধ্যে ২০০ জন কৃষক-কৃষাণিকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। সেইসাথে চারজন চাষিকে কৃষি বিভাগ থেকে ২০০ পিস জিও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। একটি পরিবারে বছরে ৭ থেকে ৮ কেজি আদার চাহিদা। প্রতিটি পরিবার যদি ২০ বস্তায় আদা লাগায় তাহলে তার বছরের চাহিদা পূরণ সম্ভব। এ উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। আমের মৌসুম ছাড়া বাকি সময় গাছের নিচের অংশ ফাঁকা পড়ে থাকে। আমবাগান যদি আদা চাষের আওতায় নিয়ে আসা যায়, তাহলে স্থানীয় চাহিদা পূরণ সম্ভব। তিনি বলেন, আদা আমদানি করতে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, তার ৩ শতাংশ যদি কৃষকের প্রশিক্ষণ ব্যবহার করা যায়, তাহলে দেশের আদার উৎপাদন ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়ানো সম্ভব। আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশ আদার চাহিদা পূরণ করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা সম্ভব বলে মনে করেন এ কৃষিবিদ।