বৃষ্টিতেই পদে পদে বিপদ

* ঢাকার দুই সিটির সড়কের বেহাল দশা * নষ্ট হচ্ছে গাড়ি, জনভোগান্তি

প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

পিচঢালাই উঠে গেছে স্থানে স্থানে, পরিণত হয়েছে খানাখন্দে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতেই সড়কে জমছে পানি। যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। মাঝেমধ্যে গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ি, পেছনে দেখা দিচ্ছে যানজট। খোদ ব্যস্ততম নগরী ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের অলিগলি থেকে শুরু করে মূল সড়কের চিত্র এটি। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাখালী, সাঁতরাস্তা, তেঁজগাও এলাকায় অলিগলি থেকে মূল সড়কের বেহাল দশা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমে খানাখন্দে পরিণত হয়েছে। একই দশা শাহবাগ থেকে কাঁটাবন সড়কটি। বাদ যায়নি হাতিরঝিলের সড়ক। গতকাল শুক্রবার গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিতে হাতিরঝিল সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে। এছাড়াও মগবাজার থেকে কাঁকরাইল যাওয়ার পথে রাস্তার মাঝে ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকায় বাঁশ দিয়ে রাখা হয়েছে। ম্যানহোলের ঢাকনা নিয়ে কেউ চিন্তাই করছে না। খোলা পড়ে আছে দিনের পর দিন। শঙ্কা নিয়ে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে, কখনো হেলেদুলে। মাঝেমধ্যে গর্তে আটকে যাচ্ছে গাড়ি, পেছনে দেখা দেয় যানজট। গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় সড়কে যানবাহন ছিল কিছুটা কম। এর মাঝে যেসব যানবাহন চলছে, তার অধিকাংশ যানবাহন শাহবাগ ও মগবাজার এসে গতি কমাতে হচ্ছে। গর্তে পড়ার ভয়ে কোনো কোনো যানবাহন চলছিল একেবারে সড়কের পাশ ঘেঁষে। মাঝেমধ্যেই দেখা দিচ্ছিল যানজট। তবে গত বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত একটানা বৃষ্টি হয়। এতে মিরপুর, শ্যামলী, আসাদগেট, নিউমাকের্ট, তেজগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। সিগন্যালে গাড়িগুলো দীর্ঘ সময় আটকে থাকতে দেখা যায়। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। শাহবাগ এলাকার বাসিন্দা মোমেনা খাতুন বলেন, ঢাকার বাসিন্দারা স্বস্তিতে নেই। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে। রাস্তায় যত্রযত্র খানাখন্দে বিপদে পড়তে হয়। বিশেষ করে শাহবাগ থেকে কাঁটাবনের উভয় পাশের রাস্তাটি বছরে পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি চলে। রাস্তাটি মেরামত করা হয় না। অথচ প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। প্রত্যেক বছর বর্ষায় সড়কে মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। গত দুই দিনের কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে চরম ভোগান্তি। তেঁজগাও এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, বৃষ্টিতে সড়কে পিচঢালাই উঠে গিয়ে যত্রতত্র খানাখন্দ হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে গর্ত ঠিকঠাক বোঝা যায় না। গর্তের কারণে কোনো যানবাহনই ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। প্রায় সব যানবাহন গতি কমেছে, এতে যানজট দীর্ঘ হয়েছে। সিএনজি চালক মো. জাহিদ হোসেন বলেন, তেঁজগাও হাতিরঝিল সড়কে পানিনিষ্কাশনে কারও নজর নেই। তাই বৃষ্টি হলেই পানি জমে একাকার হয়ে যায়। গর্ত ও বৃষ্টির পানির কারণে প্রায়ই গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। গন্তব্যে যেতে সময় বেশি লাগে। ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ যাত্রীরা। পরিবহন চালকরা বলেন, রাজধানীজুড়ে সড়কের বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। এতে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। গাড়ি চালাতেও সমস্যায় পড়তে হয়। বৃষ্টিতে গর্তে জমে থাকে পানি। ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে হয়। সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, বৃষ্টিতে সড়কের গর্তে পানি জমে থাকে, যানবাহন গেলে সেই পানি ছিটে লাগে শরীরে। অথচ সড়ক সংস্কারের নামে প্রতিবছর কোটি টাকা খরচ করা হয়। এই টাকা কোথায় যায়? ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা এর জন্য দায়ী। ফলে জনগণের দুর্ভোগ কমছে না। গত বৃহস্পতিবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে পোস্টে জানানো হয়েছে, কোনো এলাকায় বৃষ্টির পানি জমলে ১৬১০৬ নম্বরে ফোন করতে। পোস্টে বলা হয়, নগর ঘুমালেও আমরা জেগে আছি। জেগে আছি আপনার চলাচল নির্বিঘ্ন করতে। ডিএনসিসির ফেইসবুক পেজে দেখা যায়, গত বৃহস্পতিবার নগরের বিভিন্ন এলাকা জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করেছেন ডিএনসিসির কর্মীরা। ড্রেন, নালার মুখ থেকে পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য অপসারণ করছেন, যাতে পানি রাস্তা থেকে নেমে যেতে পারে। রাজধানীর উত্তরা কামারপাড়া এলাকার অধিকাংশ রাস্তা এখন চলাচলের অনুপযোগী। কামারপাড়া নতুন বাজার থেকে ইস্ট ওয়েস্ট হাসপাতালের সড়কের অবস্থাও এক কথায় করুণ। একই অবস্থা মুগদা ৫০০ শয্যার হাসপাতালের সামনে, বৃষ্টি হলেই হাঁটুপানি জমে যাচ্ছে। কয়েকটি স্থানে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় গর্ত। কিন্তু মেরামতে কর্তৃপক্ষের নজর নেই। এছাড়া টিটিপাড়া থেকে খিলগাঁওগামী সড়কের বেশিরভাগ অংশ ফেটে গেছে। কোথাও উঠে গেছে পিচ। সবুজ মিয়া নামে মুগদার বাসিন্দা বলেন, মুগদার ভেতরের প্রতিটি সড়ক থেকে অলিগলি চলাচলের অনুপযোগী। কোথাও ম্যানহোল খোলা, আবার কোথাও ম্যানহোল উঁচু-নিচু করে বসানো। এ ছাড়া ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত তো আছেই। এখানকার মূল সড়ক এবং ওয়াসা রোডের যে ভয়াবহ অবস্থা, তাতে রিকশা দিয়ে চলার সময় কোনো যাত্রী স্থির হয়ে বসে থাকতে পারেন না। অন্তঃসত্ত্বা নারী এ সড়ক দিয়ে রিকশায় গেলে ভয়ংকর সমস্যায় পড়বেন। সেগুনবাগিচায় মধ্যবর্তী একটি ছোট সড়কে ৯ মাস ধরে ড্রেনলাইন স্থাপনের কাজ চলছে। সম্প্রতি স্লাব স্থাপনের কাজ শেষ। কাটা স্থানে ফেলা হয়েছে খোয়া, কিন্তু পিচঢালাই হয়নি এখনো। মতিঝিল শাপলা চত্বর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন ঘেঁষে কমলাপুরগামী সড়কে বছরখানেক আগে পিচঢালাই হয়েছিল। কিন্তু অনেক স্থানেই এখন খানাখন্দে ভরা। মতিঝিলের সাদেক হোসেন খোকা অডিটোরিয়াম সংলগ্ন আশপাশের সড়কগুলোরও বেহাল দশা। মধুমতি সিনেমা হল-সংলগ্ন সড়কের অবস্থা তো ভয়াবহ। চলাচলের সময় মনে হয় উঁচু-নিচু ঢেউ সৃষ্টি হয়েছে। চরম দুর্ভোগ নিয়েই এসব সড়ক দিয়ে চলতে হচ্ছে নগরবাসীকে। গুড়ি বৃষ্টিতে সড়কে খানাখন্দে পানি জমলেও মুষুলধারে বৃষ্টিতে হাঁটুপানি। পানিতে দুর্গন্ধ এবং ময়লা ভাসতে দেখা যায়। এ নিয়ে সিটি করপোরেশনের তেমন মাথাব্যথা নেই, নেই কোনো কার্যকর উদ্যোগও।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, রাজধানীতে মাত্রাতিরিক্ত খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। এতে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে সড়কে পানি জমছে, যানবাহন চলাচলে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যার ফলে জনভোগান্তি অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। বিদ্যমান জনদুর্ভোগের চিত্র বলে দিচ্ছে, এটা নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা দুই সিটি করপোরেশন কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বোরহান উদ্দিন বলেন, বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানের সড়কে গর্ত তৈরি হয়েছে। সাময়িকভাবে এগুলো মেরামতের চেষ্টা করছি। এছাড়া সড়ক উন্নয়নে একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। আশা করি, প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আর সমস্যা থাকবে না।