ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সড়কের নির্মাণকাজ

চলায় আড়াই শতাধিক গাছ কাটলেন ইউপি সদস্য

চলায় আড়াই শতাধিক গাছ কাটলেন ইউপি সদস্য

পিরোজপুরের ইন্দুরকানীতে সড়কে নির্মাণকাজ চলায় বন বিভাগের দোহাই দিয়ে একটি সড়কের আড়াই শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে। তবে এ গাছগুলোর অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানের যোগসাজসে স্থানীয় ইউপি সদস্য জুবায়ের তালুকদার বিক্রি করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। টেন্ডার ছাড়াই বনবিভাগের কথা বলে কিছু গাছের পিস রেখে অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েকশ’ পিস গাছ গোপনে অন্যত্র সরিয়ে বিক্রি করার অভিযোগে দোষীদের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কেওড়ার মোড় থেকে খেজুরতলা বাজার পর্যন্ত এলজিইডির আওতায় প্রায় ১ কিলোমিটার নির্মাণাধীন সড়কের দুইপাশে প্রায় তিন শতাধিক সরকারি গাছ ছিল। কিন্তু ভেকু দিয়ে সড়কের খনন কাজ করার সময় অধিকাংশ গাছ উপড়ে পড়ে যায়। পরবর্তীতে বিষয়টি বন বিভাগকে জানালে, পিরোজপুর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নির্মল দত্ত সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. জোবায়ের হোসেন তালুকদারকে লিখিত ভাবে দায়িত্ব দেন। পরবর্তীতে ইউপি সদস্য জোবায়ের হোসেন মেহগনি, আকাশমনি, বেল শিশু, তুলা ও রেনট্রি গাছগুলো লোক দিয়ে কেটে ছোট ও মাঝারি আকারের খণ্ড খণ্ড ৮৯ পিস গাছ খেজুরতলা বাজারে ও কেওড়ার মোড়ে রাস্তার পাশে রাখে। তবে এলাকাবাসী জানায় এখানে কয়েকশ’ পিস গাছ ছিল। সেখান থেকে মাত্র ৮৯ পিস গাছ রেখে বাকি গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছে জুবায়ের মেম্বার। সামাজিক বনায়নের সদস্য সুরেশ চন্দ্র হালদার জানান, রাস্তার দুই পাশের প্রায় আড়াই শতাধিক বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ জোবায়ের মেম্বার ও তার সহযোগী রুবেল ও ইউনুস কেটে নিয়েছে। দেড় শতাধিক গাছের গোড়ার কাটা চিহ্ন রয়েছে এবং শতাধিক কাটা গাছের মূল মাটি দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। কাটা গাছগুলো থেকে ছোট কিছু গাছ রেখে বাকি বড় বড় মূল্যবান গাছগুলো বিভিন্ন সময় ট্রলার ভরে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। এর সঙ্গে গাছের ডালপালাগুলোও মণ হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের সদস্যদের না জানিয়ে এভাবে কেটে বিক্রি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম জানান, সামাজিক বনায়নের গাছ রোপণ, পরিচর্যা ও কর্তনের জন্য রয়েছে নির্ধারিত কমিটি। এ বনায়নের কোনো কাজ করতে হলে তা সংশ্লিষ্ট কমিটির মাধ্যমে করতে হয়। তবে এসব কিছুর তোয়াক্কা না করেই চেয়ারম্যান শাহীন হাওলাদারের নির্দেশে বন বিভাগের দোহাই দিয়ে ইউপি সদস্য জোবায়ের তালুকদার কেটে নিয়ে বিক্রি করেছে। অভিযুক্ত ইউপি সদস্য জোবায়ের হোসেন তালুকদার জানান, ওই সড়কটির নির্মাণকাজ চলায় বন বিভাগ আমাকে রাস্তার দুইপাশের উপড়ে পড়া গাছ কেটে রেখে দেয়ার জিম্মা দিয়েছে। তাই আমি গাছ কেটে কেওড়ার মোড় এবং খেজুরতলা বাজারে রেখে দিয়েছি। তবে রাস্তার আশপাশে অনেক বাড়িঘর রয়েছে। কেউ গোপনে কাটা গাছের গুড়ি সরিয়ে থাকলে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। এ বিষয়ে পত্তাশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা জেপির আহ্বায়ক মো. শাহীন হাওলাদার জানান, আমি সড়কের নির্মাণকাজ করাচ্ছি। সড়কের খনন কাজ করার সময় গাছগুলো উপড়ে পড়ে যাওয়ায় বনবিভাগ ইউপি সদস্য জোবায়েরের জিম্মায় দিয়েছে বলে শুনেছি। তবে এর বাইরে আমি কিছু জানি না।

কেউ রাস্তার পাশ থেকে কাটা গাছ সরিয়ে থাকলে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। পিরোজপুর বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা নির্মল কুমার দত্ত জানান, সড়কের দুই পাশে উপড়ে পড়া গাছগুলোকে কেটে একটি নির্দিষ্ট স্থানে জমা রাখার জন্য ইউপি সদস্য জোবায়ের হোসেন তালুকদারের জিম্মায় লিখিতভাবে দেয়া হয়েছে। তাকে কোনো গাছ বা তার অংশ বিক্রি করার অনুমতি দেয়া হয়নি। টেন্ডার ছাড়া সামাজিক বনায়নের কোনো গাছ কাটার কোনো সুযোগ নেই। তবে শুনেছি আমাদের না বলে এবং আমাদের অবর্তমানে কিছু গাছ বিক্রি করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ বেআইনি। আমি ব্যস্ত থাকার কারণে ঘটনা স্থলে যেতে পারিনি। তবে শিগগিরই ঘটনা স্থলে গিয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার কাছে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের দায়বদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ সামাজিক বনায়নের ২৫ শতাংশ শেয়ার। তাই তিনি কোনোভাবেই এর দায় এড়াতে পারেন না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত