ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা

যেসব রোগ মানুষের মৃত্যু ঘটায় তার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম একটি। আমাদের দেহের কোষগুলো যখন অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে তখন টিউমারের সৃষ্টি হতে পারে। কোনো কোনো টিউমার পরবর্তীতে ক্যান্সার কোষের জন্ম দেয়। কোষের ভেতর জিনগত পরিবর্তনের কারণে ক্যান্সার হয়ে থাকে। বাংলাদেশের নারীদের সাধারণত ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে। ৮০ শতাংশ স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে ৫০ বছরের বেশি বয়সে। তবে বর্তমানে ১৫-৪০ বছরের নারীরাও এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পুরুষদেরও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কীভাবে স্তন ক্যান্সার নির্ণীত হয়? স্তন ক্যান্সার নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পরীক্ষা প্রচলিত রয়েছে। এমন কিছু পরীক্ষা হলো-

স্তন পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি যে কেউ নিজেই করতে পারেন। স্তন ও বগলে লিম্ফ নোড-দুটোতেই কোনো চাকাভাব বা অস্বাভাবিকতা রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। এমআরআই স্ক্যান: এই পরীক্ষায় স্তনের ছবি তুলতে শক্তিশালী চুম্বক এবং রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। ম্যামোগ্রাম: এটি এক ধরনের এক্স-রে। স্ক্রিনিং পদ্ধতিতে স্তন পরীক্ষা করার প্রক্রিয়াকে ম্যামোগ্রাম বলে। বায়োপসি: এক্ষেত্রে সন্দেহজনক বা আক্রান্ত টিস্যুর একটি ছোট অংশ অস্ত্রোপচার করা হয় এবং পরীক্ষাগারে এ স্যাম্পল পাঠানো হয়। স্তন ক্যান্সার নির্ণয়, কোষের ধরন এবং ক্যান্সারের গ্রেড নির্ধারণ করা যায় বায়োপসির মাধ্যমে। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা কী? ধরন, পর্যায়, টিউমারের আকার এবং রোগীর সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়। স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসার সাধারণ পদ্ধতি সার্জারি। অস্ত্রোপচার: স্তনের টিউমার অপসারণের জন্য অনেক ধরনের অস্ত্রোপচার করা যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো-

লাম্পেকটমি: এই প্রক্রিয়ায় টিউমার এবং আশপাশের কিছু টিস্যু অপসারণ করা হয়। মাস্টেকটমি: এক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর পুরো স্তন অপসারণ করা হয়। ডাবল মাস্টেকটমি মানে উভয় স্তন অপসারণ বোঝানো হয়। সেন্টিনেল নোড বায়োপসি: এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে স্তনের টিউমার থেকে কয়েকটি লিম্ফ নোড কেটে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ক্যান্সারের রিপোর্ট যদি নেগেটিভ হয়, লিম্ফ নোড অপসারণের জন্য কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না। কনট্রালট্রাল প্রোফিল্যাকটিক মাস্টেকটমি: একটি স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়লেও কিছুক্ষেত্রে অন্য স্তনও সরিয়ে নেওয়া হয়। এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে কনট্রালট্রাল প্রোফিল্যাকটিক মাস্টেকটমি বলা হয়। অ্যাক্সিলারি লিম্ফ নোড অপারেশন: সেন্টিনেল নোড বায়োপসির সময় যদি অপসারিত লিম্ফ নোডগুলোতে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসক অতিরিক্ত লিম্ফ নোডগুলো অপসারণ করতে পারেন। বিকিরণ থেরাপি: এ পদ্ধতিতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ রশ্মির মাধ্যমে ক্যান্সারের কোষ ধ্বংস করা হয়। এই চিকিৎসার জন্য সাধারণত একটি বড় মেশিন ব্যবহার করা হয়। ব্র্যাকিথেরাপি: শরীরের ভেতর থেকে ক্যান্সার অপসারণের জন্য এই চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে টিউমারের স্থানের কাছে শরীরের ভেতর অল্পসময়ের জন্য তেজস্ক্রিয় বীজ বসানো হয় যার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা হয়। কেমোথেরাপি: এ পদ্ধতিতে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ ব্যবহার করা হয়। প্রায়ই ক্যান্সার অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচারের সঙ্গে এ চিকিৎসা ব্যবহৃত হয়। ক্যান্সার কোষগুলোকে সঙ্কুচিত করার জন্য অস্ত্রোপচারের আগে কেমোথেরাপি করা যেতে পারে। এতে পরবর্তীতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সেগুলো অপসারণ করা সহজ হয়।

হরমোন থেরাপি: হরমোন থেরাপি বা হরমোন-ব্লকিং থেরাপি হরমোনের প্রতি সংবেদনশীল স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন (নারীদের সেক্স হরমোন) উৎপাদন বা ক্যান্সার কোষের হরমোন রিসেপ্টরগুলোতে কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ব্লক করতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা ক্যান্সারের বৃদ্ধি ধীর বা বন্ধ করতে সাহায্য করে।

টারগেটেড থেরাপি: এ পদ্ধতির চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ দেওয়া হয়। এই ওষুধগুলো ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সাহায্য করে। ইমিউনোথেরাপি: বিশেষ ক্ষেত্রে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হয়। ইমিউনোথেরাপি হলো এক ধরনের জৈবিক থেরাপি, এমন এক ধরনের চিকিৎসা যাতে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য জীবন্ত প্রাণী থেকে প্রস্তুত পদার্থ ব্যবহার করা হয়। একেক জনের ক্ষেত্রে রোগের অবস্থান ও ব্যপ্তি অনুযায়ী একেক চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে হতাশ বা ভয় না পেয়ে দ্রুত একজন দক্ষ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত