চট্টগ্রামে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের দাম ফের ঊর্ধ্বমুখী। প্রতি কেজি ৬০ টাকার পেঁয়াজ বিভিন্ন স্থানে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতাদের অভিযোগ আমদানি কমসহ নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে দাম। এরই মধ্যে পেঁয়াজের দাম খুচরায় প্রতি কেজি ৮০ টাকা ছাড়িয়েছে। রসুন, আদা, জিরা সব ধরনের মসলার দামই চড়া। বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির জন্য নানা অজুহাত দাঁড় করালেও ক্রেতারা বলছেন অন্যকথা। তাদের বিশ্বাস, বরাবরের মতো সিন্ডিকেটের কারসাজিই চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পণ্যের দামে উত্তাপ ছড়াচ্ছে। বাড়তি দামের কারণে সাধারণ ক্রেতারা ক্ষুব্ধ। অনেকে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য কিনতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন। ক্রেতা-ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মৌসুমের এই সময় দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ কমে যায়। এজন্য পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের ভাষায় দেশি পেঁয়াজের মজুত কম। আড়তে সরবরাহ মজুত কম থাকায় এখন আমদানির পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে। এরই মধ্যে পেঁয়াজ আমদানিতে বুকিং রেট বেড়ে গেছে। একই সাথে বিভিন্ন ধরনের মসলার আমদানিতেও বুকিং রেট বেড়েছে। এতে পেঁয়াজ, রসুন, আদার দাম এক লাফে বেড়ে গেছে।
সরেজমিন নগরীর বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আমদানি ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আবার কোথাও খুচরা পর্যায়ে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম নেয়া হচ্ছে প্রতি কেজিতে ৮০ টাকার বেশি। আর পাকিস্তানি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। আমদানি রসুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। আদা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ১৬০ থেকে ১৯০ টাকায়। আর গত সপ্তাহে বেড়ে যাওয়া মসুর ডালের দাম এ সপ্তাহে রয়েছে স্থিতিতে। বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৪৫ টাকা পর্যন্ত। চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। দেশি সুগার মিলের প্যাকেটজাত প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, যা লাল চিনি হিসেবে পরিচিত।
ক্রেতারা বরাবরের মতো অভিযোগ করেছেন সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণেই পেঁয়াজসহ নানা ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কর্মকর্তারাও একই অভিযোগ করেছেন। তারা বলছেন, কম দামে আমদানি করা পেঁয়াজ অনেকটা দ্বিগুন দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে ক্রেতারা দিশাহারা। বিষয়টির তথ্য তুলে ধরে তারা বলেন, ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার বেশি দামে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সংকটের অজুহাত তুলে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯০ টাকার বেশি। প্রতি কেজি ভালোমানের ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা। খুচরায় তা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। তবে কিছু নিম্নমানের পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে। তাও প্রতি কেজি ৬০ টাকার কম নয়।
গেল ১৪ সেপ্টেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, দেশি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি ডিমের মূল্য ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, বোতলজাত সয়াবিন ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে যথাক্রমে ১৬৯ ও ১৪৯ টাকা এবং পামওয়েলের দাম ৪ টাকা কমিয়ে ১২৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সেই বেঁধে দেয়া দাম নিচ্ছেন না বিক্রেতারা। বরং প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের আইটেমের দাম নিচ্ছে বেশি।
অনেক ব্যবসায়ী দাবি করেছেন, ভারতে পেঁয়াজ রপ্তানিতে শুল্ক আরোপের ফলে চট্টগ্রামের বাজার চড়া। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির চেষ্টা করছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে মিশর, তুরস্ক, মিয়ানমার ও চীন। কিন্তু প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমদানি করতে সুবিধা বেশি। সড়কপথে পেঁয়াজ আনা যায়। ফলে সময়ও লাগে কম আর অন্যান্য খরচও কম হয়। এছাড়া চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের পুরোনো সিন্ডিকেট রয়েছে। প্রশাসন কঠোর না হলে এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা সরকার নির্ধারিত পাইকারি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন না। ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত দামে পেঁয়াজ কিনছেন। এ কারণে তারাও বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করছেন।
গতকাল সকালে নগরীর বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতা লোকমান হোসেন জানান, পেঁয়াজ নিয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট ভাঙা জরুরি। এই সিন্ডিকেটের কারণেই বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে। তার মতে বাজারে একেক দিন একেক ধরনের দাম হাঁকেন বিক্রেতারা। এতে ক্রেতারা বাড়তি দামতো দিচ্ছেন। পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম নিয়ে গোলক ধাঁধায় পড়ছেন। ক্রেতাদের আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে।