মুক্তিযুদ্ধে অবদান
ভারতের দুই চিকিৎসককে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মাননা প্রদান
প্রকাশ : ০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ভারতীয় দুই চিকিৎসককে বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গীভূত প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট’।
সম্মাননাপ্রাপ্ত দুই চিকিৎসক হলেন ডা. দুলাল বসু ও ডা. শিবাজী বসু। তারা দুইজনই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা।
গত শুক্রবার রাজধানীর ধানমন্ডির বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর কার্যালয়ে ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে ‘১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের ভূমিকা : অংশগ্রহণের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে স্বনামধন্য এই চিকিৎসকদ্বয়কে বিশেষ সম্মাননা ক্রেস্ট ও উত্তরীয় প্রদান করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের স্মৃতি রোমন্থন করে তারা বলেন, ‘কোনো সম্মাননা পাওয়ার জন্য একাত্তরে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করিনি। তারপরও বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট যে সম্মাননা প্রদান করেছে সেটি আমাদের ভালো লেগেছে। জীবনের এটি অনন্য ও শ্রেষ্ঠ সময় বলে মনে হচ্ছে। এমন চমৎকার ও মহৎ উদ্যোগ গ্রহণ করায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে শুভেচ্ছা জানাই এবং তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
পশ্চিমবঙ্গের এই প্রখ্যাত চিকিৎসকদ্বয় আরো বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ বিজয় মানে আমাদেরও বিজয়। কাঁটাতারের বেড়া থাকা সত্ত্বেও দুই বাংলার মাঝে অপূর্ব মিল রয়েছে। ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যগত যে মিল রয়েছে সেগুলোও অনন্য।’
গত ১০ বছরে বাংলাদেশে যে অভাবনীয় সাফল্য ও উন্নয়ন ঘটেছে, সেটির ভূয়সী প্রশংসা করে তারা বলেন, এসবই মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন ছিল। ওই সময়ে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা উল্লেখ করে পশ্চিমবঙ্গের দুই চিকিৎসক বলেন, যুদ্ধের মধ্যে বাঙালিরা আহত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গুটিবসন্ত রোগে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা যায়। যুদ্ধের মতো বিধ্বংসী ঘটনা সেই সময় না ঘটলে হয়তো গুটিবসন্তে আক্রান্ত মানুষগুলোর জীবন রক্ষা পেত। তারপরও আমরা জীবনের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি সবাইকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে গড়ে তুলতে।’
কলকাতার প্রাক্তন শেরিফ ডা. দুলাল বসুর জন্ম সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ভারতের শরণার্থী শিবিরে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধার চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। আর প্রখ্যাত ইউরোলজিস্ট ডা. শিবাজী বসুর জন্ম ফরিদপুরে। তিনি যশোরের নাবারণে ফিল্ড হাসাপাতালে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মনিরুজ্জামান শাহীন। এছাড়া অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য প্রদান করেন সংসদ সদস্য আরমা দত্ত, বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর আবদুস সালাম হাওলাদার, রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন, বাংলা ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের আহ্বায়ক সৌম্যব্রত দাস প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক পরীক্ষিত। বিশেষ করে দুই বাংলার যে ঐতিহ্যগত মিল রয়েছে, তা অপূর্ব ও অমলিন। আজকে ভারতের দুইজন বিশিষ্ট চিকিৎসককে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সম্মানিত করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দবোধ করছি। এটি নিশ্চয়ই আমাদের জন্য গৌরবেও বটে। কাঁটাতারের বেড়াও আমাদের মধ্যে দেয়াল তৈরি করতে পারেনি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই দুই চিকিৎসক যে ভূমিকা পালন করেছেন তা অতুলনীয়। আমরা সব সময় তাদের অবদানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করব।’