ইসরাইল-ফিলিস্তিন লড়াই অব্যাহত

নিহতের সংখ্যা বেড়ে হাজার, আহত ৪২০০

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় —- মৃত্যের সংখ্যা ৬৬৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ইসরাইলি হামলায়—— জন ফিলিস্তিনি এবং হামাসের হামলায় ————- ইসরাইলি নিহত হয়েছে। ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে তীব্র লড়াই অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গাজার সীমান্তবর্তী বিভিন্ন শহর থেকে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে ইসরাইল।

ইসরাইলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিইল হাগারি বলেছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় আমাদের লক্ষ্য হলো গাজার আশপাশে বসবাসকারী সব নাগরিক সরিয়ে নেওয়া। এদিকে সাধারণ মানুষকে চলমান লড়াইয়ে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাসের সামরিক শাখা।

ইসরাইলি বাহিনী ও হামাস যোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই অব্যাহত থাকায়, আল-কাসেম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবেদা একটি নতুন বিবৃতি প্রকাশ করেছেন। এতে তিনি জনগণকে এই যুদ্ধে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন।

এর আগে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ৫ হাজারের বেশি রকেট হামলা চালিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এতেই থেমে থাকেনি হামাস যোদ্ধারা। সীমানা প্রাচীর ভেঙে ইসরাইলের অভ্যন্তরেও ঢুকে পড়ে তারা।

এর পরই শুরু হয় দুই পক্ষের লড়াই। ইসরাইলের মধ্যে বেশ কিছু এলাকায় লড়াই চলছে। এছাড়া গাজার বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সংঘাত গড়িয়েছে দ্বিতীয় দিনে। বেশ কিছু স্থানে হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে চলছে সশস্ত্র লড়াই। টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে গাজা সীমান্তের কাছে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর ম্যাগেনে দুই পক্ষের মধ্যে তীব্র বন্দুকযুদ্ধ চলছে। হিব্রু ভাষার গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই সংঘাতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ভারী ট্যাঙ্ক ব্যবহার করছে। মূলত ইসরাইলের ভেতর থেকে হামাস যোদ্ধাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে ইসরাইলি বাহিনী। পাশাপাশি গাজার বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করেও হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল।

হামাসের হামলায় ইসরাইলে মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছুঁয়েছে বলে জানিছে ইসরাইলি মিডিয়া। আর গাজায় ইসরাইলিদের পাল্টা হামলায় প্রাণ হারিছেন প্রায় ২৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে ব্যাপক দরপতন হয়েছে। কারণ, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিনিয়োকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। আরো ফিলিস্তিনি যোদ্ধা দক্ষিণ ইসরাইলের মাগেন শহরে প্রবেশ করেছে বলে জানিছে ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো। ওই অঞ্চলে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ট্যাংক ব্যবহার করে বড় যুদ্ধ চালাচ্ছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। পাল্টা বন্দুক হামলা চালিই যাচ্ছে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধারা।

এদিকে, গতকাল অধিকৃত সেদরত শহরের ইসরাইলি বসতি লক্ষ্য করে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে হামাস। নিজেদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে এ তথ্য জানায় হামাসের সশস্ত্র শাখা, আল-কাসাম ব্রিগেড। তবে এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাকে হতাহতের তথ্য জানা যায়নি।

অন্যদিকে, লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহও গতকাল সকালে উত্তর ফিলিস্তিনে হামলা চালিছে। এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানায়, আমরা সেবা ফার্মস অঞ্চলে রকেট ও গোলা হামলা চালিছি। সেবা ফার্মস দক্ষিণ লেবাননের ইসরাইল অধিকৃত একটি অঞ্চল, যা ইসরাইলের উত্তরে অবস্থিত।

হিজবুল্লাহ ইসরাইলি সেনাদের তিনটি ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে বলে জানা গেছে। অধিকৃত ভূমি উদ্ধার ও ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করতেই এ হামলা চালানো হয়েছে বলে জানিয়েছে লেবাননের সশস্ত্র সংগঠনটি।

হিজবুল্লাহর হামলার তাৎক্ষণিক জবাব দিয়েছে ইসরাইল। তারাও হিজবুল্লাহর ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলি একটি ড্রোন সেবা ফার্মসে হিজবুল্লাহর একটি ঘাঁটিতে আঘাত করেছে। তবে এসব হামলায় তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো খবর জানা যায়নি।

গত শনিবার ভোরে গাজা থেকে ইসরাইলে কইক হাজার রকেট ছোড়ে হামাস। ২০ মিনিটে ৫ হাজার রকেট ছোড়া হয়েছে বলে জানায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটি। পাশাপাশি, ইসরাইলের ভেতরে অন্তত ১ হাজার সশস্ত্র যোদ্ধারা ঢুকে পড়ে বলে খবর পাওয়া যায়। ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের উপপ্রধান সালেহ আল-আরোওরি বলেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এখন হামাস সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে। হামাসের হামলা শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তার দেশের জনগণের উদ্দেশে বলেছেন- ইসরাইলের জনগণ, আমরা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। আমরা জিতব। শত্রুদের এজন্য এমন মূল্য দিতে হবে, যে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই নেই।

এদিকে ইসরাইলি অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে লেবাননের ইরান-সমর্থিত শিয়াপন্থি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ গতকাল লেবাননের সামরিক-রাজনৈতিক সংগঠন হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে এই হামলার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।

আর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা পাল্টা হিসেবে কামান দিয়ে দক্ষিণ লেবাননে গোলা ছুড়েছে। এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ইহুদিবাদী শত্রু ইসরাইল অধিকৃত লেবাননের শেবা খামারের তিনটি অবস্থানে হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ। এই হামলায় বিপুলসংখ্যক আর্টিলারি শেল ও গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। এতে তাৎক্ষণিকভাবে হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ইসরাইল-ফিলিস্তিন পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় পক্ষে-বিপক্ষে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা-সংগঠন। আরব লীগ গাজায় সামরিক অভিযান দ্রুত বন্ধের দাবি করেছে। আরব লীগের প্রধান দুই পক্ষের সশস্ত্র লড়াইয়ের অবসান চেয়েছেন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি ব্রাজিল জানিয়েছে, সহিংসতা বন্ধে তারা পরিষদের দ্রুত সভা আহ্বান করবে। ইসরাইলের সাধারণ নাগরিকের ওপর ব্যাপকহারে রকেট হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বেলজিয়াম।

ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাসের সন্ত্রাসী হামলায় আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে নিন্দা জানাই। এ ধরনের ঘৃণ্য হামলার বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করার অধিকার ইসরাইলের আছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ‘ইসরাইলের ওপর হামাসের এই সন্ত্রাসী হামলার’ নিন্দা জানায়। জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, তার দেশ হামাসের হামলার নিন্দা জানায় এবং ইসরাইলের পক্ষে আছে। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, হামাসের এ হামলা ইসরাইলের দখলদারির বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের আস্থা বাড়াবে। আর সৌদি আরব বলেছে, তারা ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে এই সংঘাতের দ্রুত সমাপ্তি চায়। এই ঘটনা তারা পর্যবেক্ষণ করছে।

গত ৭৫ বছরে এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি দখলদার ইসরাইলকে। ১৫ বছর আগে হামাস গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিলেও এমন হামলা এবারই প্রথম। গত শনিবার সকালে হামাসের শত শত যোদ্ধা এভাবে ইসরাইলে ঢুকে পড়বে, তা ইসরাইলিদের কল্পনাতেও ছিল না। এমনকি, হামাসের সদস্যরা চেকপোস্টে থাকা ইসরাইলি সেনাদের যেভাবে গাজায় নিজেদের নিয়ন্ত্রিত স্থানে ধরে নিয়ে গেছেন, সেটিও অত্যন্ত বিষ্ময়কর।