প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের পোপা মাছে লাখপতি হিসেবে পরিচিত বংশ প্রক্রিয়ায় জেলে পরিবারের সন্তান আবদুল গণির জালে আবারও ১০টি পোপা মাছ ধরা পড়েছে। যে ১০টি মাছের ওজন সাড়ে ১১৫ কেজি। আর পোপা গণি হিসেবে পরিচিত ট্রলার মালিক এবার এই ১০টি মাছের দাম হাঁকেন সাড়ে ২০ লাখ টাকা।
গতকাল ভোর ৩টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা আবদুল গণির মালিকানাধীন ‘এফবি গণি’ ফিশিং ট্রলারের জালে এ ১০টি মাছ ধরা পড়ার ঘটনা ঘটেছে।
পরে সকাল ৮টার দিকে ট্রলারটি সেন্টমার্টিনের জেটি ঘাটে এসে পৌঁছালে মাছগুলো দেখতে ভিড় জমায় স্থানীয় উৎসুক জনতা ও পর্যটকরা। ট্রলার থেকে মাঝি-মাল্লারা পোপা মাছগুলো টেকনাফের ফিশারি ঘাটে নিয়ে আসেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় মাছগুলো ‘কালা পোপা’ নামে পরিচিত।
অর্থনৈতিক গুরুত্বের এ প্রজাতির মাছ ধরা পড়ার খবর পেয়েছেন জানিয়ে টেকনাফ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই মাছের বৈজ্ঞানিক নাম মিকটেরোপারকা বোনাসি (গুপঃবৎড়ঢ়বৎপধ নড়হধপর)। এই মাছের বায়ুথলি দিয়ে বিশেষ ধরনের সার্জিক্যাল সুতা তৈরি করা যায় বলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই মাছের চাহিদা আছে। পোপা মাছের বায়ুথলি বেশ মূল্যবান বলে এই মাছের দাম অনেক বেশি।’
ট্রলারের মালিক আবদুল গণি জানান, ভোর রাতে কোরাল জালে ধরা পড়েছে ১০টি ১১৫ কেজি ৫০০ গ্রাম ওজনের ‘কালা পোপা’। এর মধ্যে একটির ওজন সাড়ে ১২ কেজি থেকে ২০ কেজি। মাছ ১০টির দাম চাইছি সাড়ে ২০ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত মাছগুলো সেন্টমার্টিনে দাম উঠেছে সাড়ে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। ভালো দামে বিক্রির আশায় মাছ ফ্রিজিং করে কক্সবাজার শহরে নিয়ে যাচ্ছি।’
ট্রলারের মাঝি ওসমান জানান, রোববার সকালে সাত মাঝি-মাল্লাসহ ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশে রওনা হয়। রাতে সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণে সাগরে জাল ফেলেন তারা। ভোররাতে জেলেরা জাল টেনে উঠাতে গিয়ে দেখেন কোরাল জালে ১০টি বড় বড় কালা পোপা মাছ আটকা পড়েছে। এই দামি মাছ দুটি পেয়ে জেলেরা খুব খুশি হয়েছে।
সেন্টমার্টিনের প্যানেল চেয়ারম্যান আক্তার কামাল বলেন, সেন্টমার্টিনের ট্রলার মালিক আবদুল গনি খুব ভাগ্যবান মানুষ। প্রতিবছর তার ট্রলারের জালে খুবই দামি কয়েকটি করে এই পোপা মাছগুলো পেয়ে আসছেন। চলতি মৌসুমে এবারও তার জালে ১০টি পোপা মাছ ধরা পড়েছে।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের মরহুম সোলতান আহমদের ছেলে আবদুল গনি। পিতাও একজন জেলে ছিলেন। সমুদ্রের জোয়ার-ভাটা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুখস্ত রেখে জীবন সংগ্রামে বেড়ে উঠা আবদুল গণিও একজন জেলে। তার ছিল নিজস্ব একটি ট্রলার। ওই ট্রলারে অন্যান্য জেলেদের সঙ্গে নিয়ে সাগরে মাছ ধরে উপার্জিত অর্থ নিয়ে চলে চারজনের সংসার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে রয়েছে স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে।
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের মতো এই আবদুল গণিও এখন ক্রমাগত পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছেন। তিনি এখন গণমাধ্যমসহ দ্বীপবাসীর পাশাপাশি অনেকের কাছে ‘পোপা গণি’ হিসেবে পরিচয় পাচ্ছেন। আর এর নেপথ্যের কারণ হচ্ছে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত এ জেলে তার নিজস্ব ট্রলারের জালে ৫ বারে ১৫টি বড় পোপা মাছ ধরে হয়ে গেছেন লাখপতি। ঘুরে-ফিরে তার ট্রলারে একে-একে বড় আকারের পোপা মাছ ধরা পড়ায় তিনি নিজেকে ভাগ্যবানও মনে করেন।