সুসংবাদ প্রতিদিন
ড্রাগন চাষে শিক্ষার্থী রাজুর বাজিমাত
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
এক হাজার কংক্রিটের খুঁটিতে লাগানো হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ। এসব গাছে শোভা পাচ্ছে হাজারো হলুদ ও লাল রঙের ফল। ঘুরে ঘুরে পরম যত্নে এ ড্রাগন বাগানের পরিচর্যা করছেন স্নাতকপড়ুয়া শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান রাজু। পড়াশোনার ফাঁকে নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে তার এ পরিশ্রম। প্রথমবারেই ড্রাগন বাগানে প্রচুর ফল এসেছে তার। ২৪ বছর বয়স্ক মেহেদী হাসান রাজু যশোরের কেশবপুর উপজেলার ভোগতী গ্রামের আব্দুল লতিফের ছোট ছেলে। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের (এমএম কলেজ) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি। পরিবারের সহায়তায় ২০২২ সালের জানুয়ারিতে যশোর-চুকনগর সড়কের পাশে উপজেলার আলতাপোল তেইশ মাইল এলাকায় ১০০ শতক (এক একর) জমিতে গড়ে তোলেন ড্রাগন বাগান। নির্দিষ্ট দূরত্বে স্থাপন করা ১ হাজার কংক্রিটের খুঁটির সঙ্গে টায়ার ও রড ব্যবহার করে তার চার পাশ দিয়ে লাগিয়েছেন প্রায় ৪ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ। ২০২২ সালের জুন মাসে প্রাথমিকভাবে কিছু ফল পেলেও এবার বাণিজ্যিকভাবে তিনি ড্রাগন বিক্রি শুরু করছেন। এপ্রিল মাস থেকে এ পর্যন্ত কোনো কোনো খুঁটিতে লাগানো গাছ থেকে ৩০ কেজি ফলও পেয়েছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ১২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করেছেন। গত সোমবার বিক্রি করার জন্য বাগান থেকে ১ হাজার কেজি ড্রাগন ফল তোলা হয়েছে। কেশবপুরের অধিকাংশ ফলের দোকানে রাজুর বাগানের ড্রাগন বিক্রি হয়। এছাড়া এসব ফল পৌঁছে যাচ্ছে যশোর, চুকনগর, খুলনা, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। চলতি মৌসুমে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রির আশা রয়েছে রাজুর। নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি তিনি সৃষ্টি করেছেন পাঁচজনের কর্মসংস্থান। মেহেদী হাসান রাজু বলেন, কোনো ধরনের ক্ষতিকারক উপাদান দিয়ে বাগানের ড্রাগন ফল পাকানো হয় না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মেই ফল পাকলে গাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। সড়কের পাশে বাগানটি হওয়ায় বিভিন্ন মানুষ দেখতে আসেন। বাগানের পাশে কোনো দরিদ্র ও অসহায় মানুষ এলে তাদের বিনা মূল্যে ফল খাওয়ান তিনি। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজু বলেন, পড়াশোনা শেষে চাকরির পেছনে যেন ছুটতে না হয়, এজন্য আগেভাগেই নিজেকে কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলছেন তিনি। একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি বাগানের পরিসর বৃদ্ধি করে সৃষ্টি করতে চান আরো কর্মসংস্থান। রাজুর বাগানে নিয়মিত পাঁচজন শ্রমিক কাজ করেন। তাদের প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়। বাগানে কাজ করার সময় আলতাপোল গ্রামের মোনতাজ সরদার (৬২) বলেন, ভোরবেলায় বাগানে এসে ড্রাগন ফুলের পরাগায়ন ঘটাতে সাহায্য ও বাগান পরিচর্যা করা, ফল পাড়াসহ সেগুলো বাজারজাত করার কাজ করেন। শ্রমিক আব্দুর রশিদ (৫৪) বলেন, প্রতিদিন ৩০০ টাকা মজুরিতে ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত এ বাগানে কাজ করেন তিনি। এই বাগানের ফলের ভেতর থাকলে তার মনটাও আনন্দে থাকে। পরিবার নিয়ে তিনি ভালোই রয়েছেন। ড্রাগন ফলের এ বাগানটি দেখতে এসেছিলেন কেশবপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসাইন। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ে পুষ্টিগুণসম্পন্ন ড্রাগন ফল চাষ করে কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী রাজু সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অন্যের জমি হারি (লিজ) নিয়ে তার নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা দেখে খুবই ভালো লেগেছে। রাজু নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি তার বাগানে যেসব শ্রমিক কাজ করছেন, তাদের পরিবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যদি বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন বাগান তৈরিতে মন দেয়, তাহলে তারাও লাভবান হবে, দেশও উপকৃত হবে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৮ হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফলের আবাদ করা হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনাথ বন্ধু দাস বলেন, মেহেদী হাসান রাজুর ড্রাগন বাগানটি বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শন করে এখানে ড্রাগন চাষকে এগিয়ে নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়। শুরুর দিকে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হলে কৃষি সেক্টর আরো এগিয়ে যাবে।