ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সুসংবাদ প্রতিদিন

কুঁচিয়া বিক্রি করে স্বাবলম্বী

কুঁচিয়া বিক্রি করে স্বাবলম্বী

গাঢ় বাদামি রঙের নিরীহ মাছটির ত্বক মসৃণ, পিচ্ছিল ও আঁশবিহীন। লম্বায় ৬০ থেকে ৭০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। অনেকে সাপ মনে করে ভয়ও পায়। তবে এটি একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু মাছ, রয়েছে ঔষধি গুণও। অনেকে রোগ নিরাময়ের জন্য কুঁচিয়া খেয়ে থাকে। প্রাকৃতিকভাবে হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল, পুকুর-ঘের, ধানক্ষেতের আইলসহ জলজ ঝোপঝাড়যুক্ত এলাকায় সহজেই পাওয়া যায়। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে নিরীহ কুঁচিয়া মাছটি বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছে ৭০ পরিবার। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার খাল-বিল, ডোবা, ধানিজমিসহ বিভিন্ন স্থানে এক ধরনের চাঁই ব্যবহার করে ধরা হচ্ছে কুঁচিয়া। বিশেষ কায়দায় ধরা এসব কুঁচিয়া যাচ্ছে জাপান, চীনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। প্রতি মাসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা আয় করে তারা। কুঁচিয়া ধরার পদ্ধতি দেখে ও লাভজনক পেশা হওয়ায় দিন দিন অনেকেই এ পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন। কুঁচিয়া ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া ও আনুর আলী জানান, তাদের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ থানার চন্দ্রা এলাকা হলেও দীর্ঘদিন রূপগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করে কুঁচিয়া বিক্রি করে আসছেন। এছাড়া কিশোরগঞ্জের জাকির, হাসেন, রমজান, মাজু, উহাদ আলী, কাশেম, সিলেটের দুলাল, বাবুল, ওমর, দ্বীন ইসলাম, আশরাফুল ইসলাম, মাঝু মিয়া, আঙ্গুর মিয়াসহ ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা এলাকার ৭০ পরিবার জড়িয়ে পড়েছে এ পেশায়। তারা জানান, এ ৭০ পরিবারের প্রতিটি পরিবারে ১০০ থেকে ১৫০টি চাঁই রয়েছে। কেঁচো গেঁথে এসব চাঁই খাল-বিল, ডোবা, ধানিজমিসহ বিভিন্ন স্থানে পাতা হয়। হাঁটুপানিতেও চাঁই পাতা হয়ে থাকে। প্রতিদিন গড়ে প্রতিজন প্রায় ৫ থেকে ৭ কেজি কুঁচিয়া ধরতে পারেন। ভুলতা, ভায়েলা, পাড়াগাঁও, মিয়াবাড়ী, হাটাব, আমলাব, কালী, বাড়ৈপাড়, কর্ণগোপ, পাঁচাইখা, শান্তিনগর, গোলাকান্দাইলসহ আশপাশের কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নিয়ে কুঁচিয়া ধরছেন। প্রতিদিন বেপারিরা এসব কুঁচিয়া কেজি দরে কিনে নিয়ে যান। প্রতি কেজি কুঁচিয়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ওই হিসাবে প্রতি পরিবার প্রতিদিন দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছে, মাসে আয় ৪৫ থেকে ৬০ হাজার টাকা। কুঁচিয়া ব্যবসায়ীরা আরো জানান, গোলাকান্দাইল নতুন বাজার, সোনারগাঁর বইদ্ধার বাজার ও রাজধানীর উত্তরা হাউজ বিল্ডিং কোনাবাড়ী এলাকায় কুঁচিয়ার আড়ত রয়েছে। সপ্তাহে বুধবার ও শনিবার ওই আড়তগুলোয় কুঁচিয়া বেচাকেনা হয়। ভায়েলা এলাকার জমি ব্যবসায়ী সোলাইমান মিয়া বলেন, প্রতিদিন দুপুরের পর কুঁচিয়া শিকারিরা চাঁই পেতে যান, আবার পরের দিন সকালে চাঁই উঠিয়ে কুঁচিয়া সংগ্রহ করেন। তবে বাণিজ্যিকভাবে কুঁচিয়া চাষ করলে অনেক লাভবান হওয়া যাবে। রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাসনিয়া তাসমিম বলেন, কুঁচিয়া দেশ-বিদেশে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেহেতু কুঁচিয়া চাষ ও বিপণন একটি লাভজনক পেশা, সেহেতু কুঁচিয়া চাষে বাণিজ্যিকভাবে প্রকল্প গ্রহণে সরকারের চিন্তাভাবনা আছে এবং মৎস্য অধিদপ্তর এ বিষয়ে কাজ করছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত