হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের স্মারকলিপি
সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আশঙ্কা গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি : সিইসি
* নির্বাচনি সংঘাতে মামলা হয় বিচার হয় না : রানা দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘বাংলাদেশে অনেক সময় নির্বাচন কেন্দ্র করে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক সংঘাত ও সহিংসতা হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আশঙ্কার বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি।’ গতকাল নির্বাচন ভবনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আশঙ্কা করে সিইসিকে দেওয়া স্মারকলিপি প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এ স্মারকলিপি দেন। সিইসি বলেন, ‘এখনো ওনারা আশঙ্কা করেন আগামীতেও এ ধরনের সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সহিংসতা হতে পারে। আমাদের কাছে আবেদন রেখেছেন আমরা যেন বিষয়টি বিবেচনায় নিই এবং আমাদের দিক থেকে যা করণীয় আছে, তা যেন করি। আমরা বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি। আমরা এটাও বলেছি যে, বিষয়টি আসলে দেখবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে যখন নির্বাচনের সঙ্গে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট হবে, সেটুকু পর্যন্ত আমাদের সংশ্লিষ্টতা এসে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা চিঠি দিয়ে, পত্র দিয়ে সরকারকে, সরকারের ডিসি, এসপিদের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যারা যারা এর সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্ত তাদের আমরা অবহিত করব, দেশে নির্বাচন কেন্দ্র করে যেন কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাত বা সহিংসতা না হয়।’ সতর্ক করা নিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা কঠোরভাবে তাদের সতর্ক করে দেব, সাম্প্রদায়িক সংঘাত কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়। এটা কখনো সভ্য আচরণ হতে পারে না। এটা অমানবিক একটা বিষয়। আমরা এই ধরনের অমানবিকতাকে কখনোই প্রশ্রয় দিই না। আমরা এই ব্যাপারে তাদেরও অনুরোধ করেছি যে, সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আপনারা আপনাদের শঙ্কার কথা ব্যক্ত করে রাখেন। নির্বাচনের ১৫ দিন পর পর্যন্ত আমাদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর থাকে। আমরা সেদিকে নজর রাখব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচনোত্তর হোক, নির্বাচনোত্তর না হোক; দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, সংঘাত যাতে না হয়, এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব তাদের। যদি এটা না হয় এর দায়-দায়িত্ব তারাই বহন করবে। এদিকে নির্বাচন ভবনে স্মারকলিপি প্রদান করার পর বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেছেন, অতীতে নির্বাচনি সংঘাত বা সাম্প্রদায়িক হামলার মামলা নেওয়া হতো, তদন্ত হতো। কিন্তু এখন মামলা নেয় কিন্তু বিচার হয় না। সরকারি দলের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিটও হয় না।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, আপনারা লক্ষ্য করবেন কুমিল্লার বাহার তিনি দুর্গাপূজা সামনে রেখে বললেন, এটা নাকি মদভক্তি পূজা। তিনি এটাও বলেছেন, মদ যদি দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পূজা পড়ে যাবে। এর আগে মুন্সীগঞ্জের মেয়র আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। তিনি এমপি মৃণাল দাশকে গালি দিলেন মালাউন হিসেবে। অতএব, আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই সাম্প্রদায়িক অপশক্তি সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে কম-বেশি ক্রিয়াশীল। সহিংসতার আলামত পাচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারাদেশে ইতোমধ্যে বিগ্রহ ভাঙচুর, মন্দিরে হামলার মধ্যদিয়েই আমরা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শুরু হতে দেখেছি। যেহেতু নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের হাতেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ হবে সেহেতু আপনাদেরকেই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিশনকে আইনের যা কিছু আছে, সেগুলো আক্ষরিক অর্থে ব্যবহার করার জন্য বলেছি। উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ নিয়ে রানা দাশ গুপ্ত বলেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের উৎকণ্ঠা-উদ্বেগ আছে- এমন শঙ্কা প্রকাশ করছি। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, নির্বাচনে আমরা সবাই মিলে ভোট দিতে চাই। কিন্তু নির্বাচনের যে পরিবেশ, সে হিসেবে আমরা সহিংসতামূলক নির্বাচন চাই না। আমরা নির্বাচনি প্রচারণায় যে সাম্প্রদায়িকতা ব্যবহার করা হয়, আমরা তার অবসান চাই। যে সাম্প্রদায়িক গুজব ছাড়নো হয় এবং ছড়িয়ে নির্বিঘ্নে ভোটের পরিবেশ নষ্ট করা হয়। আমরা বলেছি, এই অপচেষ্টা আমাদের কারো জন্য শুভকর কিছু বয়ে আনবে না। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই। অতীতে নির্বাচনের আগে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি কিন্তু এই আশ্বাস সবসময়ই আমাদের আশ্বাসের মধ্যেই থাকতে হয়েছে। আমরা কখনো আশ্বস্ত হতে পারিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন। অতীতের যে অভিজ্ঞতা, সেটা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়।