সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বিগত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যানে এটা প্রকাশ্য সত্য, বাংলাদেশে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈষম্য শুধু সম্পদ কিংবা অর্থের নয়, ভোগেরও বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভোগের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হতে পারেনি।
গতকাল রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা : শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সামাজিক সুরক্ষা’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম আলোচনায় সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। মিডিয়া ব্রিফিং সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জলবায়ুবিষয়ক তিনটি ডিজিটাল ফিচার উপস্থাপন করা হয়। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, পরামর্শ দেওয়ার ক্ষেত্রে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের প্রাক-নির্বাচনের সময় পরিস্থিতির কারণে উৎসাহবোধ করিনি। কিন্তু এবার নির্বাচনের প্রাক্কালে গত দেড় দশকের উন্নয়নের অভিজ্ঞতা আমরা মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছি। এটা করতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে, জাতীয় উন্নয়নের যে আখ্যান বা বয়ান আমরা সর্বদা শুনি, সেটা কতখানি সত্যি ও মজবুত সেটা বোঝা প্রয়োজন। সেটা বুঝতে গিয়ে বাংলাদেশের সাতটি জায়গায় বিপন্ন ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর প্রায় ৫০০ জন মানুষের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তিনি বলেন, বিগত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা ও পরিসংখ্যানে এটা প্রকাশ্য সত্য, বাংলাদেশে বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈষম্য শুধু সম্পদ কিংবা অর্থের নয়, এখানে ভোগ বৈষম্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ভোগের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হতে পারেনি। এক প্রশ্নের জবাবে দেবপ্রিয় বলেন, বাংলাদেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা এগিয়েছি সন্দেহ নেই। যে মানুষগুলো বিপন্ন অবস্থায় আছে, তাদের কাছে সঠিকভাবে পৌঁছাতে পারিনি। উন্নয়নের মধ্যে ন্যায্যতা আনতে হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষের হিস্যাকে সামনে আনতে হবে। উন্নয়নের ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনাই হলো আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতাই পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোকে জায়গা দেয়। সবচেয়ে বড় ক্রিয়া ক্ষেত্র হলো নির্বাচন। নির্বাচনের অঙ্গীকারগুলো সামনে নিয়ে আসতে হবে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর উন্নয়নকে বার বার উপস্থাপন করতে হবে। মধ্যবিত্ত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত সমাজ দুর্বল হয়ে গেছে। ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে গেছে। মধ্যবিত্ত সমাজ ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য রয়েছে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক মান ও রাজনৈতিক মূল্যবোধের ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তের বড় ভূমিকা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ওই ভূমিকা ম্রিয়মাণ হয়ে গেছে, যার কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি।