তীব্র জনবল সংকটে চসিক
ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম দ্রুত জনবল নিয়োগের দাবি
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে (চসিক) তীব্র জনবল সংকটে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। পদ খালি থাকলেও নানা জটিলতায় লোক নিয়োগ করতে পারছে না চসিক। এতে চট্টগ্রামবাসীকে সেবা প্রদান অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান অস্থায়ী কর্মচারীদের স্থায়ী করার দাবিতে শ্রমিক সংগঠনগুলোর আন্দোলন, চসিকের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে চলমান মামলা আর ২০২০ সালে মন্ত্রণালয়কে পাঠানো নতুন পদ সৃষ্টির প্রস্তাব পাস না হওয়া এ সংকটের সৃষ্টি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। এরই মধ্যে চট্টগ্রামবাসীকে কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রদানের পাশাপাশি চট্টগ্রামের চলমান উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে ২০২০ সালে প্রেরিত ৯৬০৪ জনের জনবল কাঠামো দ্রুত অনুমোদন দেয়ার দাবি উঠেছে। এতে জনবল সংকট দ্রুত কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে। চসিক সূত্র জানায়, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে ৪২২৬ জন স্থায়ী পদের বিপরীতে মাত্র ২৬৩৫ জন কাজ করায় ১৫৯১টি স্থায়ীপদ শূন্য রয়েছে। ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট চসিক ‘নগরীর আয়তন ও লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চসিকের কাজের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায়’ বিদ্যমান ৪২২৬ জনের জনবলের সঙ্গে অতিরিক্ত ৫৯৭৮টি জনবল যুক্ত করে ৯৬০৪ জন করার জন্য স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় চসিক। বর্তমানে প্রস্তাবটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। ৯৬০৪ জনকে প্রয়োজনীয় জনবল ধরলে, বর্তমানে স্থায়ীভাবে কর্মরত ২৬৩৫ জন এবং অস্থায়ীভাবে কর্মরত ৬১৩৫ জনকে যোগ করলেও শূন্য পদ থাকছে ৮৩৪ জনের। বর্তমানে, নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি আড়াই হাজার কোটি টাকার ‘এয়ারপোর্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কগুলো উন্নয়ন ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন’ প্রকল্প এবং ২৬৭ কোটি টাকার কোভিড প্রকল্পের মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চসিক। প্রকল্প দুটিতে প্রায় ১৫০০ স্কিম থাকলেও, প্রকল্প বাস্তবায়নে অতিরিক্ত জনবলও নেই। এদিকে কর্পোরেশনের কার্যক্রম ও জনগণের সেবার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু অবসর, মৃত্যু ও স্বেচ্ছায় চাকরি ত্যাগ ইত্যাদি কারণে ক্রমাগত পদ খালি হয়ে জনবল সংকট বেড়েছে। ২০২০ সাল থেকে পত্রিকায় তিনবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলন ও উচ্চ আদালতের মামলা জড়িত কারণে নিয়োগ দিতে পারেনি চসিক। এ সময় চসিকে বিভিন্ন সময় অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেয়া শ্রমিকদের স্থায়ী নিয়োগ দেয়া ছাড়া নতুন করে লোক নিয়োগ দেয়া যাবে না দাবিতে আন্দোলনে নামে শ্রমিক সংগঠনগুলো। প্রসঙ্গত ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ২০০ জন কর্মচারী অবসরে গেছন। এছাড়া, একই কারণে প্রতিনিয়ত স্থায়ী কর্মচারীরা অবসরে যাচ্ছেন। ফলে শূন্য পদে নিয়োগ অপরিহার্য হয়ে পড়লেও এসব প্রতিকূলতার কারণে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের মাধ্যমে লোক নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জনবল সংকটে ভোগা চসিকের পক্ষে কাঙ্ক্ষিত সেবাপ্রদান ক্রমশ কঠিনতর হয়ে উঠছে। এ পরিস্থিতিতে বিকল্প কোনো পথ খোলা না থাকায় মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ২ হাজার অস্থায়ী শ্রমিকের শূন্য পদগুলোতে লোক নিয়োগ দিয়ে সেবা কার্যক্রম সচল রাখার চেষ্টা চলছে। অস্থায়ীভাবে নিয়োগের ক্ষেত্রে কাজ নেই মজুরি নেই ‘শ্রমিক’ পদে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে শর্ত হিসেবে নিয়োগ সম্পূর্ণ অস্থায়ীভিত্তিক হবে এবং কোনোরূপ কারণ দর্শানো ব্যতিরেকে কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় নিয়োগকৃত ব্যক্তিকে চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন এ ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ, নিয়োগের শর্তানুসারে চসিক কর্তৃপক্ষ চাইলে এসব অস্থায়ী নিয়োগ যে কোনো সময় বাতিল করতে পারবে। অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া কেউ চাকরি সংক্রান্ত বিষয়ে চসিকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করতে পারবেন না।