ইসরাইল-হামাস সংঘাত
দুই পক্ষের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ১০০ জন
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এবং ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত চলছে। দুই পক্ষের সংঘাতে এখন পর্যন্ত ২ হাজার ১০০’র বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ৯ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। অন্যদিকে ইসরাইলে নিহতের সংখ্যা ১ হাজার ২০০। গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ৯৫০ জন নিহত হয়েছে। গত শনিবার থেকেই বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এক বিবৃতিতে ইসরাইলি বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, গত মঙ্গলবার রাতে তারা গাজায় ২০০ টার্গেটে হামলা চালিয়েছে। এদিকে হামাসের সঙ্গে লড়াইয়ে সহায়তা করতে ইসরাইলের বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক সরঞ্জাম বহনকারী প্রথম বিমানটি সম্প্রতি দক্ষিণ ইসরাইলের নেভাটিম বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছেছে। ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধের সময়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইউএসএস জেরাল্ড আর ফোর্ড স্ট্রাইক গ্রুপও পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে। নিহতরা হলেন জাকারিয়া আবু মুয়াম্মার ও জাওয়াদ আবু শামাল। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গাজায় ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত- জাতিসংঘ : ইসরাইলি বাহিনী বিমান, স্থল এবং সমুদ্র থেকে ফিলিস্তিনি ছিটমহলে ভারী বোমাবর্ষণের কারণে গাজা উপত্যকায় ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘ এ কথা বলেছে। গত শনিবার হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের পাল্টা বোমা হামলার পর থেকে ভয়ঙ্কর লড়াইয়ে উভয় পক্ষের হাজার হাজার লোক নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা জানিয়েছে, ‘গাজায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৯৩৪ জনেরও বেশি লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে। সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, ‘এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।’ ইসরাইলের ৭৫ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হামলায় দেশটির ১ হাজার জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছে। এদিকে গাজার কর্মকর্তারা বলেছেন বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় ৯০০ জন নিহত হয়েছেন। ইসরাইল এরই মধ্যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ আরোপ করেছে, খাদ্য, পানি, জ্বালানি এবং বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দিয়েছে। এই পদক্ষেপের ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এটি ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে। শান্তির একমাত্র পথ ইসরাইলি দখলদারত্বের অবসান : চলমান সংঘাতে ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনে যারা অকল্পনীয় বেদনা এবং ভয়ের মধ্যে রয়েছেন, তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন ব্রিটেনের লেবার দলের সাবেক নেতা জেরেমি করবিন। এক্সে (আগের নাম টুইটার) তিনি লিখেছেন- আজ আমি সেই ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনিদের কথা ভাবছি, যারা অকল্পনীয় বেদনা, ট্রমা ও ভয়ে ভুগছেন। ইসরাইলে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ভয়াবহ হামলা ছিল শোচনীয়। এটি ফিলিস্তিনিদের নির্বিচারে হত্যার ন্যায্যতা দিতে পারে না, যা তারা করেননি, এমন অপরাধের মূল্য তাদের দিতে হচ্ছে। গাজায় ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার অর্ধেক হলো শিশু। তারা খাবার, পানি, গ্যাস বা বিদ্যুৎ ছাড়া এক উন্মুক্ত কারাগারে বসবাস করছে। তারা চোখের সামনে ঘরবাড়ি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দেখছে। তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। জেরেমি লিখেন, আমাদের উচিত ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি, সব বেসামরিকের ওপর চালানো সহিংসতার নিন্দা জানানো। অবশ্যই অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির জন্য নতুন করে আহ্বান জানাতে হবে, যাতে আর কোনো প্রাণহানি না ঘটে। তিনি লিখেন- যুদ্ধের সময়ে শান্তির জন্য আমাদের আরো কণ্ঠস্বর দরকার। শান্তির একমাত্র পথ দখলদারত্বের অবসান।
ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহ : ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের সাথে চলমান যুদ্ধের সমর্থনে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে লেবাননের ইরান-সমর্থিত শিয়াপন্থি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। গতকাল ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নিশানায় নিখুঁত আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে লেবাননের এই গোষ্ঠী। এর আগে, গত মঙ্গলবার লেবানন সীমান্তে ইসরাইলের হামলায় হিজবুল্লাহর তিন সদস্যের প্রাণহানি ঘটে। ইসরাইলের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা ট্যাঙ্কবিরোধী গোলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছে। এর জবাবে লেবাননে আক্রমণ শুরু করা হয়েছে। সীমান্তের একটি ইসরাইলি সামরিক চৌকিতে লেবানন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরাইল।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বলেছে, লেবানন থেকে ছোড়া ট্যাঙ্কবিরোধী ক্ষেপণাস্ত্রটি আরব আল-আরামশি গ্রামের কাছে আঘাত হেনেছে। ইসরাইলের সাথে লেবানন সীমান্তে এর আগেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। লেবাননের সাথে ইসরাইলের উত্তর সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষ মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক পরিসরের সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরাইলে হিজবুল্লাহর কামান ও রকেট নিক্ষেপে এই শঙ্কা আরো জোরালো হয়েছে। ইসরাইল যখন গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা চালাচ্ছে, তখন ইসরাইলি ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের মধ্যে গোলাবর্ষণের এই ঘটনা ইসরাইলের উত্তর প্রান্তে আরেক সংঘাতের ভয় বাড়াচ্ছে। ইসরাইল-হামাস সংঘাতে রাশিয়ার লাভ, দুশ্চিন্তায় ইউক্রেন : ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ থেকে লাভবান হওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে রাশিয়ার। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধগোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ইসরাইলকে অস্ত্র সহায়তা দিতে হচ্ছে পশ্চিমাদের। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নজর ইউক্রেন থেকে ইসরাইলের দিকে ঘুরে যেতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেটি হলে আখেরে লাভ হবে রাশিয়ারই। এছাড়া, ইসরাইল-ফিলিস্তিনি সংঘাতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তাতে আরো ফুলেফেঁপে উঠবে মস্কোর অর্থভান্ডার। বিষয়টি স্বীকার করে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ গত সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল-সংঘাতে নজর দেওয়ায় যদি ইউক্রেনের কাছে অস্ত্র সরবরাহের গতি কমে যায়, তাহলে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের লক্ষ্য অর্জন দ্রুততর হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, তেল-আবিবের কাছে বর্তমানে প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র মজুত রয়েছে।
তারা যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চেয়েছে মূলত আয়রন ডোম ক্ষেপণাস্ত্র, গাইডেড যুদ্ধাস্ত্র এবং গোলাবারুদ। তবে গাজা উপত্যকায় স্থল অভিযান শুরু করলে অস্ত্র ভান্ডারে চাপ পড়বে ইসরাইলের। সাবেক ইউএস মেরিন কর্নেল ও বর্তমানে স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ সেন্টারের উপদেষ্টা মার্ক ক্যানসিয়ান বলেন, সেই সময় ইসরাইল ব্যাপকভাবে যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার শুরু করবে। যদিও তাদের কাছে অস্ত্রের বড় মজুত রয়েছে, তবে তা দীর্ঘ অভিযানের জন্য যথেষ্ট না-ও হতে পারে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতে বিশ্ববাজারে বাড়ছে জ্বালানি তেলের দাম। সূত্র বিসিসি, আল জাজিরা ও ইন্টারনেট।