গাজায় ইসরাইলি বোমা হামলা অব্যাহত
৪ লাখ ২৩ হাজার গৃহহীন : ২৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের আবেদন
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
জাতিসংঘ বলেছে, হামাসের আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলি বোমা হামলার পর গাজা উপত্যকায় ৪ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ওসিএইচএ গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দিনের শেষ পর্যন্ত গাজায় বাস্তুচ্যুতদের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৪৪৪ জন বেড়ে ৪ লাখ ২৩ হাজার ৩৭৮ জনে পৌঁছেছে। হামাসের শনিবারের হামলার জবাবে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় ব্যাপক হামলা চালানোর ঘোষণা দেয়। হামাস যোদ্ধাদের হামলায় ১২০০ ইসরাইলি মারা যায় এবং প্রায় ১৫০ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে। হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইল ২৩ লাখ লোকের একটি ঘনবসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় নির্বিচারে বিমান ও কামানের গোলা হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংস স্তূপে পরিণত করেছে। এতে ভবনগুলো মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। এই নির্বিচার হামলা চালিয়ে ইসরাইল ১ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি লোককে হত্যা করেছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইল এর মধ্যেই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থল অভিযান শুরু করেছে। ওসিএইচএ বলেছে, ‘আকাশ, সমুদ্র এবং স্থল থেকে ভারী ইসরাইলি বোমাবর্ষণ প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে অব্যাহত রয়েছে। ওসিএইচএ জানায়, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় একাধিক আবাসিক ভবন ধ্বংস করা হয়েছে।’ এতে বলা হয়েছে, বাস্তুচ্যুতদের দুই-তৃতীয়াংশ ২ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সমর্থনকারী জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় চেয়েছে। আরো প্রায় ২৭ হাজার ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ পরিচালিত স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কাছে এবং অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে, শনিবারের হামলার আগে প্রায় ৩,০০০ মানুষ ছিটমহলের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ওসিএইচএ গাজার গণপূর্ত ও আবাসন মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা উদ্ধৃত করে বলেছে, বোমা হামলার অভিযানে ৭৫২টি আবাসিক এবং অনাবাসিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। যার মধ্যে ২ হাজার ৮৩৫টি আবাসন ইউনিট রয়েছে। আরো প্রায় ১ হাজার ৮০০টি আবাসন ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের সংস্থাটি ইসরাইল হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক অবকাঠামোর উল্লেখযোগ্য ধ্বংসের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এদিকে গাজা উপত্যকা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের ‘একেবারে জরুরি প্রয়োজন’ মোকাবিলায় জাতিসংঘ বৃহস্পতিবার ২৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের জরুরি সাহায্যের আবেদন জানিয়েছে। জাতিসংঘের মানবিকবিষয়ক সমন্বয় দপ্তর (ওমিসএইচএ) বলেছে, এই তহবিল ১২ লাখের বেশি মানুষকে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা হবে।
গাজায় নতুন করে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে এই উপত্যকার ৬০ শতাংশ পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা বিবেচনা করা হয়েছিল। ১১ লাখ বাসিন্দাকে উত্তর গাজা ছাড়তে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জাতিসংঘকে বলেছে, ওয়াদি গাজার উত্তরে বসবাসকারী প্রত্যেকের আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দক্ষিণ গাজায় সরে যাওয়া উচিত। জাতিসংঘের এক মুখপাত্র এমনটি জানিয়েছেন। জাতিসংঘ বলছে, সেখানে বসবাসকারীর সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ, যা গাজার মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক। এর মধ্যে ঘনবসতিপূর্ণ গাজা সিটিও রয়েছে। জেরুজালেম সময় বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় এই সতর্কতা জারি হয়। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ বলছে, চরম মানবিক পরিস্থিতি ছাড়া এত বিপুলসংখ্যক মানুষকে সরিয়ে নেওয়া অসম্ভব। ইসরাইল স্থল অভিযান শুরু করার জন্য গাজা সীমান্তে সৈন্য, ভারী কামান ও ট্যাংক জড়ো করছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজা সিটির বেসামরিক জনগণকে দক্ষিণে চলে যেতে বলেছে। তারা বলছে, সামনে গুরুত্বপূর্ণ অভিযান চালানো হবে। সামরিক বাহিনী গাজা সিটির বাসিন্দাদের বলেছে, বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়ে পরবর্তী ঘোষণা দেওয়ার পরই শুধু তারা তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে পারবে। একই সঙ্গে গাজার বাসিন্দাদেরও বলা হয়েছে, তারা যেন ইসরাইলের সীমান্ত বেষ্টনীর কাছে কাছে না যায়। সূত্র : বিবিসি, আল জাজিরা।