এ বছরের শারদীয় দুর্গোৎসবের পূর্ব আনুষ্ঠানিকতা মহালয়া আজ। মহালয়ার অর্থ পরমাত্মা। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়া। মহালয়া হলো শারদীয় দুর্গাপূজার পূর্ব অমাবস্যা। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ২০ অক্টোবর ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এবারের দুর্গাপূজা। আর ২৪ অক্টোবর পালিত হবে বিজয়া দশমী। চলতি বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ৪০৮ মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হবে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ৩২ হাজার ১৬৮টি। এ বছর ঢাকা মহানগরীতে দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হবে ২৪৫টি মন্দিরে, গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ২৪২টি। গতকাল সকালে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জেএল ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সহ-সভাপতি ডিএন চ্যাটার্জি, তাপস কুমার হাল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়, কিশোর রঞ্জন মণ্ডলসহ আরো অনেকে।
এদিকে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। ডিএমপি জানায়, বিগত শারদীয় দুর্গোৎসবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ডিএমপি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের শারদীয় দুর্গাপূজার বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পূজার দিনগুলোতে প্রত্যেক মণ্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ ও আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশি টহল বাড়ানোসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ডিএমপির গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি সর্বস্তরে সচেতনতাবোধ তৈরি করা গেলে পুলিশ ও পূজা উদযাপন কমিটি বা ভক্তদের যৌথ উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে উৎসবমুখর এবং নিরাপদ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপন সম্ভব হবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এ বাণীকে আরো সমুন্নত করা সম্ভব হবে। শারদীয় দুর্গোৎসবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি ২২ দফা নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করছে ডিএমপি। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এসব নিরাপত্তা নির্দেশনাসমূহ মেনে চলার অনুরোধ করা হয়।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে: ১. প্রতিটি পূজামণ্ডপ বা মন্দিরে রাত্রিকালীন ভিডিও ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। ২. প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও আর্মড ব্যান্ড নির্ধারণ করে দেওয়া। স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা স্থানীয় থানায় পাঠানো ও থানার অফিসারের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকদের ব্রিফিং করার ব্যবস্থা করা। ৩. প্রবেশ ও বাহির গেট মজবুতভাবে স্থাপন, যেসব মণ্ডপে সীমানা দেয়াল নেই সেসব ক্ষেত্রে বাঁশের শক্ত বেড়া নির্মাণ এবং নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক প্রবেশ গেটের ব্যবস্থা করা। ৪. স্থানীয় কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা এবং তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা। ৫. সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচারের ব্যবস্থা করা। ৬. প্রতিটি পূজামণ্ডপে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র স্থাপন ও গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা। ৭. বৈদ্যুতিক কাজে নিম্নমানের তার ব্যবহার না করা। ৮. অগ্নিদুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য পূজামণ্ডপে মোমবাতি/আগরবাতি/আরতির সময় সাবধানতা অবলম্বন করা। ৯. আনন্দ উৎসবে মাদকের ব্যবহার, জুয়া খেলা ও আতশবাজি বন্ধ রাখা। ১০. প্রতিটি পূজামণ্ডপ/মন্দিরের জন্য পরিদর্শন রেজিস্ট্রার প্রস্তুত ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা। ১১. প্রতিটি পূজামণ্ডপ বা মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত ও বিকল্প আলোর (জেনারেটর) ব্যবস্থা রাখা। ১২. পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীদের ব্যাগ বা পোটলা ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা। তাছাড়া পূজামণ্ডপ এলাকায় সন্দেহজনক কোনো ব্যাগ বা পোটলা পড়ে থাকতে দেখলে বা দৃষ্টিগোচর হলে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষণিক অবহিত করা। ১৩. ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখা এবং অপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের লক্ষ্যে আজান ও নামাজের সময় এবং মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা। ১৪. পূজামণ্ডপ সংলগ্ন স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পূজামণ্ডপ ও আশপাশ এলাকায় মেলা না বসানো। ১৫. পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জন্য ওয়াশরুমসহ স্বাস্থ্যকর আবাসনের ব্যবস্থা রাখা। ১৬. পূজার প্রসাদ প্রস্তুত করার সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখা ও পূজামণ্ডপসমূহে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। ১৭. পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক কোনো বিরোধ থাকলে তা পূজা উদযাপন কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে নিষ্পত্তি করা। ১৮. বিজয়া শোভাযাত্রায় উচ্চ বাদ্যযন্ত্র সেট (পিএ) ব্যবহার না করা। ১৯. শোভাযাত্রা চলাকালে যেন কোনো গ্যাপ সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা। ২০. প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা এবং বিসর্জনের সময় পানিতে পড়ে প্রাণহানির মতো ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা। বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের নৌকায় ওঠা নিরুৎসাহিত করা। ২১. ২৪ অক্টোবর বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে প্রতিমা বিকাল ৩টার আগেই ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, সাড়ে ৩টার মধ্যে শোভাযাত্রা শুরু করা এবং সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রতিমা ওয়াইজঘাটে পৌঁছানো। ওয়াইজঘাটে সব প্রতিমা রাত ৮টার মধ্যে বিসর্জন সম্পন্ন করা। ২২. কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা তৈরি হলে অতিদ্রুত পুলিশকে জানানো এবং জরুরি প্রয়োজনে পূজা উদযাপন কমিটি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট থানার ফোকাল পয়েন্ট অথবা ৯৯৯-এর সেবা গ্রহণ করা।