ঢাকা ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে পতেঙ্গা প্রান্তে

* প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ হবে আনোয়ারায় * উদ্বোধনের পরদিনই চলবে যানবাহন
২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন হবে পতেঙ্গা প্রান্তে

আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টানেল উদ্বোধন করবেন। এর পরই ওয়ান সিটি টু টাউনের যাত্রা শুরু হচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে নদীর অপর প্রান্ত আনোয়ারা উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে সুধী সমাবেশ। এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলছে সেখানে সাজ সাজ রব। উদ্বাধনী অনুষ্ঠানকে আকর্ষণীয় করতে নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। সম্ভাব্য জনসভা স্থলে সফর করে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। পাশাপাশি প্রশাসন ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারাও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জনসভাস্থল পরিদর্শন করেছেন। প্রশাসনের পাশাপাশি সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে টানেল কর্তৃপক্ষ। টানেলটি চালু হলে প্রতিদিন ১৭ হাজার ২৬০টি এবং বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্যে বলা হয়, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি। এছাড়াও ১ লাখ ৬২ হাজার যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২০৬৭ সালে। টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে ৫ থেকে ৬ মিনিট সময় লাগাবে। পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু হয়ে টানেলটি নদীর তলদেশ দিয়ে চলে গেছে আনোয়ারার চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা এবং কর্ণফুলী সার কারখানার মাঝামাঝি জায়গায়।

চীনের সাংহাই শহরের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ প্রকল্পটির খরচ ও মেয়াদ দুটিই বেড়েছে দুই দফা। সংশোধিত প্রকল্প অনুযায়ী ব্যয় বাড়ানোর পর এই প্রকল্পে এখন খরচ দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকা। চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ হারে সুদে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দেয়। বাকি অর্থ দেয় বাংলাদেশ সরকার। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এ টানেলের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চীনের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতায় নির্মিত মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। তবে সংযোগ সড়কসহ টানেলের সর্বমোট দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। প্রকল্পটির ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের প্রকল্প পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানান, টানেলের কাজ শেষ। মূল কাজ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। ভেতরে শেষ মুহূর্তের সিভিল, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক ও সাজসজ্জার কাজও শেষ। কয়েকবার ট্রায়াল রানও করা হয়েছে। আগামী ২৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী টানেল উদ্বোধন করবেন। পরের দিন থেকেই যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, সমীক্ষা অনুযায়ী ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে।

এদিকে চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘ওয়ান সিটি, টু টাউন’ মডেলে গড়ে তোলা চট্টগ্রাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা উপজেলাকে সংযুক্ত করতে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রাম সফরকে ঘিরে পতেঙ্গা টানেলের সম্মুখ থেকে বিমানবন্দর সড়কের কার্পেটিং এবং সৌন্দর্যবর্ধনের চলমান কাজ পরিদর্শনকালে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী এ মন্তব্য করেন। সৌন্দর্যবর্ধন কাজ পরিদর্শনকালে মেয়র কাজের গুণগতমান যাচাই করেন এবং কোথাও কোনো প্রকার অসংগতি থাকলে দ্রুত তা সমাধানসহ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দেন। এ সময় সিটি মেয়রের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর ছালেহ আহম্মদ চৌধুরী, অধ্যাপক মোহাম্মদ ইসমাইল, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এদিকে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই দিন পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের উদ্বোধন করা হলেও আনোয়ারা প্রান্তে হবে সুধী সমাবেশ। এতে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দেবেন। টানেল ও সুধী সমাবেশের স্থান পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। গেল ৩ অক্টোবর সকালে নগরের পতেঙ্গায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল ও আনোয়ার সুধী সমাবেশ করার জন্য স্থান পরিদর্শন করেন তিনি। সমাবেশের স্থান পরিদর্শনের সময় বিপ্লব বড়ুয়ার সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার দাশ, কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিজয় বড়ুয়া, লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন হিরু, ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ রিয়াদ প্রমুখ।

সমাবেশের বিষয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মিত হয়েছে। এটি সত্যিই অভিনব ও বিস্ময়কর। অর্থনীতি-তো আছেই বিশেষ করে দেশের প্রবৃদ্ধিকে অনন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাবে এ টানেল। যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে টানেল। পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের উদ্বোধন করা হলেও আনোয়ারা প্রান্তে কেইপিজেড মাঠে সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত