ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল

আইসিইউ বিভাগে ভর করেছে শনির দশা

আইসিইউ বিভাগে ভর করেছে শনির দশা

কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ সরকারি স্বাস্থ্যসেবার প্রতিষ্ঠান কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠান জনগুরুত্বপূর্ণ আইসিইউ বিভাগে শনির দশা ভর করেছে। জনবল সংকট থাকলেও হঠাৎ করেই কমিয়ে নেয়া হয়েছে ২টি মেডিকেল কর্মকর্তার পদ। আর মেডিকেল কর্মকর্তা না থাকার অজুহাতে কমিয়ে নেয়া হয়েছে শয্যাও।

মেডিকেল কর্মকর্তার সংকটে প্রশিক্ষণে থাকা এইচএমও চিকিৎসক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে আগের তুলনায় বহুগুণ।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন ডাক্তার কফিল উদ্দিন আব্বাস। তিনি আইসিইউ বিভাগের কোনো তথ্য সম্পর্কে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করতে রাজী হননি।

আইসিইউ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কিছু নথিপত্র প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। একই সঙ্গে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের দায়িত্বশীল কয়েকজন চিকিৎসক, কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গেও প্রতিবেদকের আলাপ হয়েছে। যারা কৌশলগত কারণে গণমাধ্যমে নাম প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেছেন।

প্রাপ্ত নথিপত্র ও আলাপকালে প্রাপ্ত তথ্য মতে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান আইসিইউ বিভাগে শয্যা ছিল ১০টি। হাসপাতালের নতুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ডাক্তার মং টিং ঞো যোগদান করেন সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে। তিনি যোগদানের পর পরই ওই বিভাগের ২টি শয্যা বন্ধ করে ৮টি শয্যা চালু রাখেন। এই বিভাগটিতে দীর্ঘদিন ধরে মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে ৪ জন চিকিৎসক দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। যার মধ্যে একজন চিকিৎসব গত ২ মাস আগে স্বেচ্ছায় চাকরি ছেড়ে দেন। যে পদটি এই পর্যন্ত শূন্য রয়েছে। এর মধ্যে গত ১ মাস আগে দায়িত্বরত অবস্থায় মেডিকেল কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন তানিমকে অব্যহতি প্রদান করা হয়। ফলে মেডিকেল কর্মকর্তা হিসেবে রয়েছে ডাক্তার মাহবুব বিন শরীফ ও খলিল এই দুইজন। এই দুইজনের মধ্যে ডাক্তার খলিলের গত ১ মাসের উপস্থিতি নথিতে দেখা গেছে তিনি সপ্তাহে ৩-৪ দিন কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। যার কারণে আইসিইউ’র মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগটি প্রায়শ দায়িত্ব পালন করে প্রশিক্ষণে থাকা এইচএমও রিফাত।

শুক্রবার বেলা ১১টা ও গতকাল শনিবার দুপুর ২টায় আইসিইউতে গিয়ে এইচএমও রিফাত ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসকের দেখা পাওয়া যায়নি। বিভাগটি পরিসংখ্যার তথ্য বলছে, এই পরিস্থিতিতে আগের তুলনায় রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ।

অব্যহতি দেয়া মেডিকেল কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসাইন তানিম জানান, আইসিইউতে দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে হঠাৎ করেই তাকে অব্যহতির বিষয়টি জানানো হয়েছে। কেন এই অব্যহতি তিনি নিজেও জানেন না।

স্বয়ং হাসপাতালটির এক চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, নানা অজুহাতে আইসিইউ থেকে রোগীদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। আগে যে সহজ প্রক্রিয়ায় রোগীরা ভর্তি হতে পারতেন বর্তমানে তা জটিল হয়ে উঠেছে। এখানে বেসরকারি ক্লিনিকের রোগীদের সহজে এনে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া রোগীদের মধ্যে উচ্চবিত্তদের মানুষ দ্রুত চট্টগ্রামে চলে যাচ্ছেন। গরিব পরিবারের রোগীরা পড়েছেন বিপাকে।

কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মং টিং ঞো আইসিইউ বিভাগে জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এই বিভাগটি জনবল সংকটের কথা জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে জনবল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করছি এর সমাধান হবে।

শয্যা কমিয়ে নেয়ার বিষয়টি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন তত্ত্বাবধায়ক। তিনি জানান, ৮টি শয্যা চালু আছে। রোগীর সংখ্যা বাড়লে শয্যা বাড়ানো হয়।

মেডিকেল কর্মকর্তার অনুপস্থিত, একজনকে অব্যহতি, এইচএমও বা প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক একা দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি নন ডাক্তার মং টিং ঞো। তিনি বলেন, বিষয়টি একান্ত অফিসিয়াল; এটা আমরা নিজেই ভালো জানি। ওইভাবে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত