ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাবির নতুন ভিসি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল

ঢাবির নতুন ভিসি অধ্যাপক মাকসুদ কামাল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল। আগামী ৪ নভেম্বর থেকে এ নিয়োগ কার্যকর হবে।

গতকাল দুপুরে রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বিশ্ববিদ্যালয় অধিশাখা-২ এর যুগ্ম সচিব মো. মাহমুদুল আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ, ১৯৭৩ এর আর্টিকল ১১ (২) অনুসারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এবং ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালকে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে সাময়িকভাবে দায়িত্ব প্রদান করা হলো।’

প্রজ্ঞাপনে পাঁচটি শর্ত উল্লেখ করে বলা হয়, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর প্রয়োজনে যে কোনো সময় এ নিয়োগ বাতিল করতে পারবেন; এ পদে তিনি (অধ্যাপক মাকসুদ) তার বর্তমান পদের সমপরিমাণ বেতন ভাতাদি প্রাপ্য হবেন; বিধি অনুযায়ী পদ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন; বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সার্বক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন : এ আদেশ আগামী ৪ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে।’

২০২০ সালের জুন মাস থেকে অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের (শিক্ষা) দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন কলেজে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে এপ্রিল ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৭ পর্যন্ত নিয়োগ লাভ করেছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনে দীর্ঘদিন ধরে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করে আসছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিতে চারবার সভাপতি ও তিনবার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগ-সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়কের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এছাড়া তিন মেয়াদে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও মহাসচিব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। দুই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা’ সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল ২০০০ সালের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন এবং একই বিভাগে ২০১০ সালে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পূর্বে তিনি বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠানে (স্পারসো) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে প্রায় ৬ বছর কর্মরত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোস সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ ইন ন্যাচারাল সায়েন্সেসে রিসার্চ ফেলো হিসেবে ২ বছর গবেষণা কাজ করেছেন।

এছাড়া, তিনি খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটিতে যথাক্রমে ভূতত্ত্ব, পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে পাঠদান করেছেন। ড. মাকসুদ কামাল ভূমিকম্প ও সুনামি এবং নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউএনডিপি/সিডিএমপি বাংলাদেশ প্রকল্পে ৪ বছর কাজ করেছেন।

এর পূর্বে তিনি ২০০৭ সালে ভূমিকম্প দুর্যোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউএনডিপি/এডিপিসি ইরান-এ কাজ করেছেন। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে তিনি শিক্ষাবিদ ও গবেষক হিসেবে দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের বহু প্রকল্পে কারিগরি উপদেষ্টা/বিশেষজ্ঞ সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইসরি কমিটির সদস্য। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সাথেও তার কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

অধ্যাপক ড. মাকসুদ কামাল ১৯৮২ সালে এসএসসি, ১৯৮৪ সালে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ থেকে ১৯৮৮ সালে বিএসসি (অনার্স) এবং ১৯৮৯ সালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। সকল পরীক্ষায় তিনি প্রথম ডিভিশন/ বিভাগ প্রাপ্ত হন। ১৯৯৮ সালে তিনি নেদারল্যান্ডের টুয়েন্টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর জিও ইনফরমেশন সায়েন্সেস অ্যান্ড আর্থ অবজারভেশন থেকে ফলিত জিওমরফোলজি এবং ইঞ্জিনিয়ারিং জিওলজি বিষয়ে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর ২০০৪ সালে তিনি জাপানের টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ভূমিকম্প ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। দেশি-বিদেশি জার্নালে তার ৬৫টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রবন্ধ, রিপোর্ট, বুক চ্যাপ্টারসহ তার ১০০টির উপরে গবেষণাকর্ম রয়েছে। অনেকগুলো আন্তর্জাতিক জার্নালে তিনি রিভিউ প্রদানকারী হিসেবে অবদান রেখে আসছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে তিনি জ্ঞান ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা-সংক্রান্ত কাজ করছেন। এসবের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কলেজ লন্ডন; ইউনিভার্সিটি অব এডিনবার্গ; চীনের পিকিং ইউনিভার্সিটি ও জাপানের টোকিও ইউনিভার্সিটি।

ড. মাকসুদ বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথেও সম্পৃক্ত আছেন। তিনি ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সোসাইটি অব ইনফরম্যাটিক্সের সভাপতির দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ জিওলজিক্যাল সোসাইটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ আর্থকোয়াক সোসাইটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি।

অধ্যাপক মাকসুদ কামাল লক্ষ্মীপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ২১ নভেম্বর ১৯৬৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম ফরিদ আহমেদ এবং মা মরহুমা মাছুমা খাতুন ছিলেন সমাজহিতৈষী ও বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব। তার বাবা একজন সুপরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীও ছিলেন। ড. মাকসুদ কামালের অগ্রজ প্রয়াত একেএম শাহজাহান কামাল বাংলাদেশ সরকারের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং তিন মেয়াদে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ড. মাকসুদ কামালের স্ত্রী সৈয়দা আফসানা ফেরদৌসি একজন শিক্ষাবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেসের (ইউআইটিএস) লিবারেল আর্টস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক।

উল্লেখ্য, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হবেন অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত