বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের সমন্বয়কারী ও হত্যাকারী এবং মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরসা’র মোস্ট ওয়ান্টেড কিলার গ্রুপের প্রধান নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটে সশস্ত্র সংগঠন আরসার পক্ষে কাজ করার প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে হত্যা করা হয়েছিল বলে র্যাবকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার নুর কামাল ওরফে সমিউদ্দিন।
গতকাল দুপুরে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান র্যাব হেডকোয়ার্টারের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
গত রোববার রাতে উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী শিবির-সংলগ্ন পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে দেশি বিদেশি সাতটি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদসহ তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
প্রেস ব্রিফিংয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ প্রত্যাবাসন এবং রোহিঙ্গাদের শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখছিলেন মাস্টার মুহিব্বুল্লাহ। এ সময় আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনি মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সশস্ত্র সংগঠন আরসার সাথে কাজ করার প্রস্তাব দেয়। একই সঙ্গে আতাউল্লাহ জুনুনি রোহিঙ্গাদের স্বদেশে শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসনে বিরোধিতা করেন। এতে রাজি না হওয়ায় আতাউল্লাহ জুনুনি মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। মাস্টার মুহিব্বুল্লাহর হত্যার দুই দিন আগে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের একটি বাড়িতে বৈঠক করেন আরসার সন্ত্রাসী গ্রুপ। দুই দিন পর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে আরসার ১২ জন কিলার গ্রুপ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে মাস্টার মুহিব্বুল্লাহর হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে নুর কামাল জানান, মাস্টার মুহিব্বুল্লাহকে তার কার্যালয়ে যে গ্রুপ সরাসরি গুলি করে হত্যা করে সেই গ্রুপেই নুর কামাল উপস্থিত ছিলেন। গ্রেপ্তার নুর কামাল মাস্টার মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলার ১৯ নম্বর চার্জশিটভুক্ত আসামি বলে জানিয়েছেন তিনি।
খন্দকার আল মঈন আরো জানান, নাইখ্যংছড়ি সীমান্তে মাদকবিরোধী অভিযানে ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা হত্যা এবং র্যাব সদস্য আহত হওয়ার ঘটনায় এই নুর কামাল জড়িত। এছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কয়েকজন মাঝি হত্যায়ও জড়িত।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে আরো জানায়, তার নেতৃত্বে ‘আরসা’র কিলিং গ্রুপের সদস্যরা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে হত্যা, হামলা, ভয় ভীতি প্রদর্শন, অরাজকতা ও আতঙ্ক সৃষ্টিসহ খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। সে ক্যাম্প-১, ২, ৬ ও ৭ এর আরসার ‘গান গ্রুপ’ কমান্ডার হিসেবেও নেতৃত্ব প্রদান করত। তার নেতৃত্বে নগদ অর্থের বিনিময়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ ক্রয় করা হতো। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য তার নেতৃত্বে আরসার প্রধান আতাউল্লাহ’র নির্দেশে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দুর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ চোরাচালান করতো। এছাড়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ এনে গ্রেপ্তারকৃত সমিউদ্দিন কিলার গ্রুপের সদস্য ও আরসার অন্যান্য সন্ত্রাসীদের মাঝে সরবরাহ করত। তাদের অত্যাচারে শরণার্থী শিবিরের শরণার্থীরা সবসময় ভীত সন্ত্রস্ত থাকত। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস রাখে না।
২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে নিজ কার্যালয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সভাপতি মাস্টার মুহিব্বুল্লাহ রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। উখিয়া থানা পুলিশ ২০২২ সালের ১৩ জুন ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ জুনুনিসহ আরো সাতজনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। বর্তমানে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মুহিব্বুল্লাহ হত্যা মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে।