স্বাভাবিকভাবেই গ্রামে নারী-পুরুষ একসঙ্গে বসবাস করেন। তবে উল্টোচিত্র দেখা গেছে কেনিয়ার উমোজা নামে একটি গ্রামে। যেখানে শুধু নারীদের বাস। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রথা ভেঙে এ গ্রাম স্থাপন করেছে নারীশক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত। যেখানে ঠাঁই মিলেছে হাজারও নির্যাতিতার। শোষণের নির্মম ইতিহাসকে পেছনে ফেলে, তারা তৈরি করেছেন নিজস্ব পরিচয়। প্রায় ৩০ বছর আগে সাম্বুরু সম্প্রদায়ের কয়েকজন নারী গোড়াপত্তন করেন এ গ্রামের। সমাজ থেকে, পরিবার থেকে বিতাড়িত হয়ে গড়ে তোলেন নিজেদের অভয়াশ্রম। ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নিপীড়িত নারীরা যোগ দেন তাদের সাথে। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। উমোজা গ্রামের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জেন নোমুকেন বলেন, এখন দিন বদলেছে। একজন মেয়ের জীবনের সিদ্ধান্ত একান্তই তার নিজের। সে কী করবে, কার সাথে জীবন কাটাবে এ সিদ্ধান্তের অধিকার তার। এজন্য প্রথমেই অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে হবে। শুরুতে নারীদের আধিপত্য মানতে পারছিল না পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। কয়েক দফা চালানো হয় উচ্ছেদ প্রচেষ্টা। তবে কখনই ভেঙে পড়েননি নারীরা। ক্রমেই তাদের এই সাহসিকতার কথা ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। সাহায্যে এগিয়ে আসে আন্তর্জাতিক অনেক মানবাধিকার সংস্থা। গ্রামবাসীরা জানান, এখানে থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। কেউ আমাকে চাপ দেয় না কোনো কাজের জন্য। স্বামীর অত্যাচারের ভয় নেই। সন্তানদের নিয়ে বেশ ভালোই আছি। বর্তমানে গ্রামটিতে সন্তানসহ প্রায় ৪০০ নারী বাস করেন স্বাচ্ছন্দ্যে। চলেন নিজেদের নিয়মকানুনে। ছেলেসন্তান ১৮ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে মায়ের সঙ্গে। তার পরই ছাড়তে হয় গ্রাম। বর্তমানে পুরুষদের গ্রাম ঘুরে দেখার সুযোগ রয়েছে। তবে নিষিদ্ধ রাতযাপন। উমোজার এ জীবনযাত্রা দেখতে ভিড় করেন বিশ্বের নানা প্রান্তের পর্যটকরা। কৃষিকাজের পাশাপাশি হাতে তৈরি গহনা ও ঐতিহ্যবাহী পোশাক বিক্রি করে উমোজা এখন স্বনির্ভর। উমোজা গ্রামের নারীরা বলেন, আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে এসেছি। কিন্তু এ গ্রামে আমরা একটি পরিবার। একই পরিচয়ে পরিচিত আমরা। পরবর্তী প্রজন্মকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছেন গ্রামপ্রধানরা। শিশুদের জন্য স্থাপন করা হয়েছে একটি স্কুল। লক্ষ্য একটিই- সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে এক হয়ে এভাবেই নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয় ধরে রাখা। কারণ, উমোজা মানেই যে একতা।