ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলগুলোর দুর্বল ইন্টারনেট সেবা শিক্ষার্থীদের কাছে প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইবি প্রতিষ্ঠার চার দশকে পদার্পণ করলেও আবাসিক হলগুলোতে ইন্টারনেট বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি আবাসিক হলে ৩ হাজার ৫৯৪ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। এসব শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট সেবার পরিবর্তে পাচ্ছেন ইন্টারনেট ভোগান্তি। শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস, একাডেমিক রিসোর্সসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ বা কিছু ডাউনলোড করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় শুধু ইন্টারনেট সেবা খাতে বছরে ৪৮ লাখ টাকা খরচ করে থাকে। বাংলাদেশ রিসার্স অ্যান্ড এডুকেশন নেটওয়ার্কের (বিডিরেন) মাধ্যমে ১০০০ এমবিপিএস ইন্টারনেট সেবার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে মাসে দিতে হয় ৪ লাখ টাকা। ভর্তির সময় ইন্টারনেট বাবদ শিক্ষার্থীদের আলাদা ভাবে গুনতে হয় ২৪০ টাকা। আবার হল প্রশাসন প্রতি বছর ইন্টারনেট বাবদ নেয় ৮০ টাকা। কিন্তু এত টাকা ব্যয়েও মানসম্মত সেবা পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা। জনবল সংকট ও দুর্বল বিতরণ ব্যবস্থার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। মাঝেমধ্যেই ইন্টারনেট থাকে না। আবার যখন থাকছে তখন বাফারিং করে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ব্রাউজিং করতে সমস্যা হয়। বার বার জানানোর পরও কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দেওয়া পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। ফলে ইন্টারনেট থেকে তথ্য সংগ্রহের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
গত ৩০ জুলাই বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়ে প্রতি গত সোমবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ঘোষণা দেয় ইবি প্রশাসন। এতে নতুন করে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে হয় শিক্ষার্থীদের। কিন্তু দুর্বল এবং নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেটের কারণে শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে কিনতে হচ্ছে ইন্টারনেট ডাটা প্যাক।
এ বিষয়ে জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক র্শিক্ষার্থী হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের হাসিন ইন্তেসাপ অর্প বলেন, আমাদের হলে প্রায় এক মাস যাবত ওয়াইফাই নেই। সপ্তাহে একদিন অনলাইন ক্লাস করতে হয়। হলের অনেকেই রিসার্চ ও পড়াশোনাসহ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য ওয়াইফাইয়ের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান চাই।
এদিকে একই হলের শিক্ষার্থী বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মেজবাহ হাসান জানান, ইন্টারনেট থেকে একাডেমিক পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন রিসোর্স ডাউনলোড করতে হয়। কিন্তু বিগত এক মাস যাবত হলের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হচ্ছে। মেজবাহের মতো হলটির অন্যান্য আবাসিক শিক্ষার্থীরাও বিপাকে পড়েছেন।
সাদ্দাম হোসেন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাদিউজ্জামান বলেন, ইন্টারনেট সমস্যার কারণে সময়তো অনেক কাজ করতে পারি না। ব্রাউজিং করাটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান সায়লা বলেন, ইন্টারনেট নামে আছে। কিন্তু এতে আমাদের তেমন কোনো কাজ হয় না। ইন্টারনেট সমস্যার জন্য আমাদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়।
এ বিষয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. দেবাশীষ শর্মা বলেন, হলগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবস্থা উন্নতি করার জন্য প্রশাসন একটা কমিটি করে দিয়েছে। বিতরণ ব্যবস্থা উন্নতির জন্য যা প্রয়োজন, তাই করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহসান-উল-আম্বিয়া বলেন, হলগুলোতে যে যার মত ইন্টারনেট কানেকশন নিচ্ছে। হলে টেকনিক্যাল হ্যান্ড ব্যবহার না করার কারণে ইন্টারনেট বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি ঘটেছে। ব্লকে হাব দেওয়ার জন্য যেসব মালামাল লাগবে তার একটা তালিকা আইসিটি সেল হল প্রভোস্টদের দিয়ে দিবে। সেই অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ করলে আমরা বিতরণ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে পারব।