চট্টগ্রাম বন্দরে নিলামযোগ্য পণ্যের স্তূপ জমেছে। কাস্টমসের জন্য নির্ধারিত অকশন ইয়ার্ডেই এসব পণ্য স্তূপ হয়ে আছে। আদা, রসুন, পেঁয়াজসহ নানা ধরনের ফলমূল পড়ে আছে নিলাম ইয়ার্ডে। কিছুদিন আগে মহিষের মাংস নিলাম নিয়ে হইচই পড়ে যায়। বিপুল পরিমাণ আমদানি করা মহিষের মাংস নিলামে বিক্রি করতে মাইকিং পর্যন্ত করতে হয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে। শেষ পর্যন্ত সেই মহিষের মাংসের নিলাম কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এবার কনটেইনার ভর্তি রূপ চাঁদা মাছ ও আদার নিলাম নিয়ে চলছে নানা তৎপরতা। অভিযোগ রয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সময়মতো এসব পণ্য নিলাম আয়োজন করছে না। এতে পচনশীল এসব পণ্য একেবারেই নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। কাস্টমস সূত্র জানায়, নানা কারণে পচনশীল পণ্য নিলামে তোলা হয়। তার অন্যতম প্রধান কারণ আমদানিকারক কর্তৃক সময়মতো পণ্য বন্দর থেকে ছাড় না করা। আর আমদানিকারকরা বলেছেন, ছাড় করার ইচ্ছা থাকলেও অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। কাস্টমস-সংক্রান্ত জটিলতায় পণ্য ছাড় করতে দেরি হয়ে যায়। এরপর পণ্য ছাড় করার নির্ধারিত ৪৫ দিন সময় পার হলেই কাস্টমস নিলামে তোলে। এতে তারা পণ্য আমদানি করে ক্ষতির মুখে পড়েন।
এদিকে নিলামের তালিকাভুক্তি করার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো কনটেইনার-ভর্তি প্রায় ১২ কোটি টাকা বাজারমূল্যের রূপচাঁদা মাছ ও আদার চালান। পচনশীল পণ্য আমদানিকারক খালাস না নিলে দ্রুত নিলাম করার কথা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) স্থায়ী আদেশে রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তাদের অনীহার কারণে সেই আদেশ এখনো বাস্তবায়িত হচ্ছে না। যথাসময়ে নিলামে না তোলার কারণে কনটেনারে নষ্ট হচ্ছে পণ্য। অনেক ক্ষেত্রে পণ্যের মান নষ্ট হচ্ছে। এতে নিলামে তোলার পরে প্রত্যাশিত পাওয়া যাচ্ছে না। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর প্রায় ২৮ টন হিমায়িত মাংস নিলামে তোলা হয়। কেজি হিসেবে দর উঠে মাত্র ১৪ টাকা ২৯ পয়সা। এর আগে যথাসময়ে নিলাম না হওয়ার কারণে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে নিজেদের টাকা খরচ করে কনটেনারে নষ্ট হওয়া পণ্য ধ্বংস করে খালি করতে হয়েছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জিএসআর অ্যাগ্রো ইন্টারন্যাশনাল ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৭ হাজার ৯০০ কেজি (প্রায় ২৮ টন) আদা নিয়ে আসে। চালানটি খালাসের জন্য আমদানিকারকের মনোনীত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট রিতাইমনি অ্যাসোসিয়েট বিল অব অ্যান্ট্রি দাখিল করে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চালানটি খালাস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১৪ আগস্ট নিলাম তালিকাভুক্ত করে। এছাড়া ঢাকার ফারাশগঞ্জ রোডের সূত্রাপুর এলাকার আমদানিকারক মেসার্স কাবা এন্টারপ্রাইজ ইন্দোনেশিয়া থেকে ২৮ হাজার ৮০০ কেজি (প্রায় ২৯ টন) আমদানি করে। কিন্তু আমদানিকারক চালানটি খালাসে বিল অব অ্যান্ট্রি দাখিল না করায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ২১ আগস্ট নিলাম তালিকাভুক্ত করে।
অন্যদিকে নগরীর ফিশারিঘাটে ইকবাল রোডের মেসার্স রফিক অ্যান্ড ব্রাদার্স মিয়ানমার থেকে ৫৬ হাজার ৮০০ কেজি (প্রায় ৫৭ টন) হিমায়িত রূপচাঁদা মাছ নিয়ে আসে। চালানটি খালাসে নগরীর শেখ মুজিব রোডের মাহমুদা এন্টারপ্রাইজ গত ৩ আগস্ট বিল অব অ্যান্ট্রি দাখিল করে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চালানটি খালাস না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গত ১০ আগস্ট নিলাম তালিকাভুক্ত করে। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে থেকে নিলাম তালিকাভুক্ত করার পর দুই মাস পেরিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের নিলাম শাখার এসব অখালাসকৃত চালানের সরেজমিন পরীক্ষা বা ইনভেন্ট্রি করতে পারেনি।
সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, পচনশীল পণ্য বেশি দিন বন্দরে রাখা যায় না। এসব পণ্য আমদানি করা হয় রেফার্ড কনটেইনারে। বিশেষায়িত এসব কনটেইনারগুলো মূলত একটি ডিপ ফ্রিজ। জাহাজে থাকা অবস্থায় এসব কনটেইনারে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎসংযোগ রাখতে হয়। আবার জাহাজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর পর কনটেইনারগুলো ইয়ার্ডের নির্ধারিত জায়গায় রাখতে হয়। যেখানে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা থাকে। প্রতিটি কনটেইনার খাতে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয়। এতে বেশি দিন পণ্য কনটেইনারে থাকলে বিদ্যুৎ বিল খাতেও ব্যয় বেড়ে যায়। আবার বিশেষায়িত রেফার্ড কনটেইনারগুলো খালি করতে না পারলে নতুন করে পণ্য আমদানিও ব্যাহত হয়। তাই পচনশীল দ্রব্য খালাস করতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।