সুসংবাদ প্রতিদিন

আগাম সবজি চাষে খুশি চাষি-ব্যবসায়ীরা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

এখনও প্রকৃতিতে শীতের উপস্থিতি পুরোপুরি জানান দেয়নি। তবে হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতের আগাম সবজি। দাম ভালো পাওয়ায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকছেন চাষিরা। যদিও এই চাষিকে গুনতে হয় সার, কীটনাশক, শ্রমিক খরচ বাবদ অতিরিক্ত টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে আগাম সবজি বিক্রি করে ভালো লাভের কথাই বলছেন চাষিরা। পৌষ, মাঘ শীত হলেও আশ্বিন থেকে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে শীতের সবজি। অসময়ে শীতের সবজি কেনা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগ্রহ আছে, আবার নেই বললেই চলে। বেশি দাম হলেও নতুন সবজি হিসেবে কিছুসংখ্যক ক্রেতার আগ্রহ রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্রেতার তেমন আগ্রহ না থাকার কারণে হিসেবে জানা গেছে বেশি দাম ও স্বাদে কমতি থাকার কথা। তবে ক্রেতা বিক্রেতাদের যোগ বিয়োগের মধ্যে সবজি চাষিরা বলছেন, প্রত্যেক ফসলে মৌসুম রয়েছে। মৌসুম অনুযায়ী চাষ করলে আবহাওয়া অনুকূলে থাকে। তাই খরচ কম হয়। ফলনও ভালো পাওয়া যায়। আগাম সবজি চাষে খরচ বেশি হয়। ফলন মোটামুটি হলেও দামে পুষিয়ে যায় চাষিদের। শীতের সবজির মধ্যে রয়েছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, মটরশুঁটি, ব্রকলি, শালগম, মূলা, টমেটো, পালংশাক, পেঁয়াজকলি। এসব সবজি যেমন সুস্বাদু, তেমনি এর পুষ্টিও বেশি। তবে শীত না এলেও বাজারে এসেছে শীতের সবজি। বর্তমানে বাজারে মিলছে, ফুলকপি, শিম, পালংশাক, টমেটো, মূলা। শীতের আগাম সবজি হওয়ায় বাজারে এগুলো দাম তুলনামূলক বেশি। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জেলায় গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এ বছরের (২০২৩-২৪) চলতি মৌসুমে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। ২০২২-২৩ মৌসুমে সবজির চাষ হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, এমন ২০২২-২৩ মৌসুমে শীতের সবজির মধ্যে শিম চাষ হয়েছে ২৩০ হেক্টর, পালংশাক ৪৪ হেক্টর, টমেটো ৩১ হেক্টর, ফুলকপি ২৭৫ হেক্টর, মূলা ৩২৮ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। ২০২৩-২৪ মৌসুমে ফুলকপি চাষ হয়েছে ৩৮৭ হেক্টর, টমেটো চাষ হয়েছে ৬৪ হেক্টর, মূলা ৪৩৫ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, পালংশাক ৬৬ হেক্টর ও ধনিয়াপাড়া ৩৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে।

অসময়ের সবজির স্বাদ ও চাহিদা : পারভীন নাহার নামে এক গৃহবধূ এসেছেন সবজি কিনতে। তিনি জানান, আগাম সবজির সাধারণত দাম বেশি হয়। অনেকেই কেনেন। তার মতে আগাম সবজি প্রথম এক দুই দিন ভালো লাগে। তার পরে আর ভালো লাগে না। তবে মৌসুম অনুযায়ী যে সবজিগুলো পাওয়া যায় সেগুলো দামেও কম। আবার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়। সাজ্জাদ হোসেন নামের এক ক্রেতা জানান, সবজি চাষে মৌসুমগত ব্যাপার থাকে। যেমন খরিপ-১ ও খরিপ-২। এই মৌসুমের মধ্যে আবহাওয়াগত বিষয়ও থাকে। আবহাওয়া ও মৌসুমগত বিষয়ের ওপরে বিভিন্ন সবজির চাষ হয়। তবে কয়েক বছর থেকে অসময়ে অন্য মৌসুমের সবজি পাওয়া যাচ্ছে। যেটা আগে পাওয়া যেত না। এই চাষিরা আগাম চাষ করছেন না। তারা এক মৌসুমের সবজি অন্য মৌসুমে অধিক মুনাফার জন্য চাষ করে বিক্রি করছেন।

উৎপাদন খরচ : চাষি হাসানুজ্জামান বলেন, শীত এখনও আসেনি। শীতের সবজি বাজারে আসতে এখনও ১৫ থেকে ২০ দিন বাকি রয়েছে। এখন বাজারে যে শীতের সবজিগুলো পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো শীতের আগাম চাষের সবজি। মৌসুমে কোন সবজি চাষে যে পরিমাণের খরচ হয়, সে তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি খরচ হয়। কেনো না মৌসুমের আগে বা পড়ে কোন সবজি চাষ করতে গেলে সেচ কিনটাশক বাবদ খরচ বেড়ে যায়। তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে ফুলকপি পাওয়া যাচ্ছে। এর দামও বেশি। এগুলো শীতের সবজি হলেও আগাম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। তবে এই ফুলকপিগুলো আকারে ছোট, ওজনে কম। একেকটি ফুলকপি কমবেশি ২৫০ গ্রামের মতো। এই ফুলকপিগুলো শীতের সময়ের হলে আকারে আরও বড় হতো। একই সঙ্গে ওজনেও বেশি হতো। মৌসুমের ফুলকপিগুলো ওজনে এক থেকে দেড় কেজি পর্যন্ত হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কীটনাশক বিক্রেতা জানান, অসময়ের সবজির তুলনামূলক কীটনাশক বেশি প্রয়োগ করতে হয়। এতে সময়ের তুলনায় খরচ বেশি হয়। তবে এবছর বর্ষা কম হয়েছে। তাই পচন রোগে আক্রান্ত কম হয়েছে। শীতের এই সবজি চাষে চাষিরা তুলনামূলক দাম ভালো পায়। পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা তাসনিম বলেন, পবা উপজেলায় ৯২৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। এরমধ্যে মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম পাওয়া যাচ্ছে। আগাম সবজি চাষে তুলনামূলক খরচ বেশি হলেও ভালো দাম পান চাষিরা। তাই অনেক চাষি আগাম শীতের সবজি চাষ করেন।