সড়ক দখল করে বাসস্ট্যান্ড নসিমন-করিম ঠেকাবে কে?
ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের টোকেন বাণিজ্য
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
সড়কের দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য দায়ী ইজিবাইক, ব্যাটারি রিকশা, টমটম ও অবৈধ থ্রি-হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা, হাইওয়ের আইন মোতাবেক রাস্তার উভয় পাশের অবৈধ স্থাপনাসহ হাট-বাজার সরিয়ে নেয়াসহ সাতদফা বাস্তবায়নের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট ডাক দিলেও মহাসড়কসহ বিভিন্ন স্থানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সিএনজি, থ্রি- হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। গতকাল রোববার সারাদেশের মতো কক্সবাজারে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারের ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে এইসব অবৈধ যানবাহন চলাচল অব্যাহত রয়েছে। খোদ ওই সভায় কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরী, জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ কর্মকর্তাসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, নির্দিষ্ট বাসস্ট্যান্ড থাকার পরও কক্সবাজারের কলাতলীসহ বিভিন্ন স্থানে সড়ক দখল করে বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনের ‘অঘোষিত’ বাসস্ট্যান্ড গড়ে তোলার বিষয় নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় ওই সভায়।
ওই অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান তার বক্তব্যে বলেন, কক্সবাজারে ঐতিহ্যগতভাবে রাস্তার উপর হাট বাজার বসানো হয়। বিশেষ করে গরুর বাজারগুলো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। তাই আগামী অর্থ বছর থেকে রাস্তার উপর থেকে সব বাজার সরানো হবে। এতে কমে আসবে দুর্ঘটনা।
তিনি আরো বলেন, চালকদের অদক্ষতা ও অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। তাই সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আগে নিজেদের সচেতন হতে হবে। মানতে হবে ট্রাফিক আইন। জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রশিক্ষণ ও প্রচারণা প্রয়োজন। এদিকে অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে বছরের পর বছর মহাসড়কজুড়ে এসব যানবাহন পরিচালনা করছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। প্রতিটি গাড়ি থেকে মাসোহারা তুলে প্রভাবশালী চক্রটি স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে। যেসব গাড়ি মাসোহারা দেয় না, সেসব গাড়ি পুলিশ দিয়ে ধরিয়ে দেয় প্রভাবশালী চক্রটি। অভিযোগ রয়েছে, মহাসড়কে গাড়ি চালাতে তাদের মাসিক কিংবা দৈনিক চাঁদা দিতে হয়। সমিতির মাধ্যমে এসব টাকা যায় স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশের পকেটে। টাকা না দিলে সমিতির লোকজন গাড়ি ধরিয়ে দেয় পুলিশকে। এদিকে থ্রি-হুইলার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন, করিমন বন্ধ ঘোষণার পরও মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ওইসব গাড়ি। স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে এসব যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এমন অভিযোগও উঠেছে, পুলিশকে ম্যানেজ করে ১৮ বছরের নিচে অনেক কিশোর টমটমসহ বিভিন্ন যানবাহন চালাচ্ছে। এদিকে গত ১৭ অক্টোবর রামু উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা মুস্তফা ১৮ বছরের নিচে কোনো ড্রাইভার পাওয়া গেলেই আটক করার ঘোষণা দেন। এটি বাস্তবায়নে মাঠে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশকে মৌখিক নির্দেশনাও দেন তিনি। একাধিক সিএনজিচালক দাবি করেন, তাদের কাছ থেকে শ্রমিক নেতারা পুলিশের নামে মাসিক টাকা নেয়। কাগজপত্র থাকার পরও রং পার্কিং-এর নামে মামলার কাগজ ধরিয়ে দেয়। মালিক বা চালককে গুনতে হয় দেড়, দুই হাজার টাকা।
অন্য একটি সূত্র বলছে, কক্সবাজার ট্রাফিক অফিস থেকে বিভিন্ন উপজেলায় শ্রমিক নেতা নামধারী কিছু লোক রাখা হয়েছে। তারা নাম্বারবিহীন সিএনজি থেকে মাসিক টাকা উত্তোলন করেন। এছাড়া কক্সবাজার শহরের ১০টি পয়েন্ট থেকে প্রতিদিন ট্রাফিক ও শ্রমিক নেতাদের নামে টাকা তোলা হয় বলে একাধিক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ভাই আমাদের হাত-পা বাঁধা’। গাড়ি ধরলেই রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহলের তদবিরে ছাড়তে হয়। এমনকি সাংবাদিকদের তদবিরও কম নয়। আমার কোন দিকে যাব?
গতকাল বিকালে এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা রিজিয়ন চট্টগ্রাম জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নাসিম খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মহাসড়কে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার গাড়ি মোটেও চলতে পারবে না। হয়তো বিশেষ প্রয়োজনের তাগিদে সাময়িক কিছু গাড়ি চলে। তিনি বলেন, প্রতিদিন হাইওয়ে পুলিশের অভিযান চলছে, আটক করে মামলাও দেওয়া হচ্ছে। আমি চট্টগ্রামে থাকি, সব তো আমার জানার কথা নয়। তবুও খোঁজ রাখব। টাকা লেনদেনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা। গতকাল সন্ধ্যায় অভিযোগের বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জসিম উদ্দীন চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, প্রায় সময় টোকেনের বিষয়টি শুনে আসছি। ওইসব টোকেনে মরিচ্যা, কোটবাজার লেখা থাকে। এই সব এলাকা ট্রাফিক বিভাগের নয়। ট্রাফিক বিভাগ থেকে বিভিন্ন উপজেলায় নাম্বারবিহীন (সিএনজি) গাড়ি থেকে টাকা উত্তোলন করার জন্য লোক রাখা হয়েছে, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, নানাভাবে বিষয়টি আমার কানে এসেছে। তবে কারা জড়িত, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।