মন্দিরে ভক্তদের ঢল
মহাঅষ্টমীতে মাতৃরূপে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
কুমারী বালিকার মধ্যে বিশুদ্ধ নারীর রূপ কল্পনা করে তাকে দেবী জ্ঞানে পূজা করেন ভক্তরা। অষ্টমীর দিন বিশেষ আকর্ষণ থাকে এ কুমারী পূজা। দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমীর দিনে গতকাল সকাল ১১টায় রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবার কুমারী মা হয়েছেন শতাক্ষী গোস্বামী। তার বাবার নাম শ্যামল গোস্বামী, মা রীতা গোস্বামী। রাজধানীর আফতাবনগরের নবেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী শতাক্ষী গোস্বামী। তার জন্ম ২০১৮ সালে। অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস- এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় ‘কুমারী’ মায়ের পূজা। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে চলে এই পূজা। অর্ঘ্য দেওয়ার পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর পুষ্পাঞ্জলি এবং প্রসাদ বিতরণ হয়। গতকাল সকাল ৬টা ১০ মিনিট থেকে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে শুরু হয় মহষ্টমীর পূজা। সকাল সাড়ে ১০টায় দেওয়া হয় পুষ্পাঞ্জলি। এরপর বেলা ১১টায় কুমারী মায়ের উন্মোচনের মাধ্যমে শুরু হয় কুমারী পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। পূজার কার্যক্রম শেষে কুমারী মায়ের নাম জানান রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের সন্নাসী স্বামী দেবধানন্দ্য। রামকৃষ্ণ মিশনে সকালে নবপত্রিকাস্নানসহ পূজার অন্যান্য রীতি পালনের পর বেলা ১১টায় যখন কুমারী পূজা শুরু হয়, তখন মণ্ডপের প্যান্ডেলে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। প্যান্ডেলে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দুটি প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় দেখানো হয় কুমারী পূজা।
হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা ব্রাহ্মণ বা অন্য গোত্রের অবিবাহিত কুমারী নারীকে দেবী জ্ঞানে পূজা করা হয়। শ্রী রামকৃষ্ণের কথামতে, কুমারী পূজার বিষয়ে বলা হয়েছে, শুদ্ধাত্মা কুমারীতে ভগবতীর রূপ বেশি প্রকাশ পায় এবং মাতৃরূপ উপলব্ধি করাই কুমারী পূজার উদ্দেশ্য। শাস্ত্রমতে, এক বছর বয়সি কন্যাকে সন্ধ্যা, দুইয়ে সরস্বতী, তিনে ত্রিধামূর্তি, চারে কলিকা, পাঁচে সুভাগা, ছয়ে উমা, সাতে মালনী, আটে কুজ্বিকা, নয়ে কালসন্দর্ভা, দশে অপরাজিতা, এগারোয় রুদ্রানী, বারোয় ভৈরবী, তেরোয় মহালক্ষ্মী, চোদ্দতে পীঠ নায়িকা, পনেরোতে ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোলো বছরে তাকে অন্নদা নামে অভিহিত করা হয়।
নির্বাচিত কুমারীকে মহাষ্টমীর দিন ভোরে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় পরানো হয়। তাকে সাজিয়ে কপালে সিঁদুর, পায়ে আলতা ও হাতে ফুল দেওয়া হয়। কুমারীকে সুসজ্জিত আসনে বসিয়ে ষোড়শো পাচারে (ষোলো উপাদান) দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয়। এ সময় চারদিকে শঙ্খধ্বনি, ঢাকের বোল, উলুধ্বনি আর দেবী স্তুতিতে মুখর হয়ে ওঠে।
কুমারী পূজার তাৎপর্য প্রসঙ্গে রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী পূর্ণাতমানন্দ বলেন, ‘আজ অনেক চিন্তাশীল মানুষ অনুভব করছেন, আধুনিক পৃথিবীতে সামাজিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সংকট নিরসন করে অগ্রগামী হতে হলে মাতৃজাতির প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। জগতের অনেক স্থানে নারীকে সম্মান দেওয়া হয় পত্নীরূপে বা সহকারিণীরূপে। কিন্তু নারীর সবচেয়ে মহিমময় রূপ তার মাতৃরূপ। তাই এই মহাষ্টমী তিথিতে আমরা জগতের সব মাতৃজাতিকে উদ্দেশ্য করে কুমারী মাতাকে প্রণাম জানাই। তার মাধ্যমে আধ্যাশক্তিকে আমাদের প্রণাম নিবেদন করি।’