ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও বিপুলসংখ্যক পর্যটক আর ভক্ত পূজারি দর্শনার্থীদের উপস্থিতিতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে হয়ে গেল দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন। রং ছিটানো, আতশবাজি ফুঁটিয়ে ঢাকঢোল বাজিয়ে বের করা হয় শোভাযাত্রা। ঘূর্ণিঝড় হামুনের ৬ নাম্বার বিপদ সংকেতের মধ্যে বিরূপ আবহাওয়া উপেক্ষা করে প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষ্যে সৈকতে সমাগম হয় পর্যটক আর পূজারিদের ঢল। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কখনো গুঁড়ি গুঁড়ি আবার কখনো ভারি বৃষ্টিপাত হয় কক্সবাজারে। সন্ধ্যায় নানা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য আর উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে সমাপ্ত হয় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন। এর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে দুর্গোৎসবের।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা মঙ্গলবার ছিল প্রতিমা বিসর্জন ও বিজয়া দশমী। সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে বিরহের সুর বেজে ওঠে। মা দেবী দুর্গা ফিরে গেলেন কৈলাসে সন্তানদের আশীর্বাদ করে। সকাল থেকে কক্সবাজার জেলার পূজামণ্ডপগুলোতে ভক্তদের মাকে বিদায় দেওয়ার অশ্রুসিক্ত শ্রদ্ধাঞ্জলি দিতে দেখা যায়। বিকাল ৩টার পর থেকে কক্সবাজারের বিভিন্ন মণ্ডপ থেকে প্রতিমা বহনকারী ট্রাকগুলো কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের দিকে আসতে থাকে। পুরো শহরজুড়ে নেয়া হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা।
কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে চলে প্রতিমা বিসর্জনের অনুষ্ঠান। সম্প্রীতি সভায় প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আজকের এই বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা আছেন, মুসলমান সমাজের প্রতিনিধিরা আছেন, সরকারের প্রতিনিধিরা আছেন। আমি এখানে যোগ দিয়েছি একজন বৌদ্ধ নাগরিক হিসেবে। এটাই বাংলাদেশ। এটাই শেখ হাসিনার অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এর বিপরীতে বাংলাদেশকে যারা বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করবে, এই হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান এক জাতি এক প্রাণ হিসেবে আমরা সকলেই সেই অপশক্তিকে, সেই অসুর শক্তিকে আমরা বধ করব। এটাই হোক আজকের অনুষ্ঠানের শপথ। তিনি বলেন, আজকে দেখলাম ঢাকের আওয়াজে দুর্গতিনাশনি দেবীকে বিদায় দেয়ার আয়োজন করেছি, আমরা সেই সমুদ্রের গর্জন শুনতে পাচ্ছি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে বলা হচ্ছে, সাইক্লোন হামুন আঘাত হানতে পারে। আমরা দুর্গতিনাশনি দেবীর কাছে এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এই মানব সমাজকে বাংলাদেশের নাগরিকে যাতে রক্ষা করে তার জন্য পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করি। আমি পরিষ্কার করে বলতে চাই, উৎসব কখন হয়, যখন আমরা সবাই মিলে জাতি-ধর্মণ্ডবর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থাকি। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজকে বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য, অগ্রগতির জন্য জাতি-ধর্মণ্ডবর্ণ নির্বিশেষে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় অধিকার ধর্ম চর্চার অধিকারকে তিনি আজকে সুরক্ষা দিয়ে গেছেন এবং দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে পবিত্র ঈদুল ফিতর যেভাবে উদযাপিত হয় একইভাবে শ্রীকৃষ্ণের জন্মষ্টামী উৎসব হয়। একই মর্যাদায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সেখানে অনুষ্ঠান হয়। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জন্য সেখানে বড়দিনের আয়োজন হয়। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তিনি ধার্মিক, কোনো ওয়াক্তের নামাজ কাজা করেন না। তিনি সকল সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সকল সম্প্রদায়ের মানুষকে তিনি একই দৃষ্টিতে দেখেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল, সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো. জিল্লুর রহমান, কক্সবাজারের পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান প্রমুখ।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জ্বল করের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, সামাজিক নেতাসহ নানা সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব। বিসর্জন মঞ্চ থেকে মন্ত্র উচ্চারণ শেষে সমুদ্রসৈকতে শুরু হয় বিসর্জন। এরপর একে একে পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় সাগর সৈকতে।