ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তায় এজিবি ইউনিট
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
অর্থের বিনিময়ে ঢাকস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও দূতাবাসের নিরাপত্তা দিতে শুরু করেছে আনসার বাহিনীর বিশেষায়িত গার্ড ব্যাটালিয়ন ইউনিট (এজিবি)। গত রোববার (২২ অক্টোবর) থেকে তারা কাজ শুরু করেছে।
জানা গেছে, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (ক্লোজ প্রটেকশন), চলাচল পথের নিরাপত্তা (ভেহিকুলার মুভমেন্ট) ও সড়কে সুরক্ষা (রুট প্রটেকশন) দিতে আনসার বাহিনীতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত এ ব্যাটালিয়ন দায়িত্ব পালন শুরু করেছে। দায়িত্ব পালনের আগে গত ১৫ ও ১৯ অক্টোবর দুই দিন এজিবি ইউনিটটি মার্কিন দূতাবাসে একটি ওরিয়েন্টেশন প্রশিক্ষণে অংশ নেন। গত ১১ অক্টোবর মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ একটি দল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শারীরিক নিরাপত্তা, ভেহিকুলার মুভমেন্ট ও রুট প্রটেকশনের দায়িত্ব এজিবি সদস্যদের মাধ্যমে নেওয়ার বিষয়ে সম্মত হন এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। এতে মার্কিন দূতাবাসের পক্ষে আঞ্চলিক নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং আনসার বাহিনীর পক্ষে একজন পরিচালক স্বাক্ষর করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর উপ-পরিচালক (প্রকল্প- প্রশিক্ষণ) গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান ১৬ জনের একটি টিম মার্কিন দূতাবাসে কাজ করছে। শুধুমাত্র মার্কিন দূতাবাসে এজিবি কাজ শুরু করেছে। অন্যদের বিষয়ে আলোচনা এখনও শুরু হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে যে নোট ভারবাল দিয়েছিল, সেভাবেই পেমেন্টের বিষয়টি নির্ধারণ করা হয়েছে।
সংকটকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষায়িত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আনসার বাহিনীতে আনসার গার্ড ব্যাটেলিয়ন (এজিবি) ইউনিট গঠন করা হয়। এ ইউনিটের সদস্যদের কুইক রেসপন্স প্রশিক্ষণ, স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ ও স্পেশাল প্রোটেকশন প্রশিক্ষণ, বিশেষ অস্ত্র ও ট্যাকটিক্যাল প্রশিক্ষণ কোর্সের মাধ্যমে অত্যন্ত দক্ষ আনসার সদস্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়।
এই বাহিনীকেই নিরাপত্তার জন্য নিয়োগের প্রস্তাব দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেই অনুযায়ী কোন দূতাবাস যদি অতিরিক্ত নিরাপত্তার জন্য প্রশিক্ষিত একজন আনসার সদস্যকে নিতে চায়, তাহলে মাসে ৩০০ মার্কিন ডলার বা ৩৩ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে) খরচ করতে হবে। দূতাবাসগুলো অতিরিক্ত নিরাপত্তার কাজে আনসার ব্যাটালিয়ন থেকে গাড়িও ভাড়া নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে একটি গাড়ির জন্য প্রতি মাসে ১ হাজার ডলার বা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। তবে শর্ত হলো, গাড়ির জ্বালানি খরচ দিতে হবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা সংস্থাকে। তবে দূতাবাস বা সংস্থাগুলোর বাইরে যদি কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট নিতে চায় তবে আনসার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তার ফি নির্ধারণ করতে হবে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এজিবির সদস্যদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দূতাবাসে টানা ছয় বছর দায়িত্ব পালন করারও অভিজ্ঞতা রয়েছে। এজিবির সদস্যরা দেশে-বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা ভারী অস্ত্র পরিচালনা করতেও সক্ষম।
আনসার বাহিনীতে বর্তমানে ৪২টি ব্যাটালিয়ন রয়েছে। এর মধ্যে দুটি নারী ব্যাটালিয়ন ও একটি গার্ড ব্যাটালিয়ন। ওই ব্যাটালিয়নটির নাম এজিবি। এজিবি মূলত ডিবির সোয়াত টিমের মতো বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। চট্টগ্রামে ১৬টি ব্যাটালিয়নের ৬ হাজার ২৪৪ জন সদস্য এককভাবে ৬০টি ক্যাম্প ও অন্য বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ১৮৬টি ক্যাম্পে দুর্গম এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ‘অপারেশন উত্তরণ’ এ কাজ করছে। সেখানে আঞ্চলিক সন্ত্রাসীদের দমন ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে। গহিন জঙ্গলে নিয়মিত শর্ট রেঞ্জ পেট্রোলিং (এসআরপি) ও লং রেঞ্জ পেট্রোলিং (এলআরপি) টহল প্রদান ছাড়াও আভিযানিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছে।
এছাড়া বর্তমানে আইসিডিডিআরবিতে এ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন। সরকারি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায়ও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে এজিবি। এই ব্যাটালিয়নে ৪১৬ জন সৈনিক এবং কর্মকর্তাসহ ৪২৫ জন জনবল রয়েছে। এছাড়া তাদের মতো প্রশিক্ষিত প্রায় ৩ হাজার জনবল রয়েছে। যাদের অন্য ব্যাটালিয়নে নিয়োজিত রাখা হয়েছে। এ ব্যাটালিয়নের (এজিবি) সদস্যরা দেশে-বিদেশে কুইক রেসপন্স ট্রেনিং (কিউআরটি), স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (এসটিটি) ও স্পেশাল প্রটেকশন ট্রেনিং, বিশেষ অস্ত্র এবং ট্যাকটিক্যাল ট্রেনিং নিয়েছেন। আনসারের কর্মকর্তারা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) ও র্যাবে প্রেষণে নিয়োজিত রয়েছেন। এছাড়া ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্যরা সচিবালয়, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও র্যাবসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তরে প্রেষণে কর্মরত থেকে নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন।