জবি ট্রেজারারের গাড়ি বিলাস!
ব্যক্তিগত কাজে মাসে লাখ টাকার বিল
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
জবি সংবাদদাতা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মেয়াদের আড়াই বছরে অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক নিজের বাড়ি পাবনায় গেছেন দুইবার। প্রতিবারই তিনি নিজের টাকায় তেল কিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে গেছেন। অথচ উল্টো চিত্র দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির ট্রেজারার কামালউদ্দিন আহমদের ক্ষেত্রে। প্রায় সাপ্তাহিক ছুটির দিনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি বাড়িতে ঘুরতে যান। তবে ট্রেজারারের জন্য জিপ গাড়ি বরাদ্দ থাকলেও এটি বাদেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য গাড়ি ব্যবহার করেন নানা স্থানে ঘুরেন তিনি। কিন্তু এসব গাড়ি ব্যবহার করে দেন না জ্বালানি খরচ। এমনকি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মেয়ের বিয়েতেও কয়েকটি এসি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন তিনি। ব্যক্তিগত কাজে গাড়ি ব্যবহার করলেও পরিবহণ কমিটির আহ্বায়কের প্রভাব খাটিয়ে কোনো বিল দেন না তিনি। এভাবে ট্রেজারার কামালউদ্দিনের গাড়ি বিলাসে প্রতি মাসে নিজের জিপ গাড়ির বাইরে অন্য গাড়ি ব্যবহারে লাখ টাকার উপরে ব্যক্তিগত বিল আসে। এভাবে ৪ বছর ধরে গাড়ি বিলাস করে গেছেন তিনি। এনিয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছে তীব্র সমালোচনার ঝড়। ট্রেজারার কামালউদ্দিনের গাড়ি ব্যবহারের কয়েক মাসের তথ্য এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মাসের ১৬ দিনই ট্রেজারার কামালউদ্দিন আহমদ নিজের জিপ গাড়ির বাইরে তিনটি এসি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে ২০২২ সালের ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এসি মাইক্রোবাস (গাড়ি নং- ঢাকা মেট্রো-চণ্ড৫৪-১৮০৮) সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত রামপুরা-এয়ারপোর্ট ও নিজের বাসা ধানমন্ডি ব্যবহার করেছেন। একই গাড়ি ১২ ডিসেম্বর ফের এয়ারপোর্ট, ১৮ ডিসেম্বর মগবাজার, ১৯ ডিসেম্বর খিলক্ষেত, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর নিজের বাসা ধানমন্ডি, ২২ ডিসেম্বর বাড্ডা নতুন বাজার নিয়ে গেছেন। এছাড়া একই মাসের ২০ ডিসেম্বের ট্রেজারার বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি এসি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রা-চণ্ড৫৪-১৭৭১) বাড্ডা, ২৩ ডিসেম্বর কুমিল্লার দাউদকান্দিসহ ঢাকার মালিবাগ, ধানমন্ডি বাসা এলাকায় ব্যবহার করেছেন। পরের দিন এই এসি মাইক্রোবাস ধানমন্ডি নিজের বাসাসহ এয়ারপোর্টে ব্যবহার করেন ট্রেজারার। অন্যদিকে আরেকটি এসি মাইক্রোবাস (ঢাকা মেট্রো-চণ্ড৫৪-১৬৫২) ট্রেজারার ১২ ডিসেম্বর নিজের বাসা ধানমিন্ড ও এয়ারপোর্টে ব্যবহার করেছেন। এ গাড়িগুলো ট্রেজারার তার নিজের জন্য বরাদ্দ জিপ গাড়ির বাইরে ব্যবহার করেছেন। অথচ উপাচার্য নিজের জিপ গাড়ি অফিস কাজের বাইরে ব্যবহার করলে নিজে তেল খরচ দিয়ে দেন।
অন্যদিকে সাবেক এক পরিবহণ প্রশাসক সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালের ২৩ জানুয়ারি ট্রেজারার কামালউদ্দিন আহমদ দুপুর ২টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি এসি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। একই মাসে মেয়ের বিয়েতে ২৯ জানুয়ারি ও ৩০ জানুয়ারি দুপুর ২টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি মাইক্রোবাস ব্যবহার করেন। ট্রেজারারের তিন দিনের পরিবহণ বিল দেয়ার সুপারিশ করেন সাবেক পরিবহণ প্রশাসক। তবে এসবের তোয়াক্কা করেননি তিনি বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহণ কমিটি আহ্বায়ক ট্রেজারার কামালউদ্দিন আহমদ। তার বিলের বিষয়ে ফের আলাপ করার জন্য নোট দেন পরিবহণ প্রশাসককে। পরে ট্রেজারারের বিল স্থগিত রেখে বাকিদের বিল কাটার জন্য সুপারিশ করেন। এর কিছুদিন পরেই সেই পরিবহণ প্রশাসক পরিবর্তন হয়ে যায়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্রাইভার সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি ছুটি নিয়ে ৩৮ দিন হজ্জে থাকাকালীন সময়ে ট্রেজারার কামালউদ্দিন আহমদের জিপ গাড়ি তার পরিবারিক কাজে ব্যবহার হয়েছে। নিজে ছুটিতে থেকেও গাড়ি পারিবারিক কাজে ব্যবহার হওয়া আইনগত বিরোধী বলে মন্তব্য করেন একাধিক শিক্ষকরা। এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্বদ্যিালয়ের সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. শওকত জাহাঙ্গীর বলেন, ঘটনা যদি এমন ঘটে তবে তা নীতি বিরুদ্ধ। অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়কে অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে পরিবহন প্রশাসক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, ঘটনাটি বেশ আগের। সাবেক পরিবহণ প্রশাসকের সময়ের। আর শুধু মাত্র ভিসি এবং ট্রেজারার তাদের নিজেদের জন্য গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন কিন্তু পারিবারিক কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ নেই।
সাবেক পরিবহণ প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ঘটনাটা মনে আছে। সেই সময়ে এই বিষয়টি বাকি রেখেই ফাইল ছাড়া হয়। তবে পরিবহন অফিস পাওনা টাকা পাবে কারণ এটা পরিশোধ না হলে সে যেই হোক আটকে যাবে পরে। সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদকে গত দুই দিন ধরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।