ঢাকা ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও গণগ্রন্থাগার খুলছে কাল

দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় সমৃদ্ধ হবে সাংস্কৃতিক অঙ্গন
চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও গণগ্রন্থাগার খুলছে কাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধনের দিনই আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামবাসীর। একই দিন উদ্বোধন করা হবে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হল ও বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার প্রকল্পের নতুন অবকাঠামো। নির্মাণ প্রকল্প কাজ শেষ ভাগে থাকলেও প্রধানমন্ত্রী দুটি প্রকল্পের কাজ উদ্বোধন করবেন। এটি সংস্কার করে পরিধি বাড়ানোর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মীসহ সব মহলের। অবশেষে সেই স্বপ্ন এখন বাস্তবরূপ লাভ করছে। ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের অধীনে আগের জরাজীর্ণ ঐতিহ্যবাহী মুসলিম হল ভেঙে করা হয়েছে আটতলা নতুন ভবন। এর সঙ্গে লাগোয়া পুরোনো গণগ্রন্থাগার (পাবলিক লাইব্রেরি) ভেঙে করা হয়েছে ১৫ তলা ভবন। দুটি স্থাপনাই এখন নগরীর অন্যতম দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় পরিণত হয়েছে।

নির্মাণকাজে জড়িত প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুসলিম হল ও গণগ্রন্থাগার আগের অবকাঠামো থেকে সম্পূর্ণ পরিবর্তন করা হয়েছে। ব্যবহারকারীদের ধারণ ক্ষমতাও বেড়েছে বহুগুন। বর্তমান সরকারের হাতে নেওয়া সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের আওতায় নতুন নির্মিত আটতলা মুসলিম ইনস্টিটিউটে ৯০০ আসনের মিলনায়তন এবং ৩৫০ আসনের মিনি অডিটরিয়াম আছে। দুটি সেমিনার কক্ষই থাকছে একটি ১০০ ও অপরটি ২০০ আসনের। থাকবে একটি আর্ট গ্যালারি ও স্যুভেনির শপ। অডিটরিয়াম ও সেমিনার কক্ষগুলোর কাজ শেষের পথে। বাকি কাজগুলো শেষ করতে খুব বেশি সময় ব্যয় হবে না।

বিভাগীয় গণগ্রন্থাগার সম্পর্কে জানা যায়, ১৯৬৩ সালে ইনস্টিটিউটে স্বল্প পরিসরে গণগ্রন্থাগারের কার্যক্রম শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকে মুসলিম ইনস্টিটিউট হলের পাশেই পাবলিক লাইব্রেরির বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। সেই সময় থেকে পুরোনো ভবনটি ব্যবহার হয়ে আসছে বড় ধরনের সংস্কার ছাড়াই। প্রকল্পের আওতায় এখন নবনির্মিত ১৫তলা পাবলিক লাইব্রেরি ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে পৃথক ৯টি পাঠাগারে মোট দেড় হাজার পাঠক বসে পড়তে পারবেন। আছে একটি বড় ও একটি ছোট সেমিনার হল। এছাড়া আইসিটি লাইব্রেরি, রেস্ট হাউজ ও ডরমেটরিও থাকছে। আগের অবকাঠামোই এত সুবিধা ছিল। এক সাথে আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক পাঠক বসতে পারবেন লাইব্রেরিতে।

জানা গেছে, চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট হলের পরিধি বাড়িয়ে সংস্কার। সেই দাবি স্বপ্ন এখন বাস্তব রূপ লাভ করছে। শতবর্ষী এই হলের উন্নয়নকাজ এখন শেষের পথে। পাশাপাশি ৬০ বছর বয়সি বিভাগীয় সরকারি গণগ্রন্থাগার সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স পাচ্ছে নতুন রূপ। এটি সংস্কার করে বাড়ানো হয়েছে পরিধি। একটি প্রকল্পের অধীনে গণগ্রন্থাগারটির উন্নয়ন করা হয়েছে। এরপর এখন গ্রন্থাগারটি ফিরছে নতুন রূপে। বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধনের সময় এই দুটি স্থাপনার নতুন রূপে উদ্বোধন হলেও গ্রন্থাগারের পুরো কাজ শেষ হতে আগামী জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। বেশ কিছু কাজ বাকি রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে নির্মাণাধীন এ কমপ্লেক্সের কাজ প্রায় শেষের দিকে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। প্রকল্পের অধীনে পুরোনো শহীদ মিনারের আদল ঠিক রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন শহীদ মিনার ও উন্মুক্ত গ্যালারি। সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স থেকে ২১ ফুট উঁচু পথ ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে শহীদ মিনারে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স উদ্বোধন হতে যাওয়ায় খুশি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক সংগঠকরা। তারা মনে করছেন দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হওয়ার মাধ্যমে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গন আরো সমৃদ্ধ হবে। প্রসার ঘটবে সাংস্কৃতিক চর্চার। গণপূর্ত বিভাগের দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জানান, প্রকল্প কাজ পরিকল্পিতভাবেই করা হয়েছে। এখন উদ্বোধন উপলক্ষ্যে বাহিরের সজ্জার কাজ চলছে। পুরো প্রকল্পের মোট কাজের অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ। প্রকল্পের কাজ শতভাগ শেষ করতে আগামী জুন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এরপর এসব স্থাপনা উন্মুক্ত করে দেয়া হবে ব্যবহারের জন্য।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অনেক আগেই ১৯২৫ সালে চট্টগ্রামের কিছু সংস্কৃতি ও সমাজসেবীর উদ্যোগে চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্রে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই হিসাবে এটির বয়স এখন প্রায় শত বছরের কাছাকাছি। দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন হয়েছে এখানে। ১৯৫৯ সালে সরকার মুসলিম ইনস্টিটিউট অধ্যাদেশের মাধ্যমে হলটি অধিগ্রহণ করে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, হলের অনেক পরিবর্তন হয়েছে নতুন প্রকল্পে। ১৫তলা লাইব্রেরি ভবনের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। লাইব্রেরি ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার কাজ পুরোপুরি শেষ। সেখানে গত জুলাই থেকে সীমিত পরিসরে দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। নির্মাণকাজ শুরুর সময়ে সরিয়ে নেওয়া বইপত্রও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কাজ শেষ হলে পাঠকরা আরো বেশি সুবিধা নিয়ে গ্রন্থাগার ব্যবহার করতে পারবেন।

এই প্রকল্পের কাছে আমুল পরিবর্তন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও। চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলোচিত এ প্রকল্পের আওতায় শহীদ মিনার ও সংলগ্ন গ্যালারিও প্রস্তুত। আগামী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ফিরবে বলে আশা করা হচ্ছে। চট্টগ্রামে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আমরা আনন্দিত দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হচ্ছে দেখতে পেয়ে। বর্তমান সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন তার উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এসব প্রকল্প। আমরা আশাবাদী এতে সংস্কৃতি চর্চার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভালো মানের সুপরিসর মিলনায়তন ও মহড়া কক্ষের, যা এখান হয়েছে। নির্মাণকাজ সম্পর্কে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে শুরু সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল শুরুতে প্রায় ২৩২ কোটি টাকা। চট্টগ্রামবাসীর শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে এ সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় বাস্তবায়নকারী সংস্থা গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর। বর্তমানে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ কোটি টাকা। প্রকল্পে এখন পর্যন্ত প্রায় ২১৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। তবে শেষ পর্যায়ে থাকা এ প্রকল্প ব্যয় আর বাড়বে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত