বঙ্গবন্ধু টানেল হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের অর্থনীতি ও যোগাযোগের ‘নতুন দ্বার’
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল বদলে দেবে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের অর্থনীতির চিত্র। টানেল ঘিরে গড়ে উঠা শিল্প-কারখানা থেকে বাড়বে আয়। হবে এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান। বঙ্গবন্ধু টানেল জাতীয় প্রবৃদ্ধিতে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী পদক্ষেপে পরিবর্তন আসবে পর্যটন শহর কক্সবাজারের অর্থনীতিতে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায়। বিশেষ করে সুযোগ-সুবিধা বাড়বে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পার্শ¦বর্তী এলাকা আনোয়ারা ও বাঁশখালীসহ আশপাশের এলাকার মানুষের। টানেল চালুর ফলে আনোয়ারা, বাঁশখালি থেকে সর্বোচ্চ পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যাওয়া যাবে। অথচ দূরত্বের কারণে ফ্লাইট মিস হওয়া ছিল লোকজনের নিত্য দুর্ভোগের ঘটনা। সহজে আনোয়ারা হয়ে বাঁশখালী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া চলে যেতে পারবে মানুষ।
অভিজ্ঞ মহল বলছেন, টানেল চালু হওয়ার পর দূরপাল্লার গাড়ি, পণ্যবাহী গাড়িসহ গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে। যার কারণে বাঁশখালী থেকে পেকুয়া-কক্সবাজার মহাসড়কের মতো গাড়ির চাপ বেড়ে যাবে। সেজন্য ওই সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য হাইওয়ে পুলিশের স্থায়ী থানা প্রয়োজন।
গতকাল বিকালে এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা রিজিয়ন চট্টগ্রাম জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. নাসিম খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের উদ্যোগকে স্বাগতম জানিয়ে বলেন, এইটি নিশ্চয় এ সরকারের যুগান্তকারী উদ্যোগ। যার ফলে যোগাযোগব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটবে। আনোয়ারা ও বাঁশখালিসহ আশপাশের এলাকায় যাতে যানজট না হয়, সেই জন্য হাইওয়ে পুলিশের দৃষ্টি থাকবে। বাঁশখালি এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের একটি নতুন থানা হচ্ছে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি এই বিষয়ে অবগত নয় বলে দাবি করেন। তবে অন্য একটি সূত্র বলছে, চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কক্সবাজারের মহেশখালী ও মেরিনড্রাইভ রোডে হাইওয়ে পুলিশের নতুন তিনটি থানা হবে সহসাই।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে কক্সবাজার নাগরিক আন্দোলন সদস্য সচিব এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইনের পর কর্ণফুলী টানেল নির্মাণে চট্টগ্রাম শহরসহ সারা দেশের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের তথা কক্সবাজার-টেকনাফ পর্যন্ত যোগাযোগব্যবস্থার সহজতর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। মূলত কর্ণফুলী টানেলকে ঘিরে উন্মোচিত হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার। কর্ণফুলী টানেলকে কাজে লাগাতে পারলে এগিয়ে আসবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী গড়ে তুলা সম্ভব হবে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান।
যার ফলে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা বদলে যাবে। তবে সড়ক দুর্ঘটনা আর যানজটমুক্ত রাখতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মিনিমাম ফোর লেন সড়কে উন্নত করতে হবে মনে করে তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকালে বাঁশখালীর বাসিন্দা ও কক্সবাজার সদর মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. কাইছার হামিদ জানান, টানেল চালু ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। আশপাশের এলাকার আমূল পরিবর্তনে দেশের চেহারা বদলে যাবে। সেই সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে রীতিমত বৈপ্লবিক পরিবর্তন হবে।
তিনি আরো বলেন, একসময় বাঁশখালী থেকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর যেতে সময় লাগতো দেড় ঘণ্টা। টানেল চালুর কারণে পৌনে ১ ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে। তিনি বর্তমান সরকারের যুগান্তকারী এই উদ্যোগকে স্বাগতম জানান।
আনোয়ারা বাসিন্দা আবদুস সালাম বলেন, টানেল দেশের উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে। বিশেষ করে আনোয়ারার পারকি সৈকত ঘিরে পর্যটন শিল্পের আরো বেশি প্রসার হবে। চট্টগ্রাম শহর থেকে সহজে পর্যটকরা পারকি সৈকতে চলে আসতে পারবেন। পর্যটক বাড়লে বাড়বে রাজস্ব আয়। একই সঙ্গে তা আনোয়ারা উপজেলায় উপশহর গড়ে তোলার দুয়ারও খুলে দেবে।
সিডিএর মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন কমিটির সদস্য সুভাষ চন্দ্র বড়ুয়া বলেন, একজন নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পূরণের মতো সুযোগ থাকতে হয় একটি উপ-শহরে। টানেল এর কারণে সহজেই আনোয়ারা উপশহর হবে। বর্তমানে সিইউএফএল, কাফকো, ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানি, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন ও পারকি সৈকত রয়েছে আনোয়ারায়। টানেলের কারণে এসব সমৃদ্ধ হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, টানেল দিয়ে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করতে কক্সবাজারে নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণের চিন্তা চলছে। এতে চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন আসবে। জাতীয় অর্থনীতে টানেলের ইতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ড. মইনুল ইসলাম আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, মিরসরাই থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ রোড নির্মাণ হচ্ছে। ২০২৬ সালে এটির নির্মাণ শেষ হচ্ছে। মেরিন ড্রাইভ সড়কের পাশে টানেল কেন্দ্রীক প্রচুর শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। এতে দেশের অর্থনীতিতে দ্রুত পরিবর্তন আসবে। বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, টানেল কেন্দ্রীক অর্থনীতির ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে বলা যায়, অর্থনীতি ও শিল্প উন্নয়নে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম নগরী ও আশপাশে থেকে সারা বছরই লোকজন ছুটেন আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকতে। টানেল খুলে দিলে সহজে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে থেকে লোকজন পারকি সৈকতে যেতে পারবেন। মানুষ বেশি আসলে বেচাকেনা বাড়বে, চট্টগ্রামশহর থেকে পারকি সৈকতের বর্তমান দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। তবে টানেলের আনোয়ারা পয়েন্ট থেকে পারকির দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। এ কারণে টানেল চালুর কারণে সহজে পর্যটকরা চট্টগ্রাম থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যেতে পারবেন।