রাজধানীর খাজা টাওয়ারে আগুন
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ব্যাপক ক্ষতি বিপাকে ৪০ শতাংশ ব্যবহারকারী
প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মহাখালীর খাজা টাওয়ারে গত বৃহস্পতিবার বিকালে আগুন লাগার ঘটনায় বড় ক্ষতি হয়েছে ব্রডব্যান্ড (উচ্চগতি) ইন্টারনেট সেবায়। মোবাইল ইন্টারনেট ও ভয়েস কলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে তা ব্রডব্যান্ডের তুলনায় কম। দেশে বর্তমানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে অন্তত ৪০ শতাংশ তথা প্রায় ৫০ লাখ ব্যবহারকারী বিপাকে পড়েছেন। তারা এরইমধ্যে ইন্টারনেট সেবার বাইরে চলে গেছেন। আর যারা পাচ্ছেন তারমধ্যে অনেকে ধীরগতির ইন্টারনেট পাচ্ছেন। অপরদিকে দেশের মোট মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার। তবে তারমধ্যে ২০ শতাংশ তথা প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহক ইন্টারনেট পাচ্ছেন না। ভয়েস কলেও তারা ঝামেলা পোহাচ্ছেন। ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপসহ অন্যান্য অ্যাপনির্ভর যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সমস্যা হচ্ছে।
জানা গেছে, বাসা-বাড়ি, অফিস, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। ফ্রিল্যান্সিং আউটসোর্সিংয়ের সঙ্গে জড়িতরাও ঘরে বসে ব্রডব্যান্ড ব্যবহার করে ফ্রিল্যান্সিং করছেন। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখা হয় এর গতি, ল্যাটেন্সি ইত্যাদির কারণে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র সভাপতি এমদাদুল হক জানান ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আমাদের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হলে আমরা বলতে পারতাম যে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। দ্রুত ইন্টারনেট সেবা চালু করতে আমাদের কী কী প্রয়োজন। যেসব ডিভাইস পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো বিকল্প জোগাড় করতে হবে। প্রয়োজনে বিমানে করে সেগুলো আনতে হবে। আমাদের যত দ্রুত ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হবে তত দ্রুত আমরা সমাধান দিতে পারব। তিনি বলেন, এ মুহূর্তে সারা দেশের মোট ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৪০ শতাংশ এখন ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে না।’ তিনি জানান, খাজা ভবনে দুটি ডাটা সেন্টার ছিল। এনআরবি নামেরটি পুড়ে গেছে আর ঢাকা কোলা নামের অপর ডাটা সেন্টারটি কী অবস্থায় আছে- তা না দেখে এখনই ক্ষয়ক্ষতির কথা বলা যাবে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, খাজা টাওয়ারে অবস্থিত আইআইজিগুলোর (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) মধ্যে নয় থেকে ১০টি প্রতিষ্ঠান শাটডাউন হয়ে গেছে। একটি আইআইজি থেকে অন্তত ৫০-৭০টি আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ব্যান্ডইউথ নিয়ে থাকে। ফলে একটি বিপুল সংখ্যক আইএসপি (৫০০-৭০০) এখন ইন্টারনেট সেবা দিতে পারছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইআইজি ফোরামের মহাসচিব আহমেদ জুনায়েদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘কয়েকটি আইআইজি (লেভেল থ্রি, ম্যাক্স হাব, আমরা নেটওয়ার্কস, আর্থনেট, ভার্গো, ও উইনস্ট্রিম ইত্যাদি আইআইজি) পুরোপুরি শাটডাউন হয়ে গেছে। বড় দুই একটি আইআইজি ব্যাকআপে চলে যাওয়ায় ভোগান্তির হার কিছুটা কম হবে।’
জানা যায়, দেশের মোবাইল অপারেটরগুলোকে ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করে থাকে লেভেল থ্রি, সামিট কমিউনিকেশন্স, ফাইবার অ্যাট হোম ও আমরা নেটওয়ার্কস। এরমধ্যে আমরা নেটওয়ার্কস আইআইজি পুরোপুরি বসে গেছে। লেভেল থ্রি পুরোপুরি বসে গেলেও এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি ৯৫ শতাংশ ব্যান্ডউইথ ব্যাকআপে চলে গেছে। ফলে মাত্র ৫ শতাংশ ব্যান্ডউইথে সমস্যা হচ্ছে লেভেল থ্রির। অন্যদিকে সামিট কমিউনিকেশন্স ও ফাইবার অ্যাট হোম ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়ায় তাদের ব্যান্ডউইথ সরবরাহ ঠিকঠাক রয়েছে। অন্য দুটি আইআইজির কারণে মোবাইল ইন্টারনেটে ২০ শতাংশ গ্রাহক বিপাকে পড়েছেন। তবে মোবাইল অপারেটরগুলোর ইন্টারকানেক্টিভিটিতেও সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। আইসিএক্সগুলো (ইন্টারকানেকশান এক্সচেঞ্জ) খাজা টাওয়ারে হওয়ায় মোবাইল কলে (ভয়েসে) গ্রাহকরা সমস্যায় পড়েছেন। ভয়েস কল করতে সমস্যা হচ্ছে, দীর্ঘ সময় লাগছে কল জেনারেট হতে, কল কেটেও যাচ্ছে।
যদিও এই বিষয়ে মোবাইল অপারেটরগুলোর সংগঠন এমটব এই বিষয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, রাজধানীর মহাখালীতে বহুতল ভবন খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে মোবাইল অপারেটদের একে অপরের মধ্যে ভয়েস কলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়েছে। ওই ভবনে ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট আইসিএক্স অপারেটরদের সহযোগিতায় মোবাইল অপারেটররা দ্রুততম সময়ের মধ্যে আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থা অন্যত্র পুনঃস্থাপনের জন্য কাজ করছে। আমরা আশা করি দ্রুতই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে।
আইএসপিএবির সাবেক সভাপতি আমিনুল হাকিম জানান, ‘খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে সব মিলিয়ে ৫ শতাধিক কোটি টাকার ক্ষতি হয়ে থাকতে পারে। এরমধ্যে আইআইজিগুলোর ক্ষতির পরিমাণ ৩০০-৩৫০ কোটি টাকার মতো। তিনি আরো বলেন, ‘যেসব ডিভাইস পুড়ে গেছে বা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে সেগুলো ঠিক করা যাবে না। অপরদিকে বাজারে ডিভাইসের ঘাটতি আছে। বাজারে সরবরাহেও ঘাটতি আছে। ফলে কতদিনের মধ্যে এগুলো সংগ্রহ করা যাবে তার ওপর নির্ভর করছে সমস্যার সমাধান।