অতিপরিচিত এক ভেষজ উদ্ভিদ থানকুনি। খেতের ধারে, পুকুরপাড় কিংবা ডোবার পাশে বেড়ে ওঠা এই উদ্ভিদের রয়েছে বহু গুণ। থানকুনির পাতা ক্ষত সারাতে, পেটের অসুখ দূর করতে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে এমনকি সৌন্দর্য চর্চায় প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বর্তমান সময়েও বিশ্বখ্যাত প্রসাধনী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিউটি ক্রিমে থানকুনি পাতার ব্যবহার করে আসছে।
সৌন্দর্য চর্চায় থানকুনি পাতা : ১. থানকুনি পাতায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আর উচ্চমানের অ্যামাইনো অ্যাসিড রয়েছে। তাই থানকুনি পাতার নির্যাসসমৃদ্ধ সৌন্দর্যপণ্য ক্লান্ত ভাব দূর করে আমাদের ত্বককে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। থানকুনির অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি (প্রদাহরোধী) উপাদান ব্রণের বিস্তৃতি কমায়। শুধু তা-ই নয়, ব্রণের দাগ দূর করতে থানকুনির নির্যাস দারুণ উপকারী।
২. ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ : থানকুনিতে থাকা প্রচুর পরিমাণে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং সক্রিয় উপাদান ম্যাডেকাসসাইড অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কাজ করে। এতে দূষণ ও সূর্যের রশ্মির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক অকালে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। শুধু তাই নয়, এটি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং কোলাজেনের উৎপাদন বাড়ায়। ত্বকের বলিরেখা রোধ করতে এবং নমনীয়তা বাড়াতে কোলাজেন একটি অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।
৩. ত্বকের জ্বালাপোড়া এবং ক্ষত দূর : থানকুনির ম্যাডেকাসসাইড ত্বকের জ্বালাপোড়া দূর করে এবং ক্ষত সারাতে সাহায্য করে। ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বককে ভেতর থেকে ঠান্ডা ও প্রশান্ত করে। এতে ত্বকে সতেজভাব ফুটে ওঠে।
৪. ত্বকের আর্দ্রতা ও কোমলতায় : থানকুনির অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিটা ক্যারোটিন, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে ত্বক থাকে কোমল এবং ত্বকে বয়সের ছাপ কম দৃশ্যমান হয়।
৫. চুল পড়া রোধ : চুল পড়া নিরোধকারী পণ্যে অনেক সময় থানকুনির নির্যাস ব্যবহার করা হয়। এর অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
থানকুনি পাতা কীভাবে ব্যবহার করবেন : থানকুনির নির্যাস নানাভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। প্রতিদিন জুস বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে পাকস্থলী ও মস্তিষ্কের সুস্থতার পাশাপাশি ভেতর থেকে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। চাইলে থানকুনির রস বরফ করে ত্বকে ঘষতে পারেন। এছাড়া রয়েছে থানকুনির নির্যাসসমৃদ্ধ বিভিন্ন সৌন্দর্যপণ্য, যেমন : ফেসওয়াশ, ময়েশ্চারাইজার, সিরাম, টোনার, সানস্ক্রিন ইত্যাদি। এগুলোও ব্যবহার করা যেতে পারে সৌন্দয চর্চায়। এছাড়া থানকুনি পাতায় থাকা প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মুখের ঘা দূর করে, সর্দির জন্য উপকারী, পেটের অসুখে থানকুনির জুস বেশ কার্যকর। আমাশয়ের পাশাপাশি কাশি ও গলাব্যথায় থানকুনি পাতার ভেষজগুণ অতুলনীয়।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে থানকুনির ব্যবহার : প্রতিদিন এক গ্লাস দুধে পাঁচ থেকে ছয় চা-চামচ থানকুনি পাতার রস মিশিয়ে খেলে চেহারায় লাবণ্য দেখা দেবে; একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও বাড়বে। সকালে খালি পেটে থানকুনি পাতার রস খেলে যেমন উপকার মিলবে, তেমনই কাঁচা থানকুনি পাতা চিবিয়ে খেলেও সমান উপকার পাওয়া যাবে।