নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষিত
পদ্মা ও মেঘনায় কারেন্টজালে আটকা পড়ছে প্রচুর মা ইলিশ
প্রকাশ : ৩১ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শওকত আলী, চাঁদপুর
চাঁদপুরে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা-মেঘনা নদীতে শিশু-কিশোরদের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে মা ইলিশ নিধন করা হচ্ছে। চাঁদপুর নৌ-সীমানার পদ্মা ও মেঘনায় প্রচুর মা ইলিশ রয়েছে বলে জেলেদের ধারনা। নদীতে কারেন্ট জাল ফেলা মাত্র প্রচুর মা ইলিশ জালে আটকা পড়ছে। জেলেদের ভাষায় বর্তমানে নদীতে জাল ফেলা মাত্র প্রচুর মা ইলিশ জালে আটকা পড়ছে। তারা জানান মা ইলিশ লোনা পানি থেকে ডিম ছাড়ার জন্য পদ্মা-মেঘনা নদীর মিঠা পানিতে এসেছে। কারেন্ট জাল ফেলে কেউ খালি হাতে ফিরছে না।
ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে সরকার ঘোষিত ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান চললেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অবাধে মা ইলিশ শিকারে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নের জেলেরা।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২২ দিন ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও জেলেরা কিছুতেই তা মানছে না। এই ২২ দিনের জন্য বরাদ্দকৃত চাল সব জেলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এরপরও জেলেরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে।
সরেজমিন, চাঁদপুর নৌ-সীমানায় গিয়ে দেখা যায়, হাইমচর ও নীলকমল ইউনিয়নে শিশু-কিশোর ও বয়স্ক ব্যক্তিরা দিনভর নদী থেকে মাছ শিকার করছে এবং স্থানীয় বাংলাবাজার মাঝেরচর ও সাহেবগঞ্জ বাজারে প্রকাশ্যে ইলিশ মাছ বিক্রি করছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রকাশ্যে মাছ ক্রয়-বিক্রিতে লিপ্ত হয়ে পড়ছে।
মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের শুরু থেকেই নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ড অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযানের প্রতিদিনই জেলেদের আটক ও জরিমানা করা হচ্ছে। তার পরও অসাধু জেলেরা আইন-কানুন কিছুতেই মানছে না। আইন অমান্য করে প্রতিদিনই নদী থেকে মা ইলিশ শিকার করে থাকে।
হাইমচর কালীখোলা ঘাটে আড়তদার আহসান বেপারি (৬৭) বলেন, আমি একজন আড়তদার হয়েও ইলিশ মাছ সংরক্ষণ ও বিক্রি করা বন্ধ রেখেছি। তবে অনেক প্রভাবশালী আছে যারা এ সময় প্রকাশ্যে মাছ কিনছে এবং সংরক্ষণ করে রাখছে অভিযানের পরে যাতে বেশি লাভে বিক্রি করতে পারে।
আহসান বেপারি আরো বলেন, প্রতিবছর যখন ইলিশের অভিযান শুরু হয় তখন হাইমচর, নীলকমল ও ইউনিয়নের অনেক যুবক যারা ঢাকায় থাকে, এই সময় তারা গ্রামে চলে আসেন এবং দিনরাত নদী থেকে ইলিশ মাছ শিকার করেন। প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করে থাকে তারা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার কারণ জানালেন হাইমচর নীলকমল ইউনিয়নের এক জেলে।
তিনি বলেন, ২২ দিনের অভিযানে জেলেদের জন্য ২৫ কেজি চাল বরাদ্দ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে জেলেরা পাচ্ছেন ১৮ থেকে ২০ কেজি চাল। এ সামান্য চাল দিয়ে জেলেদের সংসার চালানো সম্ভব না। তাই তো জেলেরা জীবন রক্ষার্থে ঝুঁকি নিয়ে নদীতে মাছ শিকারে নামে। উপজেলা টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে সর্বত্র সতর্ককরণ ফেস্টুন লাগিয়ে জেলেদের সতর্ক করে দেওয়া হয়। এ সর্তক হচ্ছে, ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত ইলিশ মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। ইলিশ সম্পদ রক্ষার স্বার্থে এবং সকলকে সহযোগিতার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়। এই আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে এক বছর এবং সর্বোচ্চ দুই বছরে সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। এরপরও আইন অমান্য করে প্রকাশ্যেই জেলেরা অবাধে মা ইলিশ শিকার করে যাচ্ছে। জেলেরা জানান, একবার জাল ফেললে ৩-৪ মণ ডিমওয়ালা ইলিশ জালে আটকা পড়ে।