ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় সংসদে ইসরাইলি গণহত্যার নিন্দা প্রস্তাব

মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

বিএনপি নাছারা পার্টি : স্বপন
মুসলিম উম্মাহকে একত্রিত হওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

‘ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও এই গণহত্যা বন্ধের জোর দাবিতে একটি প্রস্তাব’ জাতীয় সংসদে গৃহিত হয়েছে। গত রাতে সংসদ অধিবেশনে ১৪৭ বিধিতে এ প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এ সময় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্ব করেন।

নিন্দা প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ফিলিস্তিনে অনবরত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, বিশেষ করে নারী- শিশু তারা সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা অনেক মানবাধিকারের কথা শুনি, অনেক কিছুই শুনি কিন্তু সেখানে প্যালেস্টাইনের জনগণ অমানবিক কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। সেখানে ইসরাইলের আক্রমণ বিশেষ করে নারী শিশু তাদের ওপর হামলা। আমার আহ্বান থাকবে মুসলিম বিশ্বের সবাই এক হয়ে তারা যেন এই অন্যায়, অপরাধের প্রতিবাদ করে এবং ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পায়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবচেয়ে জঘন্য কাজ হচ্ছে যে আল আহলে আল আরাব ব্যাপটিস হাসপাতাল। এই হাসপাতালে সেখানকার নারী শিশু, বিশেষ করে মায়েরা সন্তানদের নিয়ে মনে করেছিল এখানে তারা নিরাপদ থাকবে, অনেকেই ওখানে আশ্রয় নিয়েছিল। আর চিকিৎসাধীন ছিলই সেখানেই তারা বিমাল হামলা, বোম্বিং এবং নারী শিশুকে হত্যা করে। জঘন্য একটা ঘটনা ঘটিয়েছে এর নিন্দা করার ভাষা নেই। হাসপাতালে হামলা নিন্দা জানাচ্ছি। হাসপাতালের মতো জায়গায় কী করে তারা হামলা করতে পারল। শিশুরা বড় হলেই নাকি যোদ্ধা হয়ে যায়, তাই তাদের শেষ করে দেওয়া। অন্তঃস্বত্তা নারীদের হত্যা করা হয়েছে আমি কিন্তু যেখানেই গেছি এর প্রতিবাদ করেছি। এই ধরনের ঘটনা আমরা কখনই মেনে নিতে পারি না। এর আগে ৯৫ সালে হেবরণে হামলা করেছিল। তখন আমরা বিরোধী দলে ছিলাম, আমরা সংসদে আলোচনা করতে চেয়েছিলাম কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় ছিল আলোচনা করতে দেয়নি। আমরা সংসদ থেকে বেরিয়ে চলে গিয়েছিলাম। আমরা ফিলিস্তিনে এরই মধ্যে শুকনো খাবার পাঠিয়েছি। সব থেকে দুর্ভাগ্য হলো- খাবার, ওষুধ কোনো কিছুই দিতে দিচ্ছে না। যে কোনো যুদ্ধে হাসপাতাল নারী, শিশুর ওপর এভাবে হামলা হয় না। আজকে খাদ্য, পানি সব কিছু বন্ধ করে দিয়ে অমানবিক যন্ত্রণা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, অন্তত সেখানে সেবা খাতটা খোলা হোক; যাতে ওখানকার মানুষ বাঁচতে পারে। সেবা খাতটাই তার বন্ধ করে দিয়ে কষ্ট দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকারের কথা বলা হয় অথচ এখানে যে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, এটা বন্ধ করতে হবে। সেখানে এই মানবাধিকার লঙ্ঘন বা হত্যা হলে আমরা তার প্রতিবাদ করি, এটাই আমাদের নীতি। আমাদের নীতি সবার সাথে বন্ধুত্ব কারো সাথে বৈরিতা নয়, কিন্তু ইসরাইল যে ঘটনা ঘটাচ্ছে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর, এটা কখনো মেনে নেওয়া যায় না। ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য দাবি যেন মেনে নেওয়া হয়, তাদের রাষ্ট্র তারা যেন ফিরে পায়। এখানে সেবার খাতটা খুলে দেওয়া উচিত। এইভাবে শিশুদের কষ্ট দেওয়া, এটা কখনই আমরা গ্রহণ করতে পারি না।

আমির হোসেন আমু বলেন, ফিলিস্তিনে ইসরাইল যে নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে, তার নিন্দা জানানোর কোনো ভাষা নেই। অথচ আজ যারা আমাদের মানবাধিকারের ছবক শেখায়, তারাই ইসরাইলকে অস্ত্র-অর্থ দিয়ে সহায়তা করছে। মানবাধিকার হরণ করছে।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে ছিলেন। বাংলাদেশ সব সময় নির্যাতন-গণহত্যার বিরোধিতা করে আসছে। আমরা নিরীহ ফিলিস্তিনি মা ও শিশুদের গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন বলেন, ইসরাইল গোটা বিশ্বের কাছে একটি অমানবিক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত ফিলিস্তিনে মানুষের অধিকার হরণ করছে। নির্বিচারে বোমা বর্ষণ করছে, শিশু হত্য করছে। এ হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। আমরা বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মুসলমান স্বাধীনতার পর থেকে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব নেতাদের মধ্যে প্রথম ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি ফিলিস্তিনিদের জন্য ওষুধ পাঠিয়েছেন, মানবিক সহায়তা পাঠিয়েছেন। অথচ যারা মানবতার কথা বলে, তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলে না। বরং ইসরাইলকে সমর্থন করছে সেই দেশ। আবার সেই ইসরাইলকে সমর্থন করে একটি কথাও বলছে না দেশের নামধারী মুসলিম দল বিএনপি-জমায়াত। বংলাদেশের লোক বিএনপির নাম দিয়েছে নাছারা পার্টি। এ পার্টি ফিলিস্তিনির পক্ষে কথা বলে না।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম জাতিসংঘকে জোরাল ভূমিকা নিয়ে ইসরাইলকে এই গণহত্যার দায়ে দোষি সাব্যস্ত করে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের দাবি জানান। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা বিরোধিতা করেছিল তারাই ফিলিস্তিনে এই ইসরাইলের গণহত্যাকে সমর্থন করছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে আইসিসি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে আইসিসি কোনো কথা বলছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটাকে সমর্থন দিয়ে ভূমধ্যসাগরে যুদ্ধের জাহাজ পাঠাচ্ছে। অবাক বিষয় হলো, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো কোনো কথা বলছে না। এমনজি তারা জাতিসংঘকেও মানছে না।

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, গাজায় ৮ হাজারেরও বেশি নারী-শিশু মারা গেছে, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এমনকি সেখানে হাসপাতালে হামলা চালানো হয়, সেই হামলায় অনেকে মৃত্যুবরণ করেছে। আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, পৃথিবীর একটি শক্তিধর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান সেখানে (ইসরাইল) গেলেন। সেখানে গিয়ে নেতানিয়াহুর সাথে কোলাকুলি করলেন। এবং হামাসের নিন্দা করলেন কিন্তু হাসপাতালে হামলা ও নারী-শিশু হত্যার নিন্দা সেখানে তিনি করলেন না।

তিনি বলেন, গাজায় হাসপাতালে হামলার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে মিছিল করা নিষিদ্ধ করেছে। তারা বারবার মুক্ত গণমাধ্যম, মুক্তমত এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলে। যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেনের কাছে মানুষ চিঠি লিখেছে- আমাদের ট্যাক্সের টাকা তুমি কেন ইসরাইলকে দিচ্ছ। যারা গণতন্ত্রের ছবক দেয়, মানবাধিকারের কথা বলে, তারা এখন নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে আছে, কোনো বক্তব্য রাখছেন না।

তিনি বলেন, ইসরাইলের এজেন্ট সাফাদি নিজে গণমাধ্যমের সামনে স্বীকার করেছে সে আসলাম চৌধুরী নয়, তারেক রহমানের সাথেও সে মিটিং করেছে। বিএনপি-জামায়াত আজ ইসরাইলের পক্ষ নিয়েছে, ইহুদিদের পক্ষ নিয়েছে। এরা মানবতার শত্রু। শুধু ইসরাইল মানবতার শত্রু নয়, শুধু নেতানিয়াহু মানবতার শত্রু নয়, তারাও আজকে মানবতার শত্রু হিসেবে দাঁড়িয়েছে। হাছান মাহমুদ বলেন, ইসরাইল গাজার হাসপাতালে হামলা করেছে। সেটির বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কোনো কথা বলেনি। বরং তার অনুকরণে পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। অ্যাম্বুলেন্সসহ ১৯টি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, সারা বিশ্ব ফিলিস্তিনের পক্ষে আর একা যুদ্ধরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে। সেই একই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে যুদ্ধের সময় রাজাকারদের পক্ষে ছিল। সুতরাং, বদলায়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চরিত্র। বাংলাদেশে গণতন্ত্র উদ্ধারের নামে মুখোশধারী বিএনপি পুলিশ হত্যা করেই চলেছে। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষ এ হত্যাকে সমর্থন করে যাচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনী অত্যাচার- নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তারা পবিত্র আল অকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। যুদ্ধে এরই মধ্যে ৮ হাজারের মতো নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী-মিশু মারা গেছে। বহু মানুষ আহত। ১১ লাখ মানুষকে সরিয়ে নিতে হচ্ছে। গত ২ সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ, পানি গ্যাস বন্ধ করে ইসরাইল এক নারকীয় ঘটনা ঘটিয়েছে। পুরো ফিলিস্তিন যেন একটি জলন্ত কারাগার। ইসরাইল ন্যূনতম যুদ্ধের নিয়মনীতিও মানছে না।

এ নিন্দা প্রস্তাবের ওপর আরো আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ, ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, দলটির চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙা, তরিকত ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডারী, আওয়ামী লীগের আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত