ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

কান্ট্রি কার্ড স্কিম ‘টাকা-পে’ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী

নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ দেশের উন্নয়ন ও রাজস্ব সংগ্রহ সহজ করবে

নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ দেশের উন্নয়ন ও রাজস্ব সংগ্রহ সহজ করবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা উন্নয়নকে ত্বরান্বিত এবং রাজস্ব সংগ্রহ সহজ করবে। বাংলাদেশের নিজস্ব কান্ট্রি কার্ড স্কিম ‘টাকা-পে’ উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সকালে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যখন আমরা একটি নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ গড়ে তুলতে পারব, তখন এটি দুর্নীতি হ্রাস, দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত এবং রাজস্ব আদায় সহজ করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর লক্ষ্যে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও স্বাধীন ও সার্বভৌম হতে হবে।

প্রতিটি কার্ডধারীর তথ্য নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি এই নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভালোভাবে সুরক্ষিত থাকবে। বিশেষ করে ফায়ারওয়াল ফুলপ্রুফ তৈরিতে আমাদের বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, এই ‘টাকা-পে’ কার্ডটি বাংলাদেশে নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ গঠনের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে।

সরকারপ্রধান আরো বলেন, ‘আমরা অন্য কারো ওপর নির্ভরশীল হব না। আমরা আমাদের অর্থ আমাদের দেশেই ব্যবহার করব। আমরা এই সিস্টেমটিকে অন্য দেশের সাথে সংযুক্ত করার চেষ্টা করব। আমাদের অবশ্যই একটি হার্ড কারেন্সির ওপরও নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি), সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংক ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়।

টাকাপে কার্ডটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহযোগিতায় বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ইস্যু করছে।

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন বিবি গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার।

বিবি’র নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক ‘টাকাপে’ জাতীয় কার্ড প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম, ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন এবং সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন তাদের অফিসে টাকাপে কার্ডের ব্যবহার এবং এটিএম থেকে অনলাইন পেমেন্ট ও টাকা উত্তোলন প্রদর্শন করেন যেখানে ব্যবহারকারীরা সেবা গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ এই প্রথম স্থানীয় মুদ্রা কার্ড টাকাপে উদ্বোধন করে আজ আমি খুবই খুশি।

জনগণ যে কার্ডগুলো ব্যবহার করছে তা বিদেশি সংস্থাগুলো দ্বারা পরিচালিত হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কার্ড ব্যবহারের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন তবে ‘এই টাকাপে কার্ড ব্যবহার করার ক্ষেত্রে আর কোনো বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করতে হবে না।’ শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে টাকা-পে কার্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন চালু করার পরিকল্পনাও ব্যক্ত করেন।

নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘হার্ড কারেন্সির (কাগজের টাকা) উপর নির্ভর করা করা আমাদের লক্ষ্য ছিল না এবং আমরা আজ তা করতে পেরেছি।’

তিনি নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে ব্যাংকিং পরিষেবার আওতায় আনার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। এ প্রসঙ্গে সরকার প্রধান বলেন, দেশের সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মনোযোগী হওয়ার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, নগদ লেনদেনবিহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যাংকিং খাতে সেবা যাতে আরও স্বচ্ছ হয় সেদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে।

সরকার প্রধান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে এবং জনগণকে হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করতে বলেছেন, যাতে তারা তাদের দৈনন্দিন জীবনের অর্থ প্রদানে কোনো ঝামেলা ছাড়াই এই টাকাপে কার্ডটি সহজেই ব্যবহার করতে পারে।

প্রথম স্থানীয় মুদ্রা কার্ড ‘টাকাপে’র লক্ষ্য হলো ভিসা, মাস্টারকার্ডও আ্যামেক্সের মতো আন্তর্জাতিক কার্ডের উপর নির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ করা।

ভিসা এবং মাস্টারকার্ড হলো অর্থ প্রদানের নেটওয়ার্ক যা ব্যাংক বা অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাগুলোর মধ্যে তহবিলের বৈদ্যুতিক স্থানান্তরকে অনুমতি দেয়।

তারা ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড এবং প্রিপেইড কার্ডগুলোর জন্য ব্র্যান্ডেড পেমেন্ট প্রসেসিং পরিষেবা প্রদান করে যা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের গ্রাহকদের এই সুবিধা দিতে পারে।

‘টাকা-পে’ প্রাথমিকভাবে বিবি পরিচালিত একটি ইলেকট্রনিক পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ন্যাশনাল পেমেন্ট সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয়ভাবে একই পরিষেবা প্রদান করবে। বিদেশি ব্যাংক এবং প্রতিষ্ঠান এই প্ল্যাটফর্মের সাথে অংশীদার হওয়ার পর এটি বিদেশে ব্যবহার করা যেতে পারে।

প্রাথমিকভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভ্যন্তরীণ ব্যবহারের জন্য কার্ড চালু করবে এবং পরে টাকা-রুপি কার্ড চালু করবে। কার্ডের মাধ্যমে গ্রাহকরা ভারতে লেনদেন করতে পারবেন।

অন্যান্য ব্যাংকগুলো শিগগিরই সোনালী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংককে ধীরে ধীরে অনুসরণ করবে।

বিবি’র কর্মকর্তারা শুরু থেকেই বলেছেন, দেশের সব এটিএম, পয়েন্ট অফ সেলস এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই কার্ড ব্যবহার করা যাবে। শুরুতে ডেবিট কার্ড হিসেবে ব্যবহার করা হলেও ভবিষ্যতে ‘টাকা-পে’ ক্রেডিট কার্ডও আসবে। টাকা-পে কার্ডে উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিকভাবে ব্যাংকগুলো পাইলট ভিত্তিতে টাকাপে কার্ড চালু করবে এবং কার্ডটি তৈরি করেছে ফরাসি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘ফাইম’। টাকা পে কার্ডটি বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমিয়ে দেবে, কারণ বিদেশি কোম্পানিগুলোর পরিষেবা চার্জ হিসেবে একটি ভালো পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত