ইলিশ ধরতে নদীতে নামতে চলছে জেলেদের প্রস্তুতি
আজ মধ্যরাতে উঠে যাচ্ছে নিষেধাজ্ঞা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চাঁদপুর প্রতিনিধি
আজ দিবাগত রাত ১২টায় উঠে যাচ্ছে পদ্মা-মেঘনা নদীর অভয়াশ্রম এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা। মা ইলিশ নিরাপদে মিঠাপানিতে ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে ১২ অক্টোবর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার খবরে চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের জেলেরা ব্যস্ত হয়ে উঠছে। তারা ইলিশ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। জেলেরা আশা করছেন তারা প্রচুর ইলিশ পাবেন। গতকাল সকালে শহরের যমুনা রোড টিলবাড়ী, মোলহেড, সদর উপজেলায় পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর ও ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের মেঘনা পাড় এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে জেলেদের মাছ ধরার প্রস্তুতি। জেলেরা তাদের জালগুলো প্রস্তুত করছেন। ইব্রাহীমপুর ইউনিয়নের সাখুয়া গ্রামের জেলে আবদুল মালেক জানান, যখন নদীতে মাছ আহরণ নিষেধ থাকে, তখন তিনি জেলেদের জাল মেরামত করার কাজ করেন। আবার নদীতে নামবে জেলেরা। তাই ভোর থেকেই জাল মেরামত করার কাজে ব্যস্ত। বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে তিনি এখন আর নদীতে নামেন না। দৈনিক হাজিরায় জাল মেরামতের করেন।
পার্শ্ববর্তী রামদাসদী গ্রামের জেলে মো. আকবর খান জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে অভিযান দিয়েছে, তা আমরা মানছি। আমরা নদীতে নামি নাই। এখন আল্লাহ যদি কিসমতে রাখে তাহলে ইলিশ পাব। আর না পেলে ঋণের মধ্যে থাকতে হবে।
আরেক জেলে মো. শাহজাহান জানান, নিষেধাজ্ঞার কারণে কিছুদিন অবসরে ছিলাম। সরকার যে ২৫ কেজি করে চাল দিয়েছে তা পেয়েছি। তবে এই দিয়ে তো আমাদের সংসার চলে না। এখন আবার ইলিশ ধরার জন্য জালগুলো প্রস্তুত করছি। এদিকে মা ইলিশ সংরক্ষণের শেষ পর্যায়ে একশ্রেণির জেলেরা থেমে ছিল না। তারা প্রতিদিনই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইলিশ ধরেছে। নৌ-পুলিশ, জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্সের অভিযানে আটক হয় জেলেরা। জেলা-জরিমানা করা হলেও তারা মানেনি। জেলেরা ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা করেছে। সর্বশেষ ২৬ অক্টোবর সদরের বহরিয়া এলাকায় ইলিশ কেনাবেচার সময় হামলার শিকার হয় চাঁদপুর সদর মডেল থানার দুই পুলিশ সদস্য। এই ঘটনায় তিনজন আটক ও থানায় মামলা হয়েছে।
নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল। অভিযানে গিয়ে আমাদের বেশকিছু পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। ইলিশ মাছ নিরাপদে ডিম ছাড়লে জেলেরাই আহরণ করবে। তাদের প্রতি অভিযানের আগেই সচেতন করা হয়, কিন্তু নিষেধাজ্ঞা না মেনে অহরহ ইলিশ ধরতে নদীতে নেমে পড়েন জেলেরা। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান জানান, মা ইলিশ রক্ষায় জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ৪১৫টি অভিযান পরিচালনা করেছেন। মৎস্য আইনে নিয়মিত মামলা ও ৬২টি ভ্রাম্যমাণ আদালতে ২৮৪ জন জেলেকে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। আমরা দিন ও রাতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি। মা ইলিশ রক্ষা হলে জেলেদেরই লাভ হবে। তারাই পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ আহরণ করবে।