প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে গতকালও কক্সবাজারের টেকনাফে এসেছে মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রতিনিধি দল। এবার রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের যাচাই-বাছাই করেছে তারা। এরপর বিকালে মিয়ানমারে ফিরে যান প্রতিনিধি দল। গতকাল বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল টেকনাফ আসে। প্রতিনিধি দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। একটি দল রোহিঙ্গাদের ৮০টি পরিবারের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম করে এবং আরেকটি দল ১০০টি পরিবার প্রধানের সঙ্গে প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনা করে। পরে সন্ধ্যায় তারা কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়া মিয়ানমারে ফিরে যায়।
তিনি জানান, গতকাল সকাল সাড়ে ৮টায় নাফ নদী পাড়ি দিয়ে মিয়ানমারের ২৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল ফের টেকনাফ ট্রানজিট জেটিঘাটে পৌঁছায়। এ সময় তাদের স্বাগত জানানো হয়। এরপর তাদের সড়ক ও জনপথ বিভাগের সরকারি রেস্ট হাউজে আনা হয়। সেখানে রোহিঙ্গাদের ৬০টি পরিবারের যাচাই-বাছাই কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেন তাদের সঙ্গে। কথা বলা শেষে বিকালে ফিরে গেছে প্রতিনিধি দলটি। পরে উভয় দেশের মধ্যে প্রত্যাবাসন ইস্যুতে দ্রুত সময়ের মধ্যে আবারো আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত মঙ্গলবার তৃতীয় দফায় টেকনাফ আসে মিয়ানমারের ৩৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল। ওই সময় মিয়ানমার প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন রাখাইন প্রাদেশিক সরকারের ইমিগ্রেশন ডিরেক্টর স নাইং। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমারবিষয়ক সেলের মহাপরিচালক মিয়া মো. মাইনুল কবির। এ সময় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত আরআরআরসি মো. সামছুদ্দৌজাসহ এপিবিএন পুলিশের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যাবাসন চুক্তির পর, ২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর ও ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট দিনক্ষণ ঠিক হলেও তা ভেস্তে যায় মিয়ানমারের ছলচাতুরিতে। এরপর চলতি বছর চীনের মধ্যস্থতায় নতুন করে আলোচনায় আসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। তিন দফায় দেশটির প্রতিনিধি দল আসলেও প্রশ্নের মুখেই রয়েছে মিয়ানমারের অবস্থান। এর আগে চলতি বছর দুইবার মিয়ানমার প্রতিনিধি দল আসে টেকনাফে। গত ১৫ মার্চ প্রথম দফায় এবং গত ২৫ মে দ্বিতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মতবিনিময় করতে মিয়ানমার প্রতিনিধি এসেছিলেন। এরই মধ্যে গত ৫ মে বাংলাদেশের ৭ সদস্য এবং রোহিঙ্গাদের ২০ সদস্যের প্রতিনিধি দলও মিয়ানমারের মংডুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলেন।
২০১৮ সালে কয়েক দফায় ৮ লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ। তারমধ্যে মাত্র ১ লাখ ১ হাজার রোহিঙ্গার তালিকা ভেরিফাই করে মিয়ানমার সরকার। কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয়রত রয়েছেন। কিন্তু গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি মিয়ানমার।