ঢাকা ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উখিয়া রেঞ্জে অধিকাংশ বনভূমি বেদখল

‘উচ্ছেদ হয় ঝুপড়ি নির্মাণ হয় অট্টালিকা’

* জড়িত বন কর্মকর্তা-কর্মচারী * মামলা দিয়ে দায় সারে বনবিভাগ
‘উচ্ছেদ হয় ঝুপড়ি নির্মাণ হয় অট্টালিকা’

কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের আটটি বনবিটের অধিকাংশই সংরক্ষিত বনভূমি বেদখল হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট বনবিভাগের বিট কর্মকর্তা, প্রহরী ও হেডম্যানদের ম্যানেজ করে নির্মাণ করা হচ্ছে একের পর এক বহুতল ভবন। তবে দায় এড়াতে মাঝেমধ্যে ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদ করে থাকেন সংশ্লিষ্টরা। গতকাল উখিয়া রেঞ্জের দোছড়ি বিটের খয়রাতিপাড়া এলাকায় দুটি টিনের ঘর দখল মুক্ত করে বনবিভাগ। উখিয়া সদর ও দোছড়ি বিটের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামান অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। যদিও একই বনাঞ্চলের আশপাশে অসংখ্যা স্থাপনা ও বহুতল ভবন নিমার্ণ অব্যাহত রয়েছে। ফলে গতকাল এই ঝুপড়ি ঘর দুইটি উচ্ছেদ নিয়ে প্রশ্ন করেছে স্থানীয় লোকজন। তাদের জানিয়েছে, যেই এলাকায় উচ্ছেদ করা হয়েছে, তার আশপাশে হাজারো পাকা বাড়িঘর রয়েছে। কিন্তু বনবিভাগের লোকজনদের ম্যানেজ করার কারণে তা উচ্ছেদ বা তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না। একই রেঞ্জের বনবিভাগের আওতাধীন পরশীলের ছড়া, শৈলার ডেবা, ধইল্লা ঘোনা, হাজম রোড, আদর্শ গ্রাম, কুতুপাল, পাতাবাড়ী, ভালুকিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্যা বহুতল ভবন নির্মাণ অব্যাহত থাকতে দেখা গেছে। যেখানে ভালুকিয়াপালং আমতলীতে দ্বিতলবিশিষ্ট একটি ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। বাড়িটির মালিক কে জানতে চেষ্টা করা হলেও কথা বলতে রাজি নন স্থানীয়রা। তবে এক ব্যক্তি বলেছেন, বনবিভাগ ভালো জানেন কারা এটা নির্মাণ করেছেন। একইভাবে রাজাপালং ইউনিয়নের হরিণমারা, কুতুপালং, থাইংখালী ও পালংখালী স্টেশনের মাঝামাঝি এলাকায় রাস্তার পাশেই দেখা গেছে পাকা স্থাপনা নির্মাণের দৃশ্য।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানান, উখিয়ায় যেখানে বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু সেখানেই কালা সোনা নামক ব্যাক্তি হাজির। বনবিভাগকে ম্যানেজ করার কথা বলে আদায় করে মোটা অঙ্কের টাকা। এবং তাকে ম্যানেজ না করলে ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের লোক এসে ডিস্টার্ব করে। কালা সোনার সব কার্মকাণ্ডে উখিয়া রেঞ্জের সদর বিট কর্মকর্তা সাজ্জাদুজ্জামান, মুন্সী আওয়াল ও কালাম জড়িত।

অভিযোগের বিষয়ে গতকাল বিকালে উখিয়া রেঞ্জের সদর ও দোছড়ি বিট কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অপকটে স্বীকার করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদেরও সীমাবদ্ধ আছে। তবুও পাতাবাড়ী এলাকায় অট্টালিকা নির্মাণকারী জনৈক অশোক কুমারের বিরুদ্ধে দুইটি মামলা দেয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী মুহাম্মদ শফিউল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি দখলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, নতুন করে এখন দখল হচ্ছে না।

তিনি বলেন, অট্টালিকা নির্মাণের তথ্য থাকলে দেন। দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উখিয়া রেঞ্জ এ আটটি বনবিটে কি পরিমাণ সরকারি জমি বেদখল রয়েছে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি স্থানীয়দের দখলের বিষয়ে পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও রোহিঙ্গাদের কারণে ৫ হাজার ৮৩৬ একর জমি বেদখল রয়েছে বলে দাবি করেন। তার কর্মকালীন সময়ে দখলবাজদের বিরুদ্ধে সাড়ে ৩ হাজার মামলা দায়ের করেছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

গতকাল কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সারওয়ার আলমের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তাকে না পেয়ে সন্ধ্যায় কক্সবাজারে সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. আনিসুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সুনিদিষ্ট তথ্য দেন, ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, বন রক্ষার্থে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর আলোকে এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। তিনি উখিয়া একটি দখলের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, দখলবাজের বিরুদ্ধে ২০১৭ সাথে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালতের রায়ের পর কয়েক দিন আগে তা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি বন রক্ষার্থে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত