বিগত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি) তে ২৫০ জনের কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ২-৩হাজার রোগীকে অর্থসীস অর্থাৎ এসেসটিভ ডিভাইস বা যাদের হাত-পা বাঁকা থাকে, হাটতে পারেনা তাদেরকে এধরণের ডিভাইস দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে এসব তথ্য জানিয়েছেন সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)’র কৃত্রিম হাত ও পা সংযোজন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুহানুল নেয়াজ ইমরান।
তিনি জানান, রাস্তাঘাটে আমরা অনেক ধরনের মানুষ দেখতে পাই। যাদের অঙ্গহানি, যারা স্ক্র্যাচের মাধ্যমে হাঁটছে অথবা হুইল চেয়ারে আবার অনেকে ভিক্ষাও করে। বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণে, অসুস্থ্যতার কারণে যাদের পা কেটে ফেলতে হয়, পরবর্তীতে তারা কোথায় গিয়ে কৃত্রিম পা লাগিয়ে নতুন করে আবার সে পুনরায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে, আর কোথায় সেটা তৈরি করা হয় এই বিষয়টি অনেকেরই অজানা। এ ধরনের রোগীগুলো কোথায় যাবে? কোথায় গিয়ে কৃত্রিম পা লাগাবে? সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে যারা আছেন, তারা যেন আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেন। আর সিআরপিতে যে কৃত্রিম হাত-পা সংযোজন করা হয় সেই ম্যাসেজটা যেন রোগীকে পৌঁছে দেন। কারণ, কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে রোগীরা প্রাথমিকভাবে নিকটস্থ হাসপাতালেই চিকিৎসা নিয়ে থাকে। হাত কিংবা পা যদি কেটেই ফেলতে হয় তাহলে তারা যেন সিআরপিতে রেফার্ড করে দেন।
তিনি আরো জানান, রোকসানা আক্তার নামের এক নারীর দুই পা দুর্ঘটনার পর কেটে ফেলে দেওয়া হয়। তিনি এখন সিআরপিতে চিকিৎসা নিচ্ছেন এবং তার দুটি কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়েছে। এখন সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে।
সিআরপিতে কথা হয় রোকসানা আক্তার নিপুর সাথে। তিনি জানান, ময়মনসিংহের গৌরিপুরে তার বাড়ি। ২০২২ সালের মে মাসের ২১ তারিখ বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার পথে রোড এক্সিডেন্টে তার পা দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ময়মনসিংহ হাসপাতালে তিন দিন থাকার পর ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার দুই পায়ে ইনফেকশন হওয়ার কারণে দুটি পাই কেটে ফেলতে হয়, যা হাঁটুর উপর থেকেই কেটে ফেলতে হয় পা। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সিআরপিতে আসেন। এখানে এসে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এখন সিআরপিতেই তার জন্য পা সংযোজনের সব প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে এবং দুটি কৃত্রিম পা দিয়ে তিনি স্বাভাবিকভাবেই হাঁটতে পারেন। পাশাপাশি তিনি সিআরপিতে এখন বাসকেট বলও খেলছেন। দুটি কৃত্রিম পা সংযোজনের জন্য সিআরপি ৫৫ হাজার টাকা বহন করে এবং বাকি মাত্র ৬ হাজার টাকা তিনি খরচ করেছেন।
তিনি জানান, সিআরপি যেন তাকে অভ্যর্থনা বা রিসিপশনিস্ট পদে চাকরি দেন। তাহলে হয়তো পরবর্তী সময়টুকু ভালোভাবেই কাটাতে পারব। কারণ, দুই পা না থাকায় তার স্বামী তাকে ছেড়ে দিয়েছেন।
সিআরপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, সিআরপি না থাকলে হয়তো তিনি স্বাভাবিক হতে পারতেন না। কৃত্রিম পা পড়লেই যেন মনে হয় তিনি আগের মতো পা দিয়েই হাঁটছেন।
রোকসানা আক্তারের ব্যাপারে সাভার পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র (সিআরপি)’র কৃত্রিম হাত ও পা সংযোজন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সুহানুল নেয়াজ ইমরান বলেন, তার দুটি কৃত্রিম পা সংযোজন করা হয়। সে এখন সম্পূর্ণভাবেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। এদিকে, আজ আন্তর্জাতিক প্রস্থেটিক্স অ্যান্ড অর্থোটিকস দিবস উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করবে সিআরপি।