ঢাকা ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মসলার গ্রাম কুষ্টিয়ার বড়িয়া

১০০ কৃষকের ভাগ্যবদল তদারকিতে কৃষি অফিস

১০০ কৃষকের ভাগ্যবদল তদারকিতে কৃষি অফিস

সবুজে অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা কুষ্টিয়া সদর উপজেলার বড়িয়া গ্রামটি এখন মসলা গ্রাম হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে। বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়া গ্রামটির মধ্য দিয়ে চলে গেছে পাকা পিচ ঢালা রাস্তা। কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগের উদ্যোগে প্রায় ৫ কিলোমিটার সেই রাস্তার দুই পাশে লাল-সবুজ প্লাস্টিকের বেড়া দিয়ে ঘেরা খাঁচার মধ্যে সারিবদ্ধভাবে ২ হাজার তেজপাতা ও দারুচিনি গাছ রোপণ করার মধ্য দিয়ে এটি মসলা গ্রাম খাতি পেয়েছে। আমদানিনির্ভরতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে সরকারি প্রণোদনায় কুষ্টিয়ায় এই মসলা গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে। এছাড়াও গ্রামের বাসিন্দাদের বাড়ির আশে পাশের পরিত্যক্ত জায়গায় ও পতিত জমিতে ব্যাগে চাষ করা হচ্ছে হলুদ ও আদা। এছাড়াও পেঁয়াজ, রসুন, ক্যাপসিকাম, গোলমরিচ, জিরা, চুইঝালসহ ১৩ পদের মসলা চাষ হচ্ছে। ওই গ্রামের গৃহিণী জহুরা বেগম বলেন, আমাদের গ্রামের রাস্তার দুই পাশে ও বাড়ির আশপাশে পরিত্যক্ত জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মসলার গাছ লাগানো হয়েছে। এসব গাছ দেখতে অনেক সুন্দর লাগে। মসলার দাম অনেক বেশি, এইসব মসলা গাছ থেকে যখন মসলা উৎপাদন হবে, তখন আমরা খুব উপকৃত হব। আমাদের গ্রামে মসলা চাষের উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। রাশিদুল ইসলাম জানান, সদর কৃষি অফিসের তদারকিতে রাস্তার দুই পাশে তেজপাতা ও দারুচিনি গাছ লাগানো হয়েছে। দিনমজুর হিসেবে আমি রাস্তার পাশে মসলার গাছ লাগিয়েছি। মাঝেমধ্যে পানি দেয়ার দায়িত্বও আমার। এই গ্রামের অনেক বাসিন্দাদের বাড়ির আশপাশের পড়ে থাকা জমিতে আদা, হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের মসলার চাষ শুরু হয়েছে। এসব চাষবাস সরকারি খরচে হচ্ছে। বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়া গ্রামটি এখন মসলার গ্রামে পরিচিত পেয়েছে। স্থানীয় আজিমুদ্দিন বলেন, প্রায় ২ মাস আগে উপজেলা কৃষি অফিসে ট্রেনিং করেছি। আমার মতো এই গ্রামের ১২০ জন ওই ট্রেনিং করেছে। সবাইকে দুইবেলা খাবার ও ১ হাজার ৩০০ টাকা করে দিয়েছে কৃষি অফিস। প্রায় ১ মাস আগে মসলার গাছ লাগানো হয়েছে। এই গ্রামটা এখন মসলার গ্রাম হিসেবে পরিচিত পেয়েছে। সাইদুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, কৃষি অফিসের মাধ্যমে আমার বাড়ির পাশের পতিত জমি পরিষ্কার করে জিও ব্যাগের মধ্যে আদা ও হলুদের চাষ করেছি। এখান থেকে আমরা লাভবান হতে পারব ইনশাআল্লাহ। আমাদের কোনো খরচ নেই, সবকিছু সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে। কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে এগুলো তদারকি করা হয়। আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। গ্রামের রাস্তার পাশে মসলার গাছ লাগানো হয়েছে। মসলা উৎপাদিত হলে আমাদের এলাকার চাহিদা মিটবে।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৌতম কুমার শীল জানান, সরকারি প্রণোদনায় বড়িয়া-ভাদালিয়াপাড়া গ্রামে বিভিন্ন ধরনের মসলার চাষ হচ্ছে। মসলার উন্নত জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় সারা দেশে এই একটি গ্রামকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পাঁচ বছরের প্রকল্পে যুক্ত হয়েছেন ১০০ কৃষক পরিবার। মসলা বীজের নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে এই গ্রামকে গড়ে তোলার মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানিনির্ভরতা কমানোই এ প্রকল্পের লক্ষ্য। আগামী ৩ বছর পর এই গ্রামের কৃষকরা এখান থেকে পুরোপরি লাভ পেতে শুরু করবেন।

মসলা উৎপাদনের পাশপাশি চারা বিক্রি করতে পারবেন। এভাবে সারা দেশে মসলার চাষাবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরো জানান, এসব মসলা বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা হয়। সেই খরচ সাশ্রয় করাই মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশ মসলার উৎপাদনে পিছিয়ে আছে। এই চাষ বাড়ানো নির্ভর করছে এ গ্রামের সফলতার ওপর। গ্রামের সবাই সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে পারবে, সেই চিন্তা থেকে সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত