যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ

গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলায় ৫১ জন নিহত

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলার প্রায় এক মাস পর গতকাল হামাসকে নির্মূল করার অভিযানের তীব্রতা আরো বাড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস বলেছে, গাজায় ইসরাইলি বোমা হামলায় ডজন ডজন লোক নিহত হয়েছে।

৩০ দিনের যুদ্ধের পর আরব দেশগুলো এবং ক্ষুব্ধ বেসামরিক নাগরিকদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ঘনবসতিপূর্ণ গাজায় ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে।

গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সর্বশেষ আক্রমণে গত শনিবার গভীর রাতে মধ্য গাজার আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বোমা হামলায় ৫১ জন নিহত হয়েছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, শিশুরা মারা গেছে এবং বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।

তুর্কি আনাদোলু এজেন্সির জন্য কর্মরত একজন সাংবাদিক মোহাম্মদ আলাউল বলেছেন, ‘একটি ইসরাইলি বিমান আল-মাগাজি ক্যাম্পে আমার প্রতিবেশীদের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালায়, এতে আমার পাশের বাড়ি আংশিকভাবে ধসে পড়ে।’ আলাউল জানান, তার ১৩ বছর বয়সি ছেলে আহমেদ এবং তার ৪ বছর বয়সি ছেলে কায়েস তার ভাইসহ বোমা হামলায় নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন তার স্ত্রী, মা ও আরো দুই শিশু।

ইসরাইলি সৈন্যরা গাজার অভ্যন্তরে যুদ্ধ করছে এবং একজন সামরিক মুখপাত্র বলেছেন যে, বোমা হামলার সময় তাদের বাহিনী ওই এলাকায় কাজ করছিল কি না, তা তারা খতিয়ে দেখছে। ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার প্রতিশোধ নিতে ইসরাইলি বাহিনী একমাস ধরে গাজায় অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। হামাসের হামলার সময় তারা ২৪০ জনেরও বেশি ইসরাইলি এবং বিদেশিকে জিম্মি হিসেবে আটক করে গাজায় নিয়ে আসে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইসরাইল বলেছে, তারা ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডজুড়ে ১২ হাজার লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করেছে, এটি সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বোমা হামলার একটি। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরাইলি হামলায় এবং তীব্রতর স্থল অভিযানে ৯ হাজার ৪৮০ জনেরও বেশি গাজাবাসী নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, ইসরাইল নাগরিকদের বাড়িতে ‘সরাসরি’ বোমা হামলা চালিয়েছে, এসব হামলায় নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

ইসরাইলের স্থল যুদ্ধের পঞ্চম সপ্তাহে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চলমান মধ্যপ্রাচ্য সফরে রবিবার তুরস্কে রয়েছেন। গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল এবং তার পশ্চিমা সমর্থকদের বিরুদ্ধে আঙ্কারা তার সুর কঠোর করেছে।

শনিবার জর্ডানে আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথে বৈঠকে ব্লিঙ্কেন ক্রোধের ক্রমবর্ধমান জোয়ারের মুখোমুখি হন, নেতানিয়াহুর সাথে ব্লিঙ্কেনের সংক্ষিপ্ত বৈঠকের একদিন পরে এই বৈঠকে ব্লিঙ্কেন বেসামরিক নাগরিকদের সাহায্য পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য ‘মানবিক বিরতি’র জন্য মার্কিন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিদেশিদের গাজা উপত্যকা থেকে সরিয়ে নেয়ার এবং গাজায় সাহায্য পৌঁছে দেয়ার জন্য একমাত্র মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে মিশর। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরি ‘অবিলম্বে এবং ব্যাপক যুদ্ধবিরতি’ কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন।

হামাস গত শনিবার গভীর রাতে বলেছে, মিশরে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সীমান্ত অতিক্রম করতে কিছু আহত ফিলিস্তিনিকে রাফাহ পৌঁছানোর জন্য ইসরাইল অনুমতি না দেওয়া পর্যন্ত গাজা থেকে দ্বৈত নাগরিক এবং বিদেশিদের সরিয়ে নেওয়া স্থগিত করা হচ্ছে।

হোয়াইট হাউসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, হামাস তাদের ক্যাডারদের বের করে দেওয়ার জন্য মিশরীয় সীমান্ত ক্রসিং খোলার জন্য মার্কিন-মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি ব্যবহার করার চেষ্টা করেছিল।

কর্মকর্তা বলেন, ‘এটি মিশর, আমাদের, ইসরাইলের কাছে অগ্রহণযোগ্য ছিল।’

ফিলিস্তিনের মিত্র তুরস্ক গত শনিবার বলেছে, তারা গাজায় রক্তপাতের প্রতিবাদে ইসরাইলে তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করছে এবং নেতানিয়াহুর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করছে।

গত মাসে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ শুরুর আগ পর্যন্ত তুরস্ক ইসরাইলের সাথে ছিন্নভিন্ন সম্পর্ক সংশোধন করে আসছিল।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর ক্রমবর্ধমান সংখ্যার জন্য নেতানিয়াহুকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করেছেন।

তুর্কি গণমাধ্যম এরদোগানকে উদ্ধৃত করে বলেছে, ‘নেতানিয়াহু আর কেউ নন, যার সাথে আমরা কথা বলতে পারি। আমরা তাকে বাতিল করে দিয়েছি।’

ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিওর হায়াত বলেছেন, এই পদক্ষেপ ‘তুর্কি প্রেসিডেন্টের আরেকটি পদক্ষেপ যা হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের পক্ষে’।

ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজা শহরকে ‘হামাস সংগঠনের কেন্দ্র’ হিসাবে বর্ণনা করে, তবে মার্কিন বিশেষ দূত ডেভিড স্যাটারফিল্ড বলেছেন, শহর এবং সংলগ্ন এলাকায় ৩ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৪ লাখ বেসামরিক লোক রয়ে গেছে। তাদের সাহায্য ও সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে।

ইসরাইলি চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হার্জি হালেভি গত শনিবার গাজার অভ্যন্তরে সৈন্যদের পরিদর্শন করেছেন, তারা গাজা শহরের একটি ঘেরাও শেষ করেছে, যা শনিবার রাতে আঘাত হানা আল-মাগাজি ক্যাম্পের উত্তরে অবস্থিত।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, ইসরাইলি বাহিনী গাজা শহরের দক্ষিণ ও উত্তরে ‘কঠিন’ লড়াই করছে এবং ‘জনবসতিপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করেছে’।

সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা দক্ষিণ গাজায় টানেল ম্যাপ এবং বিস্ফোরক ফাঁদ পরিষ্কার করার জন্য ‘লক্ষ্যযুক্ত অভিযান’ শুরু করেছে, যেখানে এটি আগে আঘাত করেছে কিন্তু খুব কমই সৈন্য প্রেরণ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘সৈন্যরা একটি টানেলের খাদ থেকে বেরিয়ে আসা একটি সেলের মুখোমুখি হয়েছিল।’

ব্লিঙ্কেন গত শনিবার আম্মানে জর্ডান, মিশর, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সমকক্ষদের সাথে আলোচনা করেছেন।

মার্কিন শীর্ষ কূটনীতিকের সাথে আলোচনায়, জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ জোর দিয়েছিলেন যে ‘ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতের অবসানের একমাত্র উপায় হল দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ভিত্তিতে একটি ন্যায়সঙ্গত এবং ব্যাপক শান্তি অর্জনের জন্য একটি রাজনৈতিক দিগন্তের দিকে কাজ করা’।

মার্কিন প্রশাসন বলেছে, তারাও ইসরাইলের পাশাপাশি একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে সমর্থন করে, তবে নেতানিয়াহুর কঠোর-ডান সরকার নিস্পৃহভাবে বিরোধিতা করছে। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। টানা প্রায় এক মাস ধরে চালানো নির্বিচার এই হামলায় নারী ও শিশুসহ এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন সাড়ে ৯ হাজার ফিলিস্তিনি। গাজায় ইসরাইলি এই হামলার বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডাসহ বহু দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। বাদ যায়নি আফ্রিকার সেনেগালসহ তুরস্ক, জার্মানি ও ইতালিও। এসব বিক্ষোভ থেকে গাজায় ইসরাইলের অব্যাহত হামলার বিরোধিতা এবং অবিলম্বে অস্ত্রবিরতির দাবি জানানো হয়। গকাল পৃথক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।

গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে এবং ফিলিস্তিনিদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার দেশগুলোতে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে অংশ নিয়েছেন।

গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে বিক্ষোভকারীরা গত শনিবার হোয়াইট হাউসের কাছে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ করে। এ সময় কেউ কেউ ইসরাইলের প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সমর্থনের সমালোচনাও করেন।

এছাড়া বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনি পতাকা ও প্ল্যাকার্ডও বহন করেন। এসব প্ল্যাকার্ডে ‘প্যালেস্টানিয়ান লাইভস ম্যাটার’ এবং ‘এখনই গাজা অবরোধ অবসান ঘটান’র মতো স্লোগান লেখা ছিল। এমনকি ‘বাইডেন, বাইডেন, আপনি লুকাতে পারবেন না; আমরা আপনাকে গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করছি’- বলে ষেøাগানও দেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শনিবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী যুক্তরাজ্যের অনেক নগর ও শহরে সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দেয়। এর মধ্যে কেবল লন্ডনেই ফিলিস্তিনের পক্ষে সমাবেশে ৩০ হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেন বলে পুলিশ অনুমান করছে। এছাড়া এডিনবার্গ এবং গ্লাসগো রেল স্টেশনে ও লন্ডনের চ্যারিং ক্রসে বিক্ষোভকারীরা যাত্রীদের ট্রেনে চড়তে বাধা দেওয়ার জন্য মেঝেতে বসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।

অবশ্য লন্ডনে জাতিগত বিদ্বেষ ও উসকানিসহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া ব্যানারে স্লোগান লেখার ঘটনায় সন্ত্রাস আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এমনকি বিক্ষোভে বক্তৃতার সময় ইহুদি বিদ্বেষী মন্তব্য করার অভিযোগে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার যুক্তরাজ্যের অন্যান্য শহরের মধ্যে ম্যানচেস্টার, বেলফাস্ট, কার্ডিফ, লিভারপুল এবং লিডসেও ফিলিস্তিনিপন্থি বিক্ষোভণ্ডসমাবেশ হয়েছে। এসব সমাবেশ থেকে অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়। এদিকে গাজার ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভ হয়েছে ফ্রান্সেও। গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের চলমান হামলা বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারীরা শনিবার ফ্রান্সের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় নামে। প্যারিস, টুলুস এবং লিয়নসহ অন্যান্য ফরাসি শহরগুলোতেও ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভকারীরা মিছিল করেছেন। এসময় বিক্ষোভকারীরা প্যারিসকে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। শনিবার রিপাবলিক স্কোয়ার থেকে শুরু হওয়া প্যারিসের বিশাল পদযাত্রা নেশন স্কোয়ারে গিয়ে শেষ হয়।

এ দিনের বিক্ষোভে লা ফ্রান্স ইনসুমিস নামে একটি বামপন্থি পপুলিস্ট রাজনৈতিক দলের সদস্যসহ কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলের হামলায় নিহত শিশুদের মৃত্যুর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাবেশে লাল রঙে ঢাকা ছোট কফিন এবং খেলনা পুতুল বহন করেন। এছাড়া বিক্ষোভকারীদের অনেকে তাদের লাল রং করা হাত ওপরে তুলে বিক্ষোভ দেখান। ফরাসি এই বিক্ষোভকারীদের বহন করা ব্যানারে লেখা ছিল- ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন’, ‘যুদ্ধবিরতি’ এবং ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, সংঘাত নয়’। বিক্ষোভকারীরা এ সময় নানা স্লোগানও দেয়। এর মধ্যে- ‘ইসরাইল খুনি রাষ্ট্র, ম্যাক্রোঁ তার সহযোগী, ‘গাজা, প্যারিস আপনাদের সাথে আছে’ এবং ‘ফিলিস্তিন দীর্ঘজীবী হোক’ স্লোগানও রয়েছে। গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরোধিতা এবং ফিলিস্তিনের সমর্থনে শনিবার জার্মানিতে বিক্ষোভ হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী বার্লিনে পুলিশের কঠোর শর্ত মেনে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার বিক্ষোভকারী বিক্ষোভের জন্য জড়ো হন। জার্মানি অবশ্য এর আগে ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। এদিনের বিক্ষোভের সময় ফিলিস্তিনি পতাকা এবং ‘গাজায় গণহত্যা বন্ধ করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড বহনকারী বিক্ষোভকারীরা শহরের কেন্দ্রস্থলের প্রধান চত্বর আলেকজান্ডারপ্লাটজে জড়ো হন। এ সময় একজন বক্তা ‘বর্ণবৈষম্যের সংস্কৃতির’ অবসান এবং গাজায় বোমা হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানান। এছাড়া ইতালিতে প্রায় ৪ হাজার বিক্ষোভকারী গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে মিলানের রাস্তায় মিছিল করেছেন বলে স্থানীয় মিডিয়া জানিয়েছে। ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন, বর্ণবাদ নয়’ স্লোগানের অধীনে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়। অন্যদিকে সেনেগালের রাজধানী ডাকারে বহু মানুষ প্ল্যাকার্ড এবং ফিলিস্তিনি পতাকা নিয়ে কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে।

এছাড়া বিক্ষোভ হয়েছে তুরস্কেও। গাজা নিয়ে আলোচনার জন্য মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের তুরস্ক সফরের একদিন আগে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারায় শত শত বিক্ষোভকারী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। ইস্তাম্বুলের সারাচানে পার্কে আয়োজিত বিক্ষোভে ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ব্লিংকেন, গণহত্যার সহযোগী, তুরস্ক থেকে চলে যাও’। এছাড়া কয়েকটি ব্যানারে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং ব্লিংকেনের একসাথে লাল ‘ক্রস বা এক্স’ চিহ্ন সম্বলিত ছবিও দেখা যায়। অন্যদিকে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় বিক্ষোভকারীরা মার্কিন দূতাবাসের কাছে সমাবেশ করেন এবং স্লোগান দেন। এ সময় তাদের পোস্টারে লেখা ছিল: ‘ইসরাইল হাসপাতালে বোমা নিক্ষেপ করছে, এর জন্য অর্থ প্রদান করছে বাইডেন।’

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বিমান বাহিনী। গাজার প্রশাসন জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা সাড়ে ৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই ৬ হাজার ৪০০ জন।

ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গাজার বাসিন্দারা বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন। ভূখণ্ডটির ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১৪ লাখ মানুষ তাদের বাড়িঘর থেকে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। একই সঙ্গে গত ৮ অক্টোবর থেকে গাজায় সর্বাত্মক অবরোধও আরোপ করে রেখেছে ইসরাইল। এর ফলে গাজার অনেক হাসপাতাল পরিষেবার বাইরে চলে গেছে।