যশোরের কেশবপুরে আমন ধানের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ধান কাটার কাজে নিয়োজিত হচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে ধানের দামও ভালো। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কেশবপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন কৃষক। এর মধ্যে ব্রি-৪৯ ধান, ব্রি-৭৫ ধান, ব্রি-৮৭ ধান, ব্রি-৫১ ধান, বেনা ধান-৭, বেনা ধান-১৭, বেনা ধান-২০, ক্ষীর কোন ধান ও স্বর্ণা ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ইতিমধ্যে অনেক কৃষকরা তাদের মাঠের পাকা আমণ ধান কেটে ঘরে তুলেছেন। কৃষকরা জানান, ভালো রৌদ্র হওয়ায় আমরা ধান কাটতে পারছি। উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় অধিকাংশ গ্রামে কৃষক আমন ধানের আবাদ করেছেন। তবে কিছু কিছু এলাকায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা গেছে। প্রতি বিঘায় ১৬ থেকে ১৭ মণ ধান হবে বলে কৃষক ধারণা করছেন। উপজেলার বাগদা, দেউলি, প্রতাপপুর, শিকারপুর, শ্রীফলা, মজিদপুর, শ্রীরামপুর, বায়সা, আটন্ডা, মির্জাপুর, লক্ষ্মীনাথকাটি, পাথরা, হিজলতলা, পাত্রপাড়া, কুশলদিয়া, চিংড়া, সাগরদাঁড়ি, ফতেপুর, তেঘরী, মঙ্গলকোট, আলতাপোল, সাবদিয়া, দোরমুটিয়া, মধ্যকুল, রামচন্দ্রপুর, ব্যাসডাঙ্গা, সুজাপুর, মাদারডাঙ্গা, ব্রহ্মকাটি, আড়ুয়া, কলাগাছি, চাদড়া, ত্রিমোহিনী, সাতবাড়িয়া, হাসানপুর, বুড়িহাটি, পাঁজিয়া, কলাগাছী, নারায়ণপুর, গৌরিঘোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, পুরুষের পাশাপাশি নারীরা ধান কাটার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার বাগদা গ্রামের নুর ইসলাম সানা, আবদুল জলিল, হবিবর মোড়ল, সাতবাড়িয়া গ্রামের সুরুত আলী খাঁ, ব্রহ্মকাটি গ্রামের ইসলাম সরদার, আলম সরদার, রামচন্দ্রপুর গ্রামের আলাউদ্দীন দফাদার, ওজিয়ার সরদার, হায়দার আলীসহ অনক কৃষক জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছরে বৃষ্টির পানি কম থাকলেও ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি জমিতে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে প্রায় ১৭ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন। এছাড়া পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও কাজ করে থাকেন। সুজাপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান বলেন, জমিতে আমণ আবাদের চাষ করেছেন। ধানের ভালো ফলন দেখে তিনি খুবই খুশি। অনেক কৃষক জানান, এ বছরে বৃষ্টির পানি কম থাকলেও প্রতি বিঘাতে ১৬ থেকে ১৭ মণ ধান পাবেন বলে আশা করছেন তারা। বাজারে ধানের দামও ভালো। আমাদের প্রতি বিঘা জমিতে ধান রোপণ শুরু থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা খরচ হলেও আনন্দ পাচ্ছি। জমিতে মোটরের সেচ দিয়ে খরচ বেশি হলেও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। সাতবাড়িয়া গ্রামের ফতেমা বেগম, জোহরা বেগম, আকলিমা বেগম, জাহানারা বেগম, চায়না বেগম জানান, আমাদের কাজের সরদার সুরুত আলী। তার মাধ্যমে বছরে মাঠের সকল কাজে পুরুষের পাশাপাশি তারাও কাজে নিয়োজিত থাকেন। তারা বলেন, প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ২০০ টাকা করে শ্রমের মজুরি পান ও দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত ১৫০ টাকা শ্রমের মজুরি আসে। শ্রম দিয়ে অর্থ উপার্জন করে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোই আছি। আমরা বাড়ি বসে না থেকে কাজ করে খেটে খেয়েও মনের মাঝে একটু সুখ আনন্দ খুঁজে পাই। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা আক্তার বলেন, এবার কেশবপুর উপজেলায় ৮ হাজার ৯৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করেন কৃষক। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে কোনো কোনো এলাকায় কৃষক তাদের মাঠের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন। বাজারে ধানের দামও ভালো।