এ যেন এক জাদুকরী যোগাযোগ মাধ্যম
রাজধানীর যাতায়াত সংকটে স্বস্তি এনে দিয়েছে মেট্রো রেল
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার উত্তরা থেকে আগারগাঁও হয়ে মতিঝিল অফিসপাড়া। অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী ভাড়ায় ভ্রমণ শুরু করেছে দুই পাশের বাসিন্দারা। যারা মাঝের স্টেশনগুলোর আশপাশে বসবাস করেন তারা স্বস্তিবোধ করছেন। কোনো যানজট নেই। নেই গাড়ির হট্টগোল। মেট্রো রেলে আরামদায়ক ও স্বস্তির ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন অনেকে। যারা উত্তরা থেকে মতিঝিলে অফিস করছেন, তারা এত অল্প সময়ে অফিসে আসতে পারায় এক প্রকার উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। ফলে যানজটের দুঃস্বপ্নের মধ্যে নগরবাসীর জীবনে স্বস্তি এনে দিয়েছে মেট্রো রেল। আধুনিক এই যাতায়াতব্যবস্থা চালু হওয়ায় রাজধানীবাসী এখন থেকে উন্নত, দ্রুত ও নিরাপদ পরিবহণ উপভোগ করতে পারছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার বিকেলে ম্যাস র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (এমআরটি) লাইন-৬ এর আগারগাঁও-মতিঝিল সেকশনের উদ্বোধনের পর, গত রোববার সকাল থেকে যাত্রীদের জন্য এই সেবা চালু হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানায় উত্তরা উত্তর, উত্তরা কেন্দ্র, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট, সচিবালয় ও মতিঝিলসহ মোট ১৬টির মধ্যে ১২টি স্টেশনে বর্তমান ১০ মিনিটের ব্যবধান এবং স্টপেজসহ উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পৌঁছতে মাত্র ৩২ মিনিট সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে। বিজয় সরণি, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়- এ চারটি স্টেশন আগামী মাসের মধ্যে চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী।
উত্তরায় বসবাসকারী অফিসগামী যাত্রীরা জানান, তারা খুব রোমাঞ্চিত। কেন না, এই পরিবেশবান্ধব এবং দ্রুত রেল পরিষেবা এখন তাদের হাতের নাগালে। আগে গন্তব্যে পৌঁছতে প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা সময় লাগত। এখন মতিঝিল এলাকায় মাত্র আধা ঘণ্টায় পৌঁছানো যায়। ‘উত্তরা থেকে মতিঝিলের অফিসে আধা ঘণ্টায় পৌঁছানো তাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। ঈদের ছুটিতে বেশির ভাগ মানুষ গ্রামের বাড়ি যাওয়ায় রাজধানীর রাস্তা প্রায় ফাঁকা থাকলেও উত্তরা থেকে মতিঝিল যাতায়াত করতে সময় লাগে এক ঘণ্টারও বেশি সময়ে প্রয়োজন হয়। আর এখন মাত্র আধা ঘণ্টা। যাত্রীরা জানান তারা একটি উন্নত ও পরিবেশবান্ধব নিরাপদ পরিবহণের সুযোগ পেয়েছেন।
কাজীপাড়া এলাকার একজন বাসিন্দা জানান আগে মেট্রো রেল প্রকল্পের নির্মাণকাজের জন্য তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল, কিন্তু এখন এমন নিরাপদ রেল পরিষেবা পেয়ে তারা এখন নিজেদের অনেক সৌভাগ্যবান মনে করছেন। মেট্রো রেল নতুন আশার সঞ্চার করেছে। মিরপুর-১০ এর একজন বাসিন্দা জানান, শহরের যানজটের কারণে তার বাসা থেকে মতিঝিলে তার অফিসে যেতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হতো। কিন্তু মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস চালু হওয়ায় দ্রুত ও নিরাপদে তার অফিসে পৌঁছানো অনেক সহজ হয়ে গেছে। তিনি যত দ্রুত সম্ভব মেট্রো রেলের কার্যক্রম সন্ধ্যা পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানান। কেন না, বর্তমানে এই পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা শুধু মেট্রো রেলে অফিসে যেতে পারি, কিন্তু বাসায় ফেরার সময় এই সেবা পাওয়া যায় না। তাই, কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সময়সীমা বাড়ানো।’
অনেকে বলেছেন নিরাপদে ও দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য এটি সত্যিই একটি যাদুকরী যোগাযোগ মাধ্যম।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক জানান প্রতিটি ট্রেন ২ হাজার ৩০০ জন যাত্রী নিয়ে ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারে। তবে বাঁকযুক্ত এলাকায় গতি কম থাকে। মেট্রো রেল প্রতি ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী এবং প্রতিদিন ৫ লাখ যাত্রী বহন করতে সক্ষম। প্রতি ৪ মিনিটে একটি ট্রেন প্রতিটি স্টেশনে পৌঁছাতে পারে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) মেট্রোরেল নির্মাণ করছে এবং এ প্রকল্পে ঋণও দিচ্ছে। জাইকা প্রকল্পের জন্য ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর রাজধানীর ওপর চাপ কমাতে নানা উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার।