হাইব্রিড করলা চাষে বেশি লাভবান কৃষক
৩০ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে ব্যাপকভাবে চাষ হয়েছে হাইব্রিড জাতের টিয়া সুপার করলা। আটোয়ারি উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার যেদিকে চোখ যায় দেখা মিলে নয়ানাভিরাম সবুজে ঘেরা করলার দিগন্তজোড়া বিস্তৃত ফসলের মাঠ। কৃষি অধিদপ্তরের পরামর্শে ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। জেলায় এবার শুধু করলা থেকে কৃষক প্রায় ৩০ কোটি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হবেন- বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
লাল তীর সিড লিমিটেডের টিয়া সুপার জাতের করলার বীজ বপনের মাত্র ৬০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়ায় ও আকারে বড় ও রং ভালো হওয়ায় বাজার চাহিদাও বেশি। আর এখানকার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত এসব করলা খেত থেকেই ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এতে কৃষকদের অনেকটা কষ্ট লাঘব হওয়ার পাশাপাশি পরিবহণ খরচ সাশ্রয় হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন বেশি।
দেখা যায়, ভোর থেকে খেত থেকে করলা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কৃষক ও শ্রমিক। কেউ গাছ থেকে করলা সংগ্রহ করে সেগুলো ভারে করে রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ আবার করলা সারিবদ্ধভাবে ঝুড়িতে তুলছেন। কেরেট ভর্তি হয়ে গেলে কেউ রশি দিয়ে সেলাই করছেন। অনেকে আবার ওজন করে গাড়িতে তুলছেন। এ যেন এক উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে।
একেকটি করলা আকারে ৩০ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার ও ২৮০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজন। এতে একর প্রতি প্রায় ১৪ থেকে ১৬ টন ফলন ও গাছের লতাণ্ডপাতার চেহারা অনেক ভালো হওয়ায় টিয়া সুপার জাতের করলা চাষে ঝুঁকছেন কৃষক। ব্যাপক করলা চাষে চাষিরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি এসব ফসলের মাঠে আশ্বিন-কার্তিক মাসে কাজ করে আয় করছেন শত শত শ্রমিক। এতে এলাকার অনেক শ্রমিকদের আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে এই করলা।
অন্যান্য জাতের করলার থেকে এজাতের করলার ফলন অনেক বেশি। ৫০ শতকের ১ বিঘা জমিতে এজাতের করলা চাষে খরচ হয় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা আর বিক্রি করেন প্রায় ৩ লাখ টাকা বলে জানান আটোয়ারি উপজেলার সোনাপাতিলা গ্রামের করলা চাষি আব্দুর রাজ্জাক, মিজানুর রহমান মন্টু, মিজানুর রহমান মিজান, মসলিম উদ্দিনসহ অনেকে। তারা বলেন, আগে তারা বিভিন্ন জাতের করলা চাষ করে তেমন একটা লাভ করতে পারতেন না। গত ২ বছর ধরে এজাতের করলা চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। অন্যান্য গ্রামের একেক জন চাষি প্রায় ২০ বিঘা ৩০ বিঘা করে জমি লিজ নিয়ে এই করলা চাষ করেছেন। তাই তারা অন্যান্য জাতের থেকে টিয়া সুপার জাতের করলা চাষ করেন বেশি ও আগামীতে এজাতের করলা আরো ব্যাপকভাবে চাষ করার কথা জানান।
আব্দুল জলিল, মোশারফসহ মাঠে কাজ করতে করতে কয়েকজন শ্রমিক বলেন, আশ্বিন-কার্তিক মাসে এলাকায় তেমন কোনো কাজ থাকে না। এ সময়টা আমাদের বসে থাকতে হয়। গত কয়েক বছর ধরে কৃষক করলা চাষ করায় প্রতিদিন এলাকার প্রায় ৩০০ শ্রমিক কাজ করে আয় করতে পারছি। আমরা চাই আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে করলা চাষ করুক কৃষকরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ী শাহিনুর জামান বলেন, কৃষকদের আর আগের মতো মাঠ থেকে সবজি উত্তোলন করে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না, এখন আমরা ব্যবসায়ীরাই মাঠ থেকে সবজি ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছি। এবার শুধু আটোয়ারি উপজেলা থেকে দৈনিক ৪০ থেকে ৫০ গাড়ি করলা দেশে বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছি আমার।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এর তথ্য মতে পঞ্চগড়ে এবার গ্রীষ্মকালীন ২ হাজার হেক্টর ও আগাম রবি মৌসুমে ১১৫ হেক্টর জমিতে করলা আবাদ হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাঠে প্রায় ৩০০ হেক্টর জমিতে করলা আছে।
পঞ্চগড় জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, অন্যান্য জাতের চেয়ে জেলায় এবার সব থেকে টিয়া সুপার করলা চাষ হয়েছে বেশি। এটি জনপ্রিয় জাত হিসেবে কৃষকের মধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। কৃষি বিভাগ থেকে তাদের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। করলা চাষে লাভবান হওয়ায় কৃষকরা তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী জেলায় এবার কৃষকরা প্রায় ৩০ কোটি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হবেন। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখবে। আমরা চেষ্টা করছি আগামীতে আরো বেশি করে সবজি চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে এবং প্রত্যাশা করি পঞ্চগড় জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী অন্যান্য জেলায় করলা আবাদ বৃদ্ধি পাবে ও কৃষকরা লাভবান হবেন।