জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রধান ও পোপের বিবৃতি

গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান

প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ সব সংস্থার প্রধানগণ গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ব্যাপারে শোক প্রকাশ করে গত রোববার যৌথভাবে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে সংস্থার প্রধানরা ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধে ‘অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘ প্রধানরা বলেন, ‘বিশ্ব প্রায় এক মাস ধরে ইসরাইল এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনে সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতি দেখছে। এতে প্রাণহানির সংখ্যা ও ক্ষতি ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বিশ্ববাসী হতবাক ও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।’

ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ ১৮টি সংস্থা’র প্রধান গত ৭ অক্টোবর গাজা থেকে ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে উভয় পক্ষের প্রাণহানির সংখ্যাকে ‘বর্বরোচিত গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ জানায়, হামাসের হামলায় তাদের প্রায় ১ হাজার ৪০০ লোক নিহত হয়েছে এবং এদের বেশির ভাগই বেসামরিক। এদিকে গাজায় হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলায় কমপক্ষে ৯ হাজার ৭৭০ জন নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। বিবৃতিতে বলা হয়, সেখানের এমন পরিস্থিতিতে ‘ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে অবিলম্বে ‘মানবিক যুদ্ধবিরতি’ পালন করা প্রয়োজন। এরই মধ্যে উভয় গ্রুপের যুদ্ধ ৩০ দিন অতিক্রম করেছে। যথেষ্ট হয়েছে। এখনই যুদ্ধ বন্ধ করা উচিত।’ তবে ইসরাইল জাতিসংঘের বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার প্রধানদের যুদ্ধবিরতি আহ্বান উপেক্ষা করে গতকাল অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপকহারে হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইলি সৈন্য ও ফিলিস্তিনের হামাস যোদ্ধাদের মধ্যকার যুদ্ধের ভয়াবহতায় গাজার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৫ লাখ লোক প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য অন্যত্র চলে গেছে।

ইসরাইলি তারা তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী হামাসকে আঘাত করছে এবং হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করার জন্য সুপরিকল্পিতভাবে দুর্গের পর দুর্গে অভিযান চালাচ্ছে।

ফিলিস্তিনিরা ইসরাইলের ইতিহাসে সবচেয়ে ন্যক্কারজনক হামলা চালানোর পর ইসরাইল হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজা উপত্যকায় ব্যাপক বোমা হামলা চালায়।

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বিরতি ঘোষণার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিস।

গত রোববার এক বিবৃতে পোপ বলেন, ‘গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে খুবই ভয়াবহ, মারাত্মক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আমি আপনাদের কাছে ঈশ্বরের নামে মিনতি জানাচ্ছি, দয়া করে সেখানে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করুন। আমাদের উচিত শিশুদের কথা চিন্তা করা। গাজা ও ইউক্রেনের লাখ লাখ শিশুর ভাগ্য এই যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে আমরা আসলে তাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছি।’ হামলার প্রথম দিনই ইসরাইল থেকে অন্তত ২৩৪ জনকে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে গেছে হামাস।

অন্যদিকে, ইসরাইলি বিমান বাহিনীর অভিযানে গাজায় নিহতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৯ হাজার। এছাড়া বিমান বাহিনীর এক মাসের বোমা বর্ষণে উপত্যকার ইন্টারনেট, টেলিফোন ও মোবাইল সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৫৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর এই প্রথম এত বড় মাত্রার সংঘাত হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে।

গাজার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ : ব্লিনকেন

হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ কী হবে তা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ, অর্থাৎ পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠী নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। এজন্য পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রস্তুতি নেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গত রোববার পশ্চিম তীর অঞ্চল সফরে যান ব্লিনকেন। সেখানে রামাল্লা শহরে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে এক ঘণ্টারও বেশি সময় তিনি বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে তিনি বলেন, গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার আগ পর্যন্ত ইসরাইল থামবে না এবং যুদ্ধ শেষে ইসরাইল গাজার দখলও নেবে না। তাই ওই সময় পশ্চিম তীরে ক্ষমতাসীন সরকার বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) জোটকে গাজার দায়িত্ব নিতে হবে। জবাবে মাহমুদ আব্বাস বলেন, পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম এবং গাজা উপত্যকা মিলেই ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড। তাই গাজা সবসময়ই ফিলিস্তিনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং পিএ তার ভবিষ্যৎ দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন।

তবে বৈঠকে তিনি গাজা উপত্যকায় অবিলম্বে যুদ্ধ বিরতি ঘোষণারও আহ্বান জানিয়েছেন। জবাবে ব্লিনকেন বলেছেন, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিতে রাজি নয়; তবে গাজার জিম্মি ও বেসামরিক লোকজনের স্বার্থে একটি মানবিক বিরতি ঘোষণার জন্য ইসরাইলকে রাজি করাতে তারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। রামাল্লায় বৈঠকের পর মাহমুদ আব্বাস কিংবা অ্যান্টনি ব্লিনকেন, কেউই কোনো ব্রিফিং বা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি।

প্রসঙ্গত, মাহমুদ আব্বাস একই সঙ্গে পিএ জোট এবং এই জোটের দল ফাতাহের প্রেসিডেন্ট। ২০০৭ সালের আগ পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় পিএ জোটের সরকারই ক্ষমতাসীন ছিল; ২০০৭ সালে গাজায় ইসলামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের উত্থান ঘটে এবং পিএ জোটকে বিতাড়িত করে তারা উপত্যকার দখল নেয়। ফলে গত ১৬ বছর ধরে ফিলিস্তিনের দুই অংশে দুটি আলাদা সরকার ক্ষমতাসীন রয়েছে। পশ্চিম তীর অঞ্চলে ক্ষমতায় রয়েছে পিএ জোট এবং গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করছে হামাস। উভয়ের মধ্যকার সম্পর্ক চরম বৈরী। কারণ, হামাস বরাবরই সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, অন্যদিকে পিএ আলোচনা, কূটনীতি ও রাজনৈতিক পন্থায় স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা চায়।